রবিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

স্ত্রীর লাশ নিয়ে হাতিরঝিলে সড়ক দুর্ঘটনার নাটক

পুলিশের ধারণা হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে স্ত্রীকে হত্যার পর পরিকল্পিতভাবে সড়ক দুর্ঘটনার নাটক সাজানোর অভিযোগ উঠেছে। ঝিলিক নামে ওই নারীর পরিবারের অভিযোগ, নির্যাতন করে ঝিলিককে হত্যা করেছে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এদিকে এ ঘটনায় স্বামী মিশুসহ দুজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। উদ্ধার করা হয়েছে তাদের বাসার সিসিটিভি ফুটেজ।

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সূত্র ধরে গুলশানে একটির বাসায় যায় পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ঝিলিক আলমের (২৩) নিথর দেহ চারজন মিলে সিঁড়ি দিয়ে নামাচ্ছে। এর পরের ঘটনা হাতিরঝিলের। গতকাল সকালে হাতিরঝিলের আমবাগান সড়কের ফুটপাথের ওপর দুর্ঘটনায় পড়া একটি প্রাইভেট কার থেকে উদ্ধার করা হয় এক নারীর লাশ। ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে চালকের আসনে থাকা স্বামী জানান- অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী মারা গেছেন। পরে লাশের সুরতহাল রিপোর্টে, লাশের বিভিন্ন স্থানে নতুন ও পুরনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয় স্বামী মিশুকে। গতকাল সকালে হাতিরঝিলের আমবাগান এলাকায় দুর্ঘটনার খবরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে গাড়ির ধাক্কায় ফুটপাথের পাশে থাকা দেয়াল ভেঙে গেছে এবং গাড়ির সামনের অংশও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে মিশুও বাম হাতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে কিছুটা আহত হয়েছেন। পুলিশ ঝিলিককে দ্রুত উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। এরপর ঝিলিকের স্বজনরা তার স্বামীর বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ করেন। এদিকে পুলিশের কাছে মিশুর আচরণ রহস্যজনক মনে হওয়ায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। খোঁজখবর নিয়ে গুলশানের বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। হাতিরঝিল থানার এসআই গোলাম কুদ্দুস বলেন, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি একটি প্রাইভেট কার ফুটপাথের ওপর ওঠা। সামনের বাম পাশের চাকা পাংচার। মাঝখানের সিটে একজন মহিলা শোয়া অবস্থায় আছেন। অন্য একটি গাড়ি এনে তাদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ওই নারীকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশের ধারণা- হাতিরঝিলে আনার আগেই মারা গেছেন ওই নারী। ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া জানান, ওই নারীর স্বামী সড়ক দুর্ঘটনার কথা বললেও তার শরীরে দুর্ঘটনায় প্রাপ্ত আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন আছে। এ ঘটনায় দোটানায় পড়ে গুলশান ও হাতিরঝিল থানা পুলিশ। আসলে কোন থানা পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করবে এ সিদ্ধান্ত নিতে কেটে যায় ঘণ্টা চারেক। পরে গুলশান থানায় ঘটনা তদন্তের সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গেছে। প্রথমে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মিশু জানান, তাদের বাসা গুলশান-২ নম্বর এর ৩৬ নম্বর সড়কে। বাসা থেকে প্রাইভেট কার নিয়ে স্বামী-স্ত্রী বের হন। ঢামেকে ঝিলিকের মা আসমা বেগম জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জে। তিনি থাকেন মোহাম্মদপুরে। ঝিলিকের বাবা আনোয়ার হোসেন বছরখানেক আগে মারা গেছেন। ঝিলিক ও মিশু ভালোবেসে ২০১৮ সালে বিয়ে করেন। তাদের ৮ মাস বয়সী এক ছেলে রয়েছে। প্রায়ই ঝিলিককে নির্যাতন করত মিশু। তার অভিযোগ ঝিলিককে হত্যা করা হয়েছে। তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আশিক হাসান জানান, মিশুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে- সে খুবই হতাশাগ্রস্ত। তার ভাষ্যে- ভোরে গুলশানে বাসায় থাকা অবস্থায় ঝিলিক জুস জাতীয় কিছু একটা খায়, এরপর অচেতন হয়ে পড়ে। এতে তার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে এলে দ্রুত তাকে গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে হাতিরঝিলে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফুটপাথের ওপর তুলে দেন।

গতকাল সন্ধ্যায় মিশুকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান।

সর্বশেষ খবর