সোমবার, ৫ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

সরকারের সমঝোতার নীতি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী

----- রাশেদ খান মেনন

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারের সমঝোতার নীতি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের অর্জনসমূহকে ধ্বংস করতে দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীরা এখনো সমভাবে তৎপর। অন্যদিকে তথাকথিত স্থিতিশীলতার নামে হেফাজতকে পক্ষে রাখতে তাদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন সরকার ও দলের সমঝেতা এবং এসব বিষয়ে একের পর এক ছাড় দেওয়াসহ সরকারের আপস-সমঝোতার নীতি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। যা ১৪ দলের আদর্শের সঙ্গে মেলে না। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, এটা স্পষ্ট যে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষ পালনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই তারা পরিকল্পিতভাবে ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি দান, সাল্লার হিন্দুগ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলা এবং সবশেষে অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির যোগদানের বিরোধিতার নামে একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। এখানে একই সময় একটি রাজনৈতিক দলের মেরুকরণের প্রচেষ্টা গত কিছুদিন ধরে লক্ষণীয়। তিনি বলেন, হেফাজতের মামুনুল-বাবু নগরীরা ওয়াজ মাহফিল ও ইউটিউবে একের পর এক ধর্মীয় বিদ্বেষধর্মী উসকানি দিয়ে চললেও তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনপ্রয়োগের কোনো প্রয়োজন বোধ করছে না সরকার। ওয়ার্কার্স পার্টি বহু আগেই বলেছে যে, সাপের মুখে চুমু খেলেও সাপ ছোবল মারবেই। এই কৌশল যে কত বৃথা পরবর্তী রাজনৈতিক ঘটনাবলী তার প্রমাণ। তিনি বলেন, সরকার বা আওয়ামী লীগকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে- তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সঙ্গে থাকবে, নাকি হেফাজতীদের সঙ্গে আপস-মীমাংসা করবে। বিষয়টি পরিষ্কার করার সময় এসেছে।

রাশেদ খান মেনন বলেন, ইসলামের নামে হেফাজত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রচার করছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করছে, প্রগতিশীলতার বিরোধিতা করছে। ইতিহাস-ঐহিত্য সংস্কৃতির বিরোধিতা করছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা লক্ষ্য করছি, তারপরও সরকার কৌশলের নামে তাদের সুযোগ দিয়ে চলেছে। তাদের দাবির কাছে তারা নতস্বীকার করছে। না হলে এতবড় ঘটনা ঘটল- তাদের নামে মামলা হয়নি! রীতিমতো তারা ঘুরছেই না শুধু, ফুর্তিও করে বেড়াচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা ১৪ দলীয় জোট গঠনের সময় যেসব অঙ্গীকার করেছিলাম সেগুলো এখনো বাস্তবায়ন করা যায়নি। হেফাজতের সঙ্গে আঁতাত করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, আওয়ামী লীগের আদর্শবিরোধী। ১৪ দলেরও আদর্শবিরোধী। আওয়ামী লীগকে মনে রাখতে হবে, কখনোই হেফাজত আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়নি, আগামীতেও দেবে না। কারণ প্রত্যেকের রাজনৈতিক আদর্শ আছে, পরিচয় আছে। তারা হেফাজতের আড়ালে রাজনীতি করছে। এরা সবাই জামায়াত-বিএনপির লোক। এরা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে আছে।

রাশেদ খান মেনন বলেন, হেফাজতের লোকজন প্রশাসনের ভিতরে রয়েছে। হেফাজতে ইসলাম রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করে বসে আছে। কিন্তু সরকার এখনো আপস-সমঝোতার নীতিতেই আছে। এভাবে চললে আওয়ামী লীগ থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি মুখ ফিরিয়ে নেবে।

শরিক জোটের এ নেতা বলেন, হেফাজত সরকারের বিরুদ্ধে না, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে। তাই  হেফাজতকে নিয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। যারা তান্ডব করেছে তাদের মামলার আসামি করতে হবে। হেফাজতের নেতা বাবুনগরী, মামুনুল হক কাউকে বাদ দেওয়া যাবে না। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আপস করার কোনো সুযোগ নেই। এখনই ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আগামীতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

সর্বশেষ খবর