সোমবার, ৫ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

দুধ-কলা দিয়ে গোখরা সাপ পুষতে নেই

----- হাসানুল হক ইনু

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুধ-কলা দিয়ে গোখরা সাপ পুষতে নেই

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু হেফাজতে ইসলামকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, দুধ-কলা দিয়ে গোখরা সাপ পুষতে নেই। এই সাপ যে পুষবে তাকেই ছোবল মারবে। এই অপশক্তিকে ছাড় দেওয়া উচিত নয়। রাজাকারী-ঠিকাদারির দল বিএনপি এই হেফাজতকে সমর্থন দিচ্ছে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি একথা বলেন। তিনি উল্লেখ করেন, হেফাজতে ইসলাম পাকিস্তানের রাজাকার এবং পাকিস্তানপন্থির মুখোশে খেলছে বিএনপির ভাড়াটে খেলোয়াড় হিসেবে। সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আরও বলেন, মুজিব শতবর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে হেফাজতে ইসলামের উসকানিমূলক বক্তব্য, সশস্ত্র আক্রমণ, তান্ডব, বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর, রাষ্ট্রীয় স্থাপনার ওপর হামলাকে সরকারের গুরুত্বের সঙ্গে নজরে নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, হেফাজত কর্তৃক রাষ্ট্র, সংবিধান, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে অস্বীকার করাটা কার্যত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার হুমকি, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়ার হুমকি, কুষ্টিয়াতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনা- এসবই নজরে নেওয়া উচিত। তিনি উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রের প্রতীক। বঙ্গবন্ধুকে হামলা করা মানে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা, রাষ্ট্রকে অস্বীকার করা। সেজন্য এটা শুধু একটা ছোটখাটো আইনশৃঙ্খলার ব্যত্যয়ের ঘটনা নয়। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার পরে সাম্প্রতিককালে হেফাজতে ইসলাম স্বনামে সুনামগঞ্জের শাল্লায় সংখ্যালঘু পাড়াতে হামলা পরিচালনা করেছে। এটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চক্রান্ত। এটাও অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। হাসানুল হক ইনু বলেন, যারা মসজিদের মতো পবিত্র ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা, তরবারি, কুড়াল, লোহার রড, লাঠিসোঁটাসহ অস্ত্রশস্ত্র মজুদ করে এবং রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে মসজিদকে রাজনৈতিক সংঘাত-সংঘর্ষের ক্ষেত্র বানায়- তারা ধর্মপ্রাণ শান্তিপ্রিয় মানুষ নয়। তারা রাজনৈতিক মোল্লা, জঙ্গিবাদী, সন্ত্রাসবাদী। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ মসজিদ, মাদ্রাসাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক সশস্ত্র ঘাঁটি ও রাজনৈতিক সংঘাত-সংঘর্ষের ক্ষেত্রে পরিণত করার সঙ্গে যে অপরাধীরা যুক্ত- তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় সরকার যদি হেফাজতের সঙ্গে আপস-মীমাংসার চেষ্টা করে, তা হবে চরম আত্মঘাতী। কারণ দুধ কলা দিয়ে কাল সাপ পুষলে দিন শেষে সে ছোবল মারবেই। কাজেই এখনই বিষ দাঁত ভেঙে দিতে হবে। তা না হলে উগ্রবাদের সৃষ্টি হবে।

সম্প্রতি রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদে হেফাজতের তান্ডবের সময় পুলিশের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ইনু বলেন, দুঃখের সঙ্গে বলছি হেফাজতের তান্ডবের মধ্যে পুলিশ প্রশাসনের অসহায়ত্ব প্রকাশ পেয়েছে, এই দুর্বলতা কেন? কীসের সমস্যা? পুলিশের গাড়িতে আগুন, আসামি ছিনতাই, পুলিশ কি তার নৈতিক বল হারিয়ে ফেলেছে? পুলিশের কি জনবল কম হয়ে গেছে? 

বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত একই চক্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজত যে তান্ডব চালিয়েছিল, সশস্ত্র তান্ডব চালিয়েছিল ঢাকা শহরে- সেদিন বিএনপি সরাসরি যে সমর্থন দিয়েছিল, তা থেকে পরিষ্কার হেফাজতে ইসলাম-বিএনপি-জামায়াত-জঙ্গি একই চক্র একই গোষ্ঠী। এরা ’৭১-এর রাজাকারের উত্তরসূরি। এবারও স্বাধীনতা দিবসে তারা যে তান্ডব চালাল বিএনপি তারাও প্রকাশ্যে রাখঢাক ফেলে দিয়ে সরাসরি সমর্থন দিল এবং এখনো বিএনপি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এরা রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ, বিপদস্বরূপ।

জাসদ সভাপতি বলেন, মামুনুল হক বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে প্রকাশ্যে হুংকার দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন, বাবুনগরী চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। এর জন্য দূরবীণ দিয়ে মামুনুল হক-বাবুনগরীকে খোঁজা লাগবে না। ডিজিটাল সমাজে প্রত্যেক ঘরে ঘরে তাদের ভাষণ আছে। সুতরাং মামুনুল হক এবং বাবুনগরীকে কেন প্রধান উসকানিদাতা হিসেবে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য গ্রেফতার করা হচ্ছে না?

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর