বুধবার, ৭ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

মেলা এখন গলার কাঁটা প্রকাশকদের

মোস্তফা মতিহার

মেলা এখন গলার কাঁটা প্রকাশকদের

বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনার কারণে বাংলা একাডেমি যখন এবারের একুশে বইমেলার পরিকল্পনা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তখন প্রকাশকদের প্রতিবাদের মুখেই এর আয়োজন করতে বাধ্য হয় বাংলা একাডেমি। যে কারণে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির মেলা গড়ায় স্বাধীনতার মাস মার্চে। প্রতিবাদ ও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পাওয়া সে বইমেলা এখন প্রকাশকদের গলার কাঁটা হয়ে দেখা দিয়েছে। সময়সূচির পরিবর্তন এনে চলমান লকডাউনে দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মেলা সচল রাখাতে বইপ্রেমীশূন্য হয়ে পড়েছে মেলাপ্রাঙ্গণ। নিজেদের আর্থিক ক্ষতির কথা ভেবে প্রতিবাদী প্রকাশকরাই এখন মেলা বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন। তারা বলছেন, একদিকে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধিতে জনমনে শঙ্কা, অন্যদিকে লকডাউনে বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। এত প্রতিকূলতা নিয়ে মানুষ মেলায় আসবে না এটাই স্বাভাবিক। মানুষই যদি না আসে তাহলে মেলা চালু রেখে লাভ কী? স্টল ও প্যাভিলিয়নে বসে বসে মাছি মারা ছাড়া আমাদের আর কোনো কাজ নেই। ক্ষতি যা হওয়ার তাই হয়েছে, আরও বড় ধরনের ক্ষতির কবল থেকে রক্ষার জন্য বইমেলা বন্ধ করা এখন আমাদের বেশির ভাগ প্রকাশকের দাবি। তারা বলছেন, প্রকাশকরা যাতে বাংলা একাডেমির কাছে ক্ষতিপূরণ চাইতে না পারে সেজন্য এ লকডাউনেও বাংলা একাডেমি মেলা বন্ধ করেনি। ১২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত এমনিতেই মানুষ আসে না, আর লকডাউনে তো আসবেই না। অতএব প্রকাশকরা সব দিক দিয়েই ক্ষতিগ্রস্ত। মেলা বন্ধ করা এখন প্রকাশকদের প্রাণের দাবি। তাদের মতে এখনই মেলা বন্ধ হলে প্রকাশকরা বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবেন। কিন্তু বাংলা একাডেমি বলছে, সরকারি উচ্চমহলের নির্দেশনা অনুযায়ীই তারা মেলার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

ক্ষোভ প্রকাশ করে অবসর প্রকাশনীর মাসুদ রানা বলেন, ‘আমাদের ১২ জন স্টাফকে আমরা নিষেধ করে দিয়েছি। কারণ এ পরিস্থিতিতে তাদের আমাদের সঙ্গে রাখা সম্ভব নয়। গত ২৪ বছর মেলা করছি, এ রকম  পরিস্থিতিতে আর কখনো পড়িনি। প্রকাশকদের প্রতিবাদের মুখে এবারের বইমেলা চললেও এখন প্রকাশকরাই চাচ্ছেন মেলা বন্ধ হোক। কারণ মেলা যত দিন চলবে প্রকাশকদের ক্ষতিও তত বাড়বে।’

পারিজাত প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী শওকত হোসেন লিটু বলেন, ‘এমনিতে করোনা বাড়ছে বলে মানুষ ভয় পাচ্ছে, তার পরও যারা আসত লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় তারাও আসতে পারছে না। মানুষই যদি না আসে তাহলে আমরা কার কাছে বই বিক্রি করব? অতএব মেলা বন্ধ করে দেওয়াটাই আমাদের জন্য ভালো।’ পুঁথিনিলয়ে কর্মরত আলমগীর অরণ্য বলেন, ‘আমাদের প্যাভিলিয়নে ১৬ জন স্টাফ ছিলেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় আমাদের স্টাফরাই মেলায় আসতে পারছেন না সেখানে ক্রেতারা কীভাবে আসবেন? এ মন্দা পরিস্থিতিতে আমরা তাদের আমাদের সঙ্গে রাখতে পারিনি। এ মেলা চালু রাখার মানে বুঝি না।’

গতকাল মেলার ২০তম দিনে এমন কথাই বলেছেন বেশির ভাগ প্রকাশক ও প্রকাশনা সংস্থায় কর্মরতরা। এদিকে দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ১৫ লাখ বর্গফুট ছিল প্রায় দর্শনার্থীশূন্য। হাতে গোনা যে কজন মেলায় এসেছেন তা উল্লেখ করার মতো নয়।

বড় ক্ষতি থেকে রক্ষায় ২০টি স্টল বন্ধ : লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বইমেলা এখন প্রায় ক্রেতাশূন্য। এ পরিস্থিতিতে নিজেদের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষায় ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট অংশের ২০ জন প্রকাশক গতকাল তাদের স্টলগুলো বন্ধ করে দিয়েছেন। বন্ধ হয়ে যাওয়া স্টলগুলো হলো ইন্তামিন, ইছামতি, শৈলী, গৌরব, স্বরবৃত্ত, একরঙা এক ঘুড়ি, রাবেয়া, গতিধারা, বটেশ্বর, নিমফিয়া, বাবুই, নওরোজ, নৃ, সুলেখা, শিল্পতরু, হাসি, দেশজ। ক্ষতিগ্রস্ত এসব প্রকাশকদের পক্ষে প্রকাশনা সংস্থা ইন্তামিনের স্বত্বাধিকারী এ এস এম ইউনুছ বলেন, ‘এবারের মেলা এমনিতেই জমেনি। এরপর রাত ৯টার মেলাকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আনা হয়েছে। যখন মেলা জমে উঠত তখন বন্ধ করা হচ্ছে। বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত নতুন সময়সূচির প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু বাংলা একাডেমি তাদের খেয়ালখুশিমতো কাজ করছে। আর লকডাউন দেওয়ার পরে মেলা তো মুমূর্ষু অবস্থায় চলে গেছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় মেলায় যখন মানুষই আসতে পারছে না তখন মেলা করে লাভ কী? প্রতিদিন যাতায়াত ভাড়া ও খাবারের জন্য যা খরচ হয় সে টাকাও বিক্রি হচ্ছে না। বন্ধ করে দিয়েছি বলে এখন লোকসান কিছুটা কম হবে। ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বলে বাংলা একাডেমি বন্ধ করেনি। যার কারণে আরও বড় ক্ষতি থেকে নিজেদের রক্ষায় বাধ্য হয়ে এমন সিদ্ধান্ত আমাদের নিতে হলো। আমরা ২০ জন প্রকাশক ঐকমত্যের ভিত্তিতেই এ স্টলগুলো বন্ধ করে দিয়েছি।’ গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ২৮টি।

হাবিবুল্লাহ সিরাজির যাত্রাপুস্তক : প্রায় দশ বছরেরও অধিক সময় ধরে রচনা করা আধ্যাত্মিক কাব্যগ্রন্থ যাত্রাপুস্তক, যাতে রয়েছে ধর্ম, দর্শন আর জীবনের সাথে বোঝাপড়ার অপূর্ব সমন্বয়। জেহাদ উদ্দীনের বসন্তের গান : কবির চলার পথে রচনা করা কিছু কবিতার সমন্বিত রূপ, যা কবিকে জীবন সস্পর্কে আর গভীরভাবে ভাবতে এবং উপলব্ধি করতে প্রেরণা জুগিয়েছে। বই দুটি প্রকাশ করেছে সরলরেখা প্রকাশনা সংস্থা। পাওয়া যাচ্ছে মেলার ২২৫নং স্টলে।

সর্বশেষ খবর