বৃহস্পতিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

করোনা বিষণ্নতা ও স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি বাড়ায় : গবেষণা

প্রতিদিন ডেস্ক

করোনাভাইরাস সংক্রমিতদের মধ্যে বিষণ্নতা ও স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি বাড়ায় বলে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক জানিয়েছেন। সূত্র : রয়টার্স।

গত ছয় মাসে চিকিৎসা নিয়েছেন এমন কভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে বিষণœতা, স্মৃতিভ্রংশ, মনোব্যাধি ও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি মিলেছে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন। তবে হাসপাতালে বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে যারা ভর্তি ছিলেন, তাদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকির মাত্রা বেশি। মানসিক চাপও বৃদ্ধি এবং করোনাভাইরাস সরাসরি মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলায় এমনটি হয়েছে বলে মনে করছেন তারা। এই গবেষক দল যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ লাখের বেশি কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা নথি পর্যালোচনা করে খুব বেশি দেখা যায় এমন ১৪টি মানসিক ও স্নায়ুবিক রোগে তাদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কতটা তা জানার চেষ্টা করেছেন। এই ১৪টি রোগের মধ্যে আছে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, পারকিনসন্স, গিলিয়ান-ব্যারি সিনড্রোম (এক ধরনের ফ্লু-জনিত উপসর্গ), স্মৃতিভ্রংশ, মনোব্যাধি, ভাবের অসঙ্গতি, উদ্বেগ-অসঙ্গতি ইত্যাদি। কভিডে আক্রান্তদের উদ্বেগ ও ভাবের অসঙ্গতিতে ভুগতে দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি। খুবই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার চাপ থেকে এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা গবেষকদের। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের দৈহিক সংক্রমণের ফল বা এটার কারণে মানুষের দেহের যে শারীরিক প্রতিক্রিয়া তার ফলাফল হিসেবে স্ট্রোক ও স্মৃতিভ্রংশের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তবে পারকিনসন্স বা গিলিয়ান-ব্যারি সিনড্রোমের ঝুঁকি বাড়ানোর সঙ্গে কভিডের কোনো যোগসূত্র পাননি গবেষকরা। গবেষণাটি পর্যবেক্ষণধর্মী হওয়ায় কভিড-১৯ আদৌ এসব রোগের কারণ হিসেবে ভূমিকা রেখেছে কি না অথবা কভিডে ভোগা ব্যক্তিদের কিছু অংশ ভাইরাসটির কারণেই পরের ছয় মাসে স্ট্রোক বা বিষণœতার শিকার হয়েছেন কি না- তা গবেষক দল নিশ্চিত করতে পারেননি। তবে কভিড-১৯ এর প্রভাব বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে এই রোগে আক্রান্ত একটি দলের সঙ্গে ফ্লুতে আক্রান্ত একটি দল এবং অন্য শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত আরেকটি দলের তুলনা করেন গবেষকরা। তিনটি দলের মধ্যে কভিডে আক্রান্তরা অন্য শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগের চেয়ে বেশি হারে মস্তিষ্কের সমস্যায় ভুগেছেন বলে তারা দেখেছেন। তিন দলের মানুষদের যতটা সম্ভব তুলনাযোগ্য করে তোলার ক্ষেত্রে বয়স, লিঙ্গ, জাতিসত্তা ও স্বাস্থ্য পরিস্থিতির সূচকে মেলানো হয়েছে। গবেষণার ফল থেকে দেখা গেছে, অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রের রোগের তুলনায় কভিডে ভুগে সুস্থ হয়ে ওঠার পর মানসিক বা স্নায়বিক জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা ১৬ শতাংশ বেশি এবং ফ্লুতে ভোগাদের তুলনায় এই হার ৪৪ শতাংশ বেশি। আরেকটা আশঙ্কার কথা হলো, কভিডে যারা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাদের ক্ষেত্রে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসেবে মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি বা মস্তিষ্কের জটিলতায় ভোগার আশঙ্কা বেশি থাকে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সেরে ওঠার পর মনের ভাব, উদ্বেগ বা মনোব্যাধির অসঙ্গতি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা দিতে পারে ২৪ শতাংশের ক্ষেত্রে এবং অসুস্থ থাকাকালীন ডেলিরিয়ামের অভিজ্ঞতা হতে পারে ২৮ শতাংশ রোগীর। অ্যালঝেইমার রিসার্চ ইউকের গবেষণা বিভাগের প্রধান ড. সারা ইমারিসিও বলেন, ‘আগের গবেষণা থেকে দেখা গেছে, যাদের স্মৃতিভ্রংশজনিত সমস্যা রয়েছে, তাদের কভিড-১৯ রোগ হলে সঙ্কটাপন্ন পরিস্থিতি দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

 নতুন এই গবেষণায় জানার চেষ্টা করা হয়েছে, বিপরীত দিক থেকেও একই ধরনের পরিস্থিতি হতে পারে কি না।’ এই গবেষণায় রোগের সঙ্গে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোর সম্পর্কের কারণের ওপর মনোযোগ দেওয়া হয়নি বলেও উলেখ করেন তিনি। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক মাসুদ হুসাইন বলেন, করোনাভাইরাস মস্তিষ্কে প্রবেশ করে এবং সরাসরি এর ক্ষতি করে সে বিষয়ে প্রমাণ রয়েছে। এর অন্যান্য পরোক্ষ প্রতিক্রিয়াও থাকতে পারে, যেমন রক্ত জমাট বাঁধা যা থেকে রোগীর স্ট্রোক হতে পারে। এ ছাড়া সংক্রমণ প্রতিরোধে শরীরে যে সাধারণ প্রদাহ সৃষ্টি হয় তাও মস্তিষ্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। গবেষণায় কভিডে ভোগা যে এক-তৃতীয়াংশ ব্যক্তির ক্ষেত্রে এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার এক বা একাধিক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রে সেটা ছিল প্রথম স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফল। তবে কভিড এ ধরনের অসুস্থতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারে- এমন আশঙ্কাও নাকচ করছেন না গবেষকরা।

সর্বশেষ খবর