শুক্রবার, ৯ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড

বাড়ছে সংকটাপন্ন রোগী, প্রকট হচ্ছে আইসিইউ সংকট, শয্যার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি রাজধানীর তিন হাসপাতালে

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড

করোনায় এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর নতুন রেকর্ড দেখল দেশ। গতকাল করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৭৪ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আর গত ২৪ ঘণ্টায় ৬ হাজার ৮৫৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর আগে গত মঙ্গলবার করোনায় দেশে এক দিনে সর্বোচ্চ ৬৬ জনের মৃত্যু তথ্য জানানো হয়েছিল। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সবশেষ তথ্য তুলে ধরা হয়। বিজ্ঞপ্তির তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৪ জনের মৃত্যু নিয়ে দেশে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৫২১ জনে। মোট শনাক্ত রোগী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬৬ হাজার ১৩২ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৩৯১ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৩০ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৪ দশমিক ৮২ শতাংশ ও মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

মার্চের শুরু থেকে প্রতিদিনই করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এপ্রিলে এসে দৈনিক রোগী শনাক্তের সংখ্যা প্রথমবারের মতো ৭ হাজার ছাড়ায়। করোনার এবারের ঢেউয়ে শুধু সংক্রমণই দ্রুত বাড়ছে না, হু হু করে বাড়ছে সংকটাপন্ন রোগী। তীব্র হয়ে উঠছে আইসিইউ সংকট। গত এক দিনে সারা দেশের ফাঁকা আইসিইউর সংখ্যা আরও ২০টি কমে গেছে। গতকাল সরকারি-বেসরকারি মিলে ঢাকায় আইসিইউ ফাঁকা ছিল মাত্র ১৩টি। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ছয়টি ও বেসরকারি হাসপাতালে ফাঁকা ছিল সাতটি। এর আগের দিনও ঢাকায় ২০টি আইসিইউ ফাঁকা ছিল। এ ছাড়া সারা দেশে গতকাল আইসিইউ ফাঁকা ছিল মাত্র ১৪৯টি। আগের দিন ফাঁকা ছিল ১৬৯টি। এ ছাড়া ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শয্যার চেয়ে ১২৭ জন করোনা রোগী বেশি ভর্তি আছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৩ হাজার ১৯৩টি। এতে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ২০ দশমিক ৬৫ শতাংশ মানুষের দেহে। গত এক দিনে মারা যাওয়া ৭৪ জনের মধ্যে ৪৮ জন ছিলেন পুরুষ ও ২৬ জন নারী। হাসপাতালে ৭০ জন ও বাড়িতে চারজনের মৃত্যু হয়। বয়স বিবেচনায় মৃতদের মধ্যে ৪৬ জনই ছিলেন ষাটোর্ধ্ব। এ ছাড়া  ১৬ জন পঞ্চাশোর্ধ্ব, ছয়জন চল্লিশোর্ধ্ব, পাঁচজন ত্রিশোর্ধ্ব ও একজনের বয়স ছিল ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। মৃতদের মধ্যে ৪৩ জন ঢাকা, ১৫ জন চট্টগ্রাম, তিনজন রাজশাহী, সাতজন খুলনা, চারজন বরিশাল ও দুজন সিলেট বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। বাংলাদেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য জানানো হয় ও ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধিসহ নানা কার্যক্রম গ্রহণ করায় বছর শেষে কমে আসে সংক্রমণ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দৈনিক শনাক্ত নেমে আসে তিন শর নিচে। সংক্রমণ হার নামে ৩ শতাংশের নিচে। করোনা হাসপাতালগুলোকে আবারও সাধারণ রোগীদের চিকিৎসার জন্য উন্মুক্ত করা শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বন্ধ করে দেওয়া হয় বিভিন্ন ফিল্ড হাসপাতাল। মানুষের মধ্যে থেকে উঠে যায় স্বাস্থ্যবিধি। ফলে মার্চ থেকে ভয়াবহ রূপ নিয়ে হাজির হয় করোনাভাইরাস। দেশে সংক্রমণ শুরুর ১৩ মাস পর বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি সবচেয়ে বিপজ্জনক পর্যায়ে রয়েছে।

সর্বশেষ খবর