শুক্রবার, ৯ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা
কৃষি

শিমের নতুন জাত উদ্ভাবন

খায়রুল ইসলাম, গাজীপুর

শিমের নতুন জাত উদ্ভাবন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চ অ্যান্থসায়ানিন-সমৃদ্ধ লবণসহিষ্ণু শিমের জাত উদ্ভাবন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রফেসর ড. মো. গোলাম রসুলের নেতৃত্বে দীর্ঘ সময় ধরে গবেষণা করে শিমের এই জাতটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। বিইউ শিম-৭ জাতটি সম্প্রতি জাতীয় বীজ বোর্ডের অনুমোদন পেয়েছে। এটি লবণসহনশীল ও উচ্চফলনশীল। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে শীত মৌসুমে পতিত জমির সুষ্ঠু ব্যবহার এবং অধিক পরিমাণ সবজি উৎপাদন বাড়বে বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা         মনে করছেন। উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়া বলেন, বিইউ শিম-৭ ব্যবহার করে লবণাক্ত পতিত জমি উৎপাদনের মূলধারায় এনে সার্বিক কৃষি তথা সবজি উৎপাদনে আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে উপকূলীয় এলাকার কৃষকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব হবে বলে আশা করি। প্রফেসর ড. মো. গোলাম রসুল জানান, গ্রামবাংলার প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় শিম আদিকাল থেকে আবাদ হয়ে আসছে। প্রতি ১০০ গ্রাম কচি শিম থেকে ৪-৫ গ্রাম প্রোটিন, ১০ গ্রাম শে^তসার, এক গ্রাম ¯েœহ, দুই গ্রাম অম্ল ও কিছু পরিমাণ বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়।  বর্তমানে বাংলাদেশে বছরে ২০ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে ১ হাজার ৪৪ হাজার ৫০ টন শিম উৎপাদিত হচ্ছে। বিশে^র তুলনায় বাংলাদেশে প্রচলিত জাতসমূহের শিমের ফলন যথেষ্ট কম। এ ছাড়া দেশের প্রায় সব জাত মৌসুমের একই সময়ে ফলন দেয়। বেশিরভাগ চাষি একই সময়ে শিম বাজারে নিয়ে আসেন। ফলে শিমের বাজারমূল্য হ্রাস পায়। তাছাড়া খরা, লবণাক্ততা, অতিবৃষ্টি, পোকামাকড় বা রোগবালাইয়ের আক্রমণে উৎপাদন কমে যায়। বাংলাদেশের মোট আয়তনের ৩৭ ভাগ উপকূলীয় এলাকা। ওই এলাকায় চাষ উপযোগী সবজি তথা শিমের অনুমোদিত উফশী তেমন জাত নেই। এমতাবস্থায় উপকূলীয় এলাকায় চাষযোগ্য নতুন জাত উদ্ভাবনই সর্বোত্তম ও বিকল্প উপায়। তিনি জানান, নতুন উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের শিম গাছ প্রতি ২.৪-৩.৫ কেজি ভক্ষণযোগ্য শিম উৎপাদিত হয়। সেই হিসেবে হেক্টরপ্রতি সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ফলনশীলতা ৩৫.০ টন। এটি উচ্চ লবণসহিষ্ণুতা। ১২ ডিএস/এম লবণাক্ততা সহনশীল হওয়ায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১৯টি উপকূলীয় জেলাসহ সমগ্র দেশে আবাদ করা সম্ভব। তিনি আরও জানান, এ শিমে উচ্চমাত্রায় অ্যান্থসায়ানিনের উপস্থিতি রয়েছে। অ্যান্থসায়নিনগুলো মানবদেহের ভাস্কুলার প্রদাহ হ্রাস এবং থ্রোম্বোসিস (রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাঁধা) প্রতিরোধে যথেষ্ট কার্যকর বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্বীকৃত হয়েছে। ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। মানব স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। তিনি জানান, প্রায় সব জাতের শিমই জাব পোকা এবং জ্যাসিড দ্বারা আক্রান্ত হয়। তবে নতুন জাতটি প্রতিরোধী। এটি ছাদ কৃষিতে উপযোগী। প্রফেসর ড. মো. গোলাম রসুল জানান, দেশের সব জেলায় শীত মৌসুমে এই জাতের বীজ রোপণ করা যেতে পারে। ১৩০ দিনের মধ্যে শিম সংগ্রহ করা যায়। তবে বীজ সংগ্রহের জন্য আরও ২০ দিন সময় বেশি লাগবে। এক কঞ্চি বিশিষ্ট বাউনি বা মাচা চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে উৎপাদন করা সম্ভব বিধায় অল্প জায়গায় অধিক সংখ্যক গাছ লাগানো যেতে পারে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর