মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

পর্দা নেমেছে মেলার

মোস্তফা মতিহার

পর্দা নেমেছে মেলার

লকডাউনের কারণে নির্ধারিত সময়ের দুই দিন আগেই গতকাল শেষ হয়েছে অমর একুশে বইমেলা। লেখক, পাঠক, দর্শনার্থী ও বইপ্রেমীদের দীর্ঘ এক বছরের অপেক্ষায় রেখে স্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণ ছেড়েছেন প্রকাশকরা। শেষ দিনেও আশা পূরণ হয়নি প্রকাশকদের। বইপ্রেমীরা ছিল না। তাই ছিল না বিকিকিনি। হয়নি স্বপ্নপূরণ। মেটেনি আশা। বিষাদ, ব্যর্থতা, মন খারাপ ও বেদনাই ছিল বিদায়বেলার সঙ্গী। প্রকাশকরা জানান, প্রতিবাদের মুখে পাওয়া এই মেলা তাদের রঙিন স্বপ্নকে ধূসর করেছে। যে ক্ষতি হয়েছে আগামী কয়েক বছরেও সেই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা যাবে না বলে মনে করেন তারা। তারা বলেন, করোনা পরিস্থিতি আমাদের যতটুকু ক্ষতি করেছে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে বাংলা একাডেমির বেঁধে দেওয়া দুপুর ১২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত পরিবর্তিত সময়সূচি।

গতকাল শেষ দিনেও মেলাজুড়ে ছিল সুনসান নীরবতা। অন্যবার সমাপনী আয়োজন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, লেজার শো’ ও পুরস্কার  প্রদানের মধ্য দিয়ে মেলার সমাপ্তি ঘটলেও এবার তথ্যকেন্দ্র থেকে সাদামাটা ঘোষণা দিয়েই মেলার পর্দা নামানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুর ৩টার মধ্যে স্টল সরিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলা একাডেমি থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বইপত্র ও মালামাল সরিয়ে নিতে এবং গোছাতেই বেশি ব্যস্ত দেখা গেছে প্রকাশনা সংস্থায় কর্মরতদের। ড. সমজিৎ পালের ‘সেই খোকাটাই জাতির পিতা’ : মুজিববর্ষে বিশিষ্ট ছড়াকার, কবি ও পেশায় কৃষিবিদ ড. সমজিৎ পালের ১০০ ছড়া নিয়ে ‘সেই খোকাটাই জাতির পিতা’ গ্রন্থের প্রকাশক সুন্দরম প্রকাশ। ১১৫ পৃষ্ঠার এ সুদৃশ্য ছড়াগ্রন্থটির প্রচ্ছদ করেছেন সমর মজুমদার। গ্রন্থটির মূল্য ৩০০ টাকা।

ফারজানা সিকদারের ‘হৃদয়পুরের গল্প’ : কবি ও লেখক ফারজানা সিকদারের চতুর্থ গ্রন্থ ‘হৃদয়পুরের গল্প’ প্রকাশ করেছে কলি প্রকাশনী। এটির প্রচ্ছদ করেছেন মোহাম্মদ হাসনাত রনি।

প্রকাশনা ও বিক্রিতে পিছিয়ে ছিল মেলা : প্রকাশনা ও বিক্রি দুই দিকেই পিছিয়ে ছিল এবারের মেলা। গতকাল মেলার শেষ দিনে নতুন বই প্রকাশিত হয় ৬৪টি এবং মেলায় মোট নতুন বই প্রকাশ হয় ২ হাজার ৬৪০টি। আর গতবার বই প্রকাশিত হয় ৪ হাজার ৯১৯টি, অর্থাৎ গতবারের তুলনায় এবার ২ হাজার ২৭৯টি বই কম প্রকাশ হয়েছে। বাংলা একাডেমি ও প্রকাশকদের বিক্রিসহ গতবার ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। আর এবার মাত্র ৩ কোটি ১১ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ গত বছরের চেয়ে এবার ৭৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা কম বিক্রি হয়েছে।

পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির অনুরোধ : এবারের মেলায় প্রকাশকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ১০০ কোটি টাকার বই কিনতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। বিকালে মেলা প্রাঙ্গণের ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা সরকারের কাছে এই অনুরোধ জানান। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সমিতির সহসভাপতি শ্যামল পাল। তিনি জানান, গতবারের মেলায় বাংলা একাডেমি ও প্রকাশকরা বিক্রি করে ৮২ কোটি টাকার বই। আর এবার প্রকাশকরা মাত্র ৩ কোটি ১১ লাখ টাকার বই বিক্রি করেছেন। এতে তারা পথে বসেছেন। যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকাশকরা তাদের কাছ থেকে ১০০ কোটি টাকার বই কেনার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।

পুরস্কার : বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ‘শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হয়েছে। এসব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান হলো- উড়কি, সংবেদ এবং কথাপ্রকাশ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর