বুধবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

ঢাকা ছাড়ার হিড়িক

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা ছাড়ার হিড়িক

শিমুলিয়ায় গতকাল ফেরিতে ঘরমুখো মানুষের ভিড় -রোহেত রাজীব

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত সর্বাত্মক লকডাউনের আগের দিন গতকাল ঢাকা ছেড়ে গেছেন লাখো মানুষ। নগরীর প্রবেশপথগুলোয় ছিল উপচে পড়া ভিড়। সংক্রমণ রোধে সবাইকে স্ব স্ব স্থানে রাখতে দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক, মিনি ট্রাক, পিকআপ এমনকি মুরগি বহনকারী গাড়িতেও রাজধানী ছেড়েছে মানুষ। কেউ আবার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে রওনা দেন গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে। কিছু গণপরিবহনকে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাজধানীর আশপাশের জেলাগুলোয় যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকা ছেড়ে যাওয়া এসব মানুষের অধিকাংশই শ্রমজীবী নিম্নআয়ের মানুষ। কিছু সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীও ঢাকা ছেড়েছেন। ঢাকা ছেড়ে যাওয়া এসব মানুষ বলছেন, এর আগে লকডাউনের সময় বাড়তে বাড়তে দুই মাস ছাড়িয়েছিল। এবারও যদি এমন হয়, তাহলে দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের অবস্থা শোচনীয় হবে। কাজ না থাকলে খাবার আসবে কোথা থেকে? এছাড়া লকডাউনের মধ্যে ঢাকায় থেকে রোজা রাখাও মুশকিল। এ কারণেই তারা রাজধানী ছেড়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন।

গতকাল সকালে সায়েদাবাদ রেলগেট থেকে জনপথ মোড় পর্যন্ত ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। কেউ ব্যাগ কাঁধে হাঁটছেন, কেউ মিনি ট্রাক বা পিকআপ দেখলেই হাত উঁচু করে দাঁড় করাচ্ছেন। এ সময় অনেক মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারে কয়েকগুণ বেশি ভাড়ায় দূরপাল্লার যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। নাদিয়া কান্তা রিদি নামে একটি পরিবহন যাত্রী তুললেও পরে পুলিশ দেখে নামিয়ে দেয়। একই চিত্র দেখা গেছে যাত্রাবাড়ী থেকে শনিরআখড়া পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে। গাবতলী থেকে সাভার সড়কেও দেখা গেছে একই চিত্র। আমিনবাজার ব্রিজ এলাকায় দেখা গেছে ঘরমুখো মানুষের ভিড়। মিনি ট্রাক, ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে অসংখ্য মানুষকে। সুলতান নামের এক ব্যক্তি জানান, তিনি মিরপুরে চায়ের দোকান চালাতেন। লকডাউনে দোকান বন্ধ থাকবে। কবে খুলতে পারবেন জানেন না। তাই গ্রামের বাড়ি খুলনায় চলে যাচ্ছেন। ভেঙে ভেঙে আরিচা পর্যন্ত যাবেন। এরপর নদী পার হলে একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তিনি। তবে ভিন্ন চিত্র ছিল মহাখালী ও গাবতলী বাসটার্মিনালে। এখান থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি। তবে জনপ্রতি দেড় থেকে দুই হাজার টাকায় অনেক প্রাইভেটকারে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। এদিকে দূরপাল্লার বাসস্ট্যান্ড না হলেও গতরাতে ঘরমুখো মানুষের ভিড় দেখা গেছে কারওয়ানবাজার এলাকায়। তার মধ্যে নারী-শিশুসহ ছিল বিভিন্ন বয়সের মানুষ। অধিকাংশই রিকশাচালক, ভ্যানচালক ও হকার। আলাপে জানা যায়, বিভিন্ন জেলা থেকে কাঁচামাল নিয়ে কারওয়ান বাজারে আসা ট্রাকে করে গত তিন-চার দিন ধরেই ঢাকা ছাড়ছেন মানুষ। অনেকেই পরিবারসহ যাচ্ছেন। তবে এসব ট্রাকে চড়ে যেতেও গুণতে হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া। মাওয়া ও পাটুরিয়া ফেরিঘাট থেকেও ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মানুষের ভিড়ের খবর পাওয়া গেছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর