বুধবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

মামলার আসামি না হয়েও হয়রানির শিকার দুই বোন

মাহবুব মমতাজী

আসামি না হয়েও গত এক বছর ধরে আদালত থেকে আদালতে ঘুরছেন দুই বোন। নুন আনতে পানতা ফুরায় যাদের, তাদের ওপর চেপে বসেছে মামলা চালানোর বাড়তি খরচ। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। এমন ঘটনার ভুক্তভোগী পুরান ঢাকার ওয়ারীর রবিদাস পাড়ার দুই বোন শিল্পী রবিদাস (৩৮) ও প্রতিমা রবিদাস (৩৩)।

মামলার নথিপত্র দেখে জানা যায়, গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি ওয়ারীর ৮/১ গোপীকিষাণ লেনের বাসিন্দা সৈয়দ আলতাফুল হুদা (৫২) ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে একটি মামলা করেন। আসামি করা হয় বিষ্ণু রবিদাসের তিন মেয়ে সুইটি রবিদাস (৪৫), শিল্পী রবিদাস (৫০) ও পূর্ণিমা রবিদাসকে (৫২)। অথচ আদালত থেকে সমন যায় মৃত বিগণ রবিদাস ও মৃত পূর্ণিমা রবিদাসের দুই মেয়ে শিল্পী রবিদাস (৩৮) এবং প্রতিমা রবিদাসের (৩৩) বাসার ঠিকানায়। অজানা হয়রানির আশঙ্কায় তারা ধার্য তারিখে আদালতে হাজির হন। আসামির তালিকায় প্রতীমা নামে কারও নাম না থাকায় আদালত তাকে তাৎক্ষণিক রেহাই দেন। আর বিগণ রবিদাসের অপর মেয়ে শিল্পী রবিদাস শুধু নামের মিলের কারণে আসামি হিসেবে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকেন। ভুক্তভোগীরা জানান, তাদের মায়ের নাম পূর্ণিমা। আদালতে তাদের মায়ের মৃত্যুসনদ পেশ করা হয়েছে। যাচাইয়ের জন্য আদালত পূর্ণিমার উদ্দেশে সমন পাঠান। জারিকারক পূর্ণিমাকে না পেয়ে সমন মামলায় উল্লেখ করা ঠিকানায় ‘লটকাইয়া’ দিয়ে আসেন। মামলার আসামি বিষ্ণু রবিদাসের মেয়ে শিল্পী রবিদাসের (৫০) স্থলে হাজিরা দিতে থাকেন বিগণ রবিদাসের মেয়ে শিল্পী রবিদাস (৩৮)। এভাবে চলে এক বছর। শিল্পী রবিদাস এবং প্রতিমা রবিদাস জানান, তারা বুঝতে পারছেন না আলতাফুল হুদার সঙ্গে তাদের কিসের বিরোধ?

এদিকে মামলায় উল্লেখ করা আসামির নাম, আসামির পিতার নাম, বয়স ভিত্তিহীন এবং এক আসামি মৃত হওয়ায় বাদী আলতাফুল হুদা আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে একটি আবেদন করেন। সূত্র জানায়, ওই আবেদনে বলা হয় ৩ নম্বর আসামি পূর্ণিমা মরে নাই, জীবিত আছে। আর ১ নম্বর আসামি সুইটি রবিদাসই প্রতীমা রবিদাস। আর পিতার নাম বিষ্ণু রবিদাসই বিগণ রবিদাস। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত গতবছরের ২৪ ডিসেম্বর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের আদেশ দেন। গত ১৮ জানুয়ারি পিবিআইর ঢাকা মেট্রো (দক্ষিণ) বিভাগের এএসআই কাজী আনোয়ার হোসেন বিষয়টির তদন্ত শুরু করেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই তদন্ত কর্মকর্তা মামলার বাদী আলতাফুল হুদার ওয়ারীর গোপীকিষাণ লেনের ৮/১ নম্বর বাড়ির দুই ভাড়াটিয়া তাহমিদা বেগম ও শিরিন বানুর মতামত নেন। তারা দুজন আপন বোন। এ ছাড়া আলতাফুল হুদার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী নূরুল আবছারেরও মতামত নেন। এই তিনজনের সাক্ষ্য নিয়ে গত ৯ মার্চ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন, ১ নম্বর আসামি সুইটি রবিদাস তার পারিবারিক নাম। কাগজপত্রে প্রতিমা রবিদাস বলে আমরা জানি। তার পিতার নাম বিষ্ণু রবিদাস, আবার কেউ বিগণ রবিদাস নামেও ডাকে। আর পূর্ণিমাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), স্থানীয় কাউন্সিলরের প্রত্যয়নপত্র, কমিউনিটি অ্যাম্বাসেডর আইডি কার্ড, এনজিও সংস্থা রাড্ডা এমসিএইচ-এফপি সেন্টারের আইডি কার্ড ও সিটি করপোরেশনের ওয়ারিশ সনদপত্র যাচাই করে দেখা যায়- প্রতিমা রবিদাসের নাম প্রতিমাই। আর পিতা বিগণ রবিদাস। তার এনআইড নম্বর- ৮৬৬৭৩৪০২৬২। এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ইস্যু করা একটি মৃত্যু সনদ থেকে জানা যায়, মামলার ৩ নম্বর আসামি পূর্ণিমা মারা গেছেন ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। অর্থাৎ তিনি প্রতিমা এবং শিল্পীর মা। এসব বিষয় ও তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে এএসআই কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি তা ধরেননি। এদিকে রবিদাস পাড়ার নরেশ রবিদাস, টেপা রবিদাস ও শীলা রবিদাসের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিল্পীর বোন প্রতিমা। তাদের বাবা বিগণ রবিদাস। বিগণ কিংবা প্রতিমার অন্য কোনো নাম নেই। পিবিআইর প্রধান ডিআইজি বনোজ কুমার মজুমদার জানান, তদন্ত প্রতিবেদনটি আদালতে জমা হয়ে গেছে। এখন সেটি আদালত বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর