শুক্রবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

পাঁচ দেশের কর্মীদের নিয়ে যাবে বিশেষ ফ্লাইট

১০০-এর বেশি বিশেষ ফ্লাইটের পরিচালনা শুরু হবে শনিবার থেকে

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

সর্বাত্মক লকডাউনে বিমান যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আটকে পড়া কর্মীদের জন্য বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে সরকার। মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান ও কাতারের ভিসা ও টিকিট সংগ্রহ করা কর্মীরা পাবে এই সুযোগ। এশিয়ার দেশ সিঙ্গাপুরেও বিশেষ ফ্লাইট নিয়ে যাওয়া হতে পারে। আগামী শনিবার বিশেষ ফ্লাইট চালু করতে কাজ করছে সরকারের পাঁচ মন্ত্রণালয়। লকডাউনে জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে তৈরি হওয়া দোলাচল কাটাতেই এই বিশেষ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জানা যায়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আটকে দিয়েছে প্রায় ২০ হাজার কর্মীর ভবিষ্যৎ। করোনাভাইরাসের মহামারীতে পুরোপুরি থমকে যাওয়া বৈদেশিক শ্রমবাজারে স্বাভাবিক অবস্থা আসতে না আসতেই তৈরি হয়েছে নতুন সংকট। গত ১৪ এপ্রিল থেকে নিয়মিত বিমান যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে কর্মীদের বিদেশযাত্রাও। এমন পরিস্থিতিতে পাঁচটি দেশে বিশেষ ফ্লাইট চালু করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে গতকাল অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল সভায় প্রাথমিকভাবে এই সিদ্ধান্ত হয়। সভায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কর্মকর্তা, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান এবং বিমানের এমডিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। সভা শেষে  বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান জানিয়েছেন, শনিবার থেকে পাঁচ দেশে বিশেষ ফ্লাইট চালু হতে পারে। এসব দেশে ১০০-১২০টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। প্রবাসীকল্যাণ সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন জানিয়েছেন, অনেকে টিকিট কেটে রেখেছেন, আবার অনেকে সেখানে গিয়ে কোয়ারেন্টাইনের জন্য হোটেল বুকিং দিয়েছেন। তারা যেহেতু যাবেন সে কারণে আমরা তাদের জন্য বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা নেগেটিভ সনদসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিমানবন্দরে নেওয়ার ব্যবস্থা করবে। শর্তসাপেক্ষে প্রবাসীকর্মীদের দেশে ফিরতে দেওয়ার সিদ্ধান্তও সভায় নেওয়া হয়েছে জানিয়ে মুনিরুছ সালেহীন বলেন, প্রবাসী কর্মীরা কেবলমাত্র জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ মিশনের ছাড়পত্র গ্রহণ করে এবং দেশে প্রযোজ্য কোয়ারেন্টাইন শর্ত মেনে কভিড নেগেটিভ সনদ নিয়ে দেশে আসতে পারবেন। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিসংখ্যান অনুসারে, করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ সালের ২৭ মার্চ বিশ্বব্যাপী বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এরপর তিন মাস একটানা একেবারেই বন্ধ ছিল জনশক্তি রপ্তানি। জুলাইয়ে মাত্র ১৬ জন, আগস্টে ৬৪ জন, সেপ্টেম্বরে ১৯৫ জন, অক্টোবরে ১ হাজার ২০৮ জন এবং নভেম্বর মাসে ৬ হাজার ৫৭০ জন কাজের জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পান। ১০ মাসের এই টানাপোড়েন শেষে গত ডিসেম্বরে গতি ফেরে জনশক্তি রপ্তানিতে। গত ডিসেম্বরে জনশক্তি রপ্তানি হয় ২৮ হাজার ৩৯৮ জন, জানুয়ারিতে ৩৫ হাজার ৭৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৪৯ হাজার ৫১০ জন এবং মার্চে ৬১ হাজার ৬৫৩ জন। গড়ে ৫০ হাজার থেকে ৫৫ হাজার জনশক্তি রপ্তানির ধারায় ফেরে বাংলাদেশ। এর মধ্যে তিন ভাগের একভাগ যায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে। কিন্তু ১৪ এপ্রিল থেকে সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফের বন্ধ হয়ে গেছে জনশক্তি রপ্তানি। তবে আগামী সাত দিনে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক সৌদি, দুবাই, ওমান, কাতার যাওয়ার উদ্দেশে বিমান টিকিট করেছেন। তারা প্রত্যেকেই ৮০-৯০ হাজার টাকা দিয়ে উচ্চমূল্যে টিকিট কিনেছেন। কাতার এবং ওমানের যাত্রীরা লাখ টাকা দিয়ে কোয়ারেন্টাইন হোটেল বুকিং করে রেখেছে, যেগুলো নন রিফান্ডেবল। বেসরকারিভাবে বিদেশে জনশক্তি রপ্তানিকারকরা বলছেন, নেপাল, ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইনসহ কর্মী প্রেরণকারী দেশগুলো লকডাউনের মধ্যেও জরুরি খাত হিসেবে বিভিন্ন দেশে কর্মী প্রেরণ করছে। সেখানে বাংলাদেশ থেকে কর্মী প্রেরণ করা বন্ধ হলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতা থেকে পিছিয়ে যাবে। অনেক কর্মীর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে, আবার অনেক কর্মীর ভিসার মেয়াদ দ্বিতীয়বার শেষ হবে। সময়মতো না যেতে পারলে নিয়োগকর্তা চাহিদাপত্র বাতিল করতে পারেন।

সর্বশেষ খবর