রবিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনায় ফের থমকে বিচার বিভাগ

ভোগান্তিতে বিচারপ্রার্থীরা ভার্চুয়াল বেঞ্চ বৃদ্ধির দাবি আইনজীবীদের

আরাফাত মুন্না

একটি ফৌজদারি মামলায় নিম্ন আদালতে ৫ বছর জেল হয়েছে মুন্সীগঞ্জের মো. তালেবের। রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করে জামিন চেয়েছেন তিনি। তালেবের জামিন প্রশ্নে রুল জারি করে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মামলার সব নথি তলব করে উচ্চ আদালত। বিচারিক আদালত থেকে সব নথি হাই কোর্টে পাঠানো হলেও করোনার কারণে আটকে আছে তার জামিন আবেদনের শুনানি। শুধু এ মামলাই নয়, হাই কোর্টে নিয়মিত বেঞ্চ না থাকায় এমন অনেক জামিন আবেদন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মো. তালেবের মতো বিচারপ্রার্থীদের।

সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে করোনা সংক্রমণের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যে বন্ধ রয়েছে বিচার বিভাগের নিয়মিত কার্যক্রমও। এক প্রকার থমকেই আছে বিচারাঙ্গন। জানা গেছে, গত ৫ এপ্রিল থেকে হাই কোর্টে মাত্র চারটি (ফৌজদারি, দেওয়ানি, রিট ও কোম্পানি) ভার্চুয়াল বেঞ্চ জরুরি আবেদনের শুনানি গ্রহণ করছে। অন্যদিকে আপিল বিভাগের এক নম্বর আদালত সপ্তাহে তিনদিন ভার্চুয়ালি বসছে। বিচারিক আদালতে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় গ্রেফতারকৃত আসামিকে হাজির করতে প্রতি জেলায় একটি করে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট খোলা রয়েছে। এ ছাড়া জামিন ও জরুরি ফৌজদারি আবেদন নিষ্পত্তিতে সীমিত পরিসরে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে শুনানি গ্রহণ করছে কিছু আদালত। এ ছাড়া সব ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলার নিয়মিত বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে।

আইনজীবীরা বলছেন, করোনাকালে দেশের বিচার বিভাগের বড় ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর আদালতের বিচার কার্যক্রম নিয়মিত হলেও আবারও করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আইনজীবীরা বলেন, এ পরিস্থিতিতে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে হলেও বিচারপ্রার্থীর সাংবিধানিক ও আইনি অধিকার রক্ষায় জামিন, আমলযোগ্য অপরাধের মামলার ফাইলিং ও দেওয়ানি মামলায় নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত শুনানি চালু রাখা উচিত। অন্যদিকে উচ্চ আদালতে ভার্চুয়াল বেঞ্চ বৃদ্ধি করে নিয়মিত বিচারকাজ পরিচালনা করার দাবিও জানিয়েছেন তারা। চলমান পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে মামলাজট আরও বাড়বে বলেই মনে করেন আইনজ্ঞরা। গত বছর ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি শুরু হওয়ার পর দীর্ঘ সময় ধরে প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে বিচারাঙ্গন। পরে আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ভার্চুয়াল বিচার ব্যবস্থা চালু করায় কিছুটা সংকট কাটে। এর পর অধ্যাদেশটি আইনে রূপান্তর করে সরকার। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হওয়ার পর ৩৫টি ভার্চুয়াল আদালতের পাশাপাশি শারিরিক উপস্থিতির বেঞ্চেও বিচার হয় উচ্চ আদালতে। নিম্ন আদালতেও পুরোদমে চলে বিচারিক কার্যক্রম। জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বাংলাদেশ   প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে বিচারপ্রার্থী মানুষের তো কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছেই। তবে ন্যায়বিচারের স্বার্থে হাই কোর্টের চারটি ভার্চুয়াল বেঞ্চ যতটুকু পারে বিচারকাজ করছেন। সীমিত পরিসরে বিচারপ্রার্থীদের বিচার নিশ্চিত করতে আমরাও চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, কিন্তু উচ্চ আদালতে চারটি বেঞ্চ খুবই কম হয়ে যায়। একই পরিস্থিতির কারণে এর আগে অনেক বেঞ্চ ছিল। এখন বেঞ্চ বাড়ানোর যে দাবি এটা আসলে আমাদের সবার কথা। চলমান পরিস্থিতি চলতে থাকলে মামলাজট আরও বাড়বে বলেও মনে করেন তিনি। জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ও সাধারণ আইনজীবী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর দীর্ঘদিন হাই কোর্টের ৩৫টি ভার্চুয়াল বেঞ্চ ও বেশকিছু নিয়মিত আদালতে মামলার শুনানি হচ্ছিল। কিন্তু সম্প্রতি মাত্র চারটি বেঞ্চে বিচারকাজ পরিচালিত হচ্ছে, যা একেবারেই অপ্রতুল। আমাদের যুক্তি হলো, ৩৫টি ভার্চুয়াল বেঞ্চ চালানোর মতো সক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের রয়েছে। তবে এখন কেন মাত্র চারটি বেঞ্চ করা হলো? ভার্চুয়ালে তো শারীরিক উপস্থিতির প্রয়োজন নেই। সে ক্ষেত্রে বেঞ্চ বাড়াতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। জানতে চাইলে আইনজীবী ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, করোনার প্রকোপে দেশে নানা বিধিনিষেধ থাকলেও ফৌজদারি অপরাধ থেমে নেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপরাধপ্রবণ লোকেরা এ পরিস্থিতিকে সুযোগ হিসেবে নিচ্ছে। অধস্তন আদালতের বিচার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অপরাধপ্রবণ মানুষদের মধ্যে এক ধরনের বেপরোয়া মনোভাব চলে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে হলেও আদালত বৃদ্ধি করা উচিত।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর