বুধবার, ২১ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

স্বাস্থ্য-শিক্ষা-স্থানীয় শিল্প খাতে নজর দিন

নিহাদ কবির

স্বাস্থ্য-শিক্ষা-স্থানীয় শিল্প খাতে নজর দিন

আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে মহামারী করোনাভাইরাসের ধাক্কা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়ানো এবং শিক্ষা ও স্থানীয় শিল্পে নজর দিতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি নিহাদ কবির। দেশের প্রাচীন এই বাণিজ্য সংগঠনের সভাপতি বলেছেন, শুধু বরাদ্দ বাড়ানো নয়, ব্যয় যেন কার্যকর হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। বাজেটে শুধু তৈরি পোশাকশিল্প বা ট্রাডিশনাল রপ্তানি খাত নয়, অন্যান্য পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি, স্থানীয় বাজার ও সেবা খাতে সরকারকে নজর দিতে হবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে বাজেট প্রস্তাব তুলে এ কথা বলেন এমসিসিআই সভাপতি নিহাদ কবির। তার মতে, কভিডজনিত ক্ষতি থেকে অর্থনীতির দ্রুত উত্তরণের জন্য স্থানীয় ক্ষুদ্র, কুটির ও অতি ক্ষুদ্রশিল্পে আর্থিক সহায়তা তাদের হাতে দ্রুত ও কার্যকরভাবে পৌঁছে দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। গত বাজেটে স্থানীয় ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য দেওয়া প্রণোদনার অর্থ পেতে অনেক বেশি সময় লেগেছে। কিন্তু দ্রুততম সময়ে অধিকতর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে এবং গত বছর হারানো কর্ম ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় ক্ষুদ্র, কুটির ও অতি ক্ষুদ্র শিল্পে দ্রুত প্রাণসঞ্চার করার বিকল্প নেই। অর্থ-সহায়তার সঙ্গে সঙ্গে নীতি-সহায়তার মাধ্যমে সাপ্লাই চেইনে অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করে এসব শিল্পে উৎপন্ন পণ্যের বাজারও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি বলেন, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) তথ্য অনুযায়ী, করোনাকালে তৈরি পোশাকশিল্পে চাকরি হারিয়েছেন ৮ শতাংশ লোক। যদিও পোশাকশিল্পের ক্ষতি পোষাতে সরকার যথেষ্ট প্রণোদনা দিয়েছে। এখন স্থানীয় ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র শিল্পে অনতিবিলম্বে প্রয়োজন কার্যকর আর্থিক ও নীতি-সহায়তা। এটা না হলে দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে দেশের অর্থনীতি সর্বশক্তি নিয়েও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।

নিহাদ কবির বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে উল্লেখ করেন। অথচ একজন যুগ্ম-সচিব তার টেবিলের সামনে আমাকে বলেছেন, আপনারা ব্যবসায়ীরা মানুষজনকে ঠকানোর কাজ করেন। আসলে বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যেভাবে ব্যবহার করা হয়, সেভাবে চোরদের সঙ্গেও হয়তো করা হয় না। দেশের ব্যবসায়ীদের সম্মানের সঙ্গে মূল্যায়ন না করলে বিদেশি ব্যবসায়ীরাও আসবে না।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (বিডা) গেলে সমস্যার সমাধান হয়। তবে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে হয়। যারা বিডায় কাজ করেন, তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই ভালো। কিন্তু তারা সবাই ব্যবসার প্রয়োজনীয় বিষয়ে প্রশিক্ষিত বা সম্যক অবহিত নন।’

এমসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘সিঙ্গাপুর বছরের পর বছর হাতজোড় করে অনুরোধ করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিজেদের দেশে নেওয়ার পরই প্রবৃদ্ধির দেখা পেয়েছে। আমরা সেটি করছি না। আমরা সুন্দর পসরা সাজিয়ে বসে আছি। কেন তারা (বিদেশি বিনিয়োগ) আমাদের দেশে আসছে না, সেটি কিন্তু আমরা একবারও জিজ্ঞেস করি না।’ তিনি বলেন, ‘ভিয়েতনাম ৬০টির মতো মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করেছে। আর আমরা ভুটানের সঙ্গে এফটিএ করেছি। আমার নিজের জেলায়ও ভুটানের চেয়ে বেশি মানুষ আছে। আমার জেলার অর্থনীতিও ভুটানের অর্থনীতির চেয়ে বড়।

ভুটান যদি টেস্ট কেস হয় তাহলে বলার কিছু নেই। এ থেকে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা নিয়ে অন্য দেশের সঙ্গে আমরা দ্রুত এগিয়ে যেতে পারি। কভিড-পরবর্তী সময়ে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পর জাতীয় উন্নয়নের গতি বজায় রাখার জন্য আমাদের যে পরিমাণ দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে, তা আকৃষ্ট করতে বিডাকে পরিপূর্ণভাবে ক্ষমতায়ন করতে হবে। সব গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক প্রতিষ্ঠান, যেমন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক ইত্যাদিকে রক্ষণশীলতা পরিহার করে প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করার মতো সাহসী, আধুনিক, গতিশীল মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

সর্বশেষ খবর