শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

দেশপ্রেম শেখাতে প্রয়োজন জাতীয় সংগীত পরিবেশন

-সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

দেশপ্রেম শেখাতে প্রয়োজন জাতীয় সংগীত পরিবেশন

দেশপ্রেম শেখাতে প্রতীকী অর্থে হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা উচিত। খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেমের সঙ্গে পরিচয় করানো হয়। আমরা যখন স্কুলে ছিলাম তখন থেকেই এ চর্চা ছিল। কিন্তু দেখলাম, শুধু বাংলা মাধ্যমেই এটি শেখানো হচ্ছে। শুধু মাদরাসা নয়, ইংরেজি মাধ্যমেও অনেক ক্ষেত্রেই এ চর্চা অবহেলিত। আর এসব প্রতিষ্ঠানে এ চর্চা করা হচ্ছে কি না তার কোনো তদারকি হচ্ছে বলেও মনে করি না। তাই সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এ প্রথাটি থাকবে কি থাকবে না।’

কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা প্রতীকী। এ চর্চা করলেই যে দেশপ্রেম হয়ে যাবে এমন নয়। কারণ দেশপ্রেম যে স্থান থেকে উদ্বুদ্ধ হবে তা অনেকটাই আমরা কলুষিত করে ফেলেছি। সততা, একাত্তরে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের প্রাণের মূল্যায়নসহ অনেক কিছুই দেশপ্রেমের সঙ্গে সম্পর্কিত।’ মনজুরুল ইসলাম প্রশ্ন তোলেন, ‘আমার দেশের প্রেশাসন ও রাজনীতি কেমন চলছে? এসব কি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ! আবার আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ নয়। সেখানে শুধুই মুনাফা খোঁজা হয়। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায়ও চাকরি পাওয়ার বিষয়টিকে এখন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সেখানে কোথাও দেশপ্রেম নেই। দিনের শুরুতেই এ চর্চার মাধ্যমে সকালবেলায় শিক্ষার্থীরা দেশকে মাথায় রাখছে এ বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ চর্চা সফলভাবে ধরে রাখতে পারি তাহলে আমাদের সন্তানরা সেখান থেকে বেরিয়ে যখন পেশাগত জীবনে যাবে তখন তারা এ শিক্ষা কাজে লাগাতে পারবে। সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয় এ চর্চা দরকার এবং সবাইকে তা মানতে হবে তাহলে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তা বাধ্যতামূলক করতে হবে। এখানে ছাড় দেওয়ার অর্থ হচ্ছে কিছু মানুষ দেশপ্রেমী হবে আর কিছু মানুষ হবে না। অন্যদিকে, কোনো জায়গায় আপস করা হলো আবার কোনো জায়গায় করা হলো না শিক্ষাব্যবস্থায় এমনটি হতে পারে না।’ এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘কওমি মাদরাসাগুলো যদি মনে করে তাদের শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেম শেখানোর প্রয়োজন নেই তাহলে আমাদের কিছু করার নেই। কিন্তু একটি দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেনই বা এমন অবস্থান গ্রহণ করবে! কওমি মাদরাসার পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যমও যদি এমনটি করে তা-ও আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। যদি আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে সকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অ্যাসেম্বলিতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে হবে তবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এটি বাধ্যতামূলক করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। আর ছাড় দেওয়ার অর্থ হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভিতর বৈষম্য সৃষ্টি করা। মাদরাসা দরিদ্রদের সন্তানদের জন্য এ ধরনের একটি সামাজিক ধারণা তৈরি করে, এর মধ্যে আমরা এক ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি করে রেখেছি। আর মধ্যবিত্তের জন্য বাংলা এবং উচ্চবিত্তের জন্য ইংরেজি মাধ্যম। এ বৈষম্য থেকে যদি বেরিয়ে আসতে হয় তবে একটি ধারা তৈরি করতে হবে। আর যদি জাতীয় পতাকা নিয়ে বৈষম্য হয় সেটিও গ্রহণযোগ্য নয়। এজন্য এ প্রথা প্রতীকী অর্থে হলেও চালু রাখা হবে কি না তা এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি সরকার এটি চালু রাখার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয় তবে সরকারকে সেভাবেই অগ্রসর হতে হবে এবং প্রত্যেকের জন্য এর চর্চা বাধ্যতামূলক করতে হবে। এখানে কোনো ছাড় দেওয়া উচিত হবে না। আমি মনে করি শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেমে উদুদ্ধ করার এটি একটি বড় সুযোগ।

সর্বশেষ খবর