শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

ঝড়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

২৫ মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে তেঁতুলিয়ার গ্রাম তছনছ

প্রতিদিন ডেস্ক

ঝড়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলায় ঝড় ও বৃষ্টিতে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কালবৈশাখীর আঘাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ফসলের। গত বুধবার সন্ধ্যা রাতের পর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে এ কালবৈশাখী বয়ে যায়। এ সময় সিরাজগঞ্জে বিদ্যুতের ট্রান্সফরমারসহ বিদ্যুৎ লাইন লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ায় প্রায় ২০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। এ ছাড়া গতকাল ২৫ মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে পঞ্চগড়েরর তেঁতুলিয়ায় কয়েক গ্রাম তছনছ হয়েছে। ফসল নষ্ট হওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষকের মুখের হাসি মুছে যায়।

আবহাওয়া অফিস জানায়, বুধবার রাত ১০টা ১০ মিনিটের পর থেকে প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হানে। যার সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ৮৫ কিলোমিটার। রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন এলাকায় ঝড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টি হয়েছে। ঝড়ে বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া  যায়নি। রাজধানীর হেয়ার রোডে সড়কের পাশে থাকা গাছের ডাল ভেঙে পড়ে। এ ছাড়া দু-এক জায়গায় গাছ উপড়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানেও ঝড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টি হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

পঞ্চগড় : পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে হঠাৎ শিলাঝড় ২৫ মিনিট ধরে তান্ডব চালিয়েছে। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার ভজনপুর এলাকায় ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় গিতালগছ, ডিমাগজ, প্রধানগজ, বৈরাগীগজ, শান্তিনগর, কির্তনপাড়া, কুড়ানুগজসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের গাছপালা উপড়ে পড়ে। কঠিন শিলাবৃষ্টির কারণে টিনের চালাগুলো ফুটো হয়ে যায়। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেকের বাড়িঘরও ভেঙে পড়েছে। বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তারা স্থানীয় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে বাড়িতে রয়েছেন। এদিকে ব্যাপক শিলাবৃষ্টির কারণে বোরো ধানের আবাদ নষ্ট হয়ে গেছে। ধানের শীষ ছিন্ন হয়ে মাটিতে পড়ে গেছে। ধানের গাছগুলোও মাটিতে পড়ে গেছে। ধানের ফলনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা হতাশায় পড়ে গেছেন। তারা বলছেন, হঠাৎ শিলাবৃষ্টির কারণে বাড়িঘরের ক্ষতি হয়েছে।  বোরো ধান এবং মরিচের আবাদ নষ্ট হয়ে গেছে। ডিমাগজ গ্রামের কৃষক রেজাউল ইসলাম বলেন, আমার বোরো আবাদ নষ্ট হয়ে গেছে। টিনের চালা ঘর ভেঙে গেছে। করোনার সময়ে হঠাৎ ঝড়ের ধাক্কায় খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছি। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অন্তত ১ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে। এত টাকা পাব কোথায়?

এ ব্যাপারে নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। স্থানীয় চেয়ারম্যানকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে সহযোগিতা দেওয়া হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে গত বুধবার সন্ধ্যার পর হঠাৎ ঝড় ও বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের বোরো ধানের সোনালি হাসি। টানা ১ ঘণ্টার ঝড়োবৃষ্টিতে উপজেলার কাঁচা-পাকা বোরো ধান মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। প্রায় ১৪ হাজার ৬২৬ হেক্টর জমিতে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিতে ৯০ শতাংশ কাঁচা-পাকা বোরে ধান নষ্ট হয়েছে। নাচোল উপজেলার হাঁকরইল গ্রামের কৃষক সাজাহান আলী জানান, এনজিওতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তিনি ৬ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেন। তিনি আশা করেছিলেন এ বছর বিঘাপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ মণ ফলন হবে। আর মাত্র ৪-৫ দিন পরেই ধান কাটতেন তিনি। কিন্তু তার আগেই ঝড় ও বৃষ্টিতে সব ধান মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। ফলে ফলন বিঘাপ্রতি ৪/৫ মণ কম হবে বলে মনে করছেন তিনি।

একই অবস্থা হাঁকরইল গ্রামের হরেক মালের ক্ষুদ্র ব্যবসা বন্ধ রেখে কৃৃষিকাজ শুরু করা জাহাঙ্গীর আলমেরও। তিনি এনজিও থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে সাড়ে ৭ বিঘা চুক্তিতে অন্যের জমিতে আবাদ করছিলেন। কিন্তু ঝড়বৃষ্টিতে তার ৭ বিঘা ধান মাটিতে হেলে পড়েছে।

এদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরও উপজেলা কৃষি অফিসের কোনো কর্মকর্তাকে মাঠে দেখা যায়নি বলে কৃষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার বুলবুল আহাম্মেদ জানান, গতকাল প্রায় ২০০ জন কৃষকের মাঝে প্রণোদনার সার ও ধানবীজ বিতরণের দিন ধার্য ছিল। তাই তিনি ও তার উপ-সহকারীরা মাঠে যেতে পারেননি।

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে কালবৈশাখী ঝড়ে ফসল-ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গাছপালাসহ বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রচন্ড দাবদাহের পর বুধবার রাত ৮টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা সিরাজগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে ঝড়ের সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি বয়ে যায়। ঝড়ে মহাসড়কের পাসসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তিগত প্রায় কয়েক হাজার গাছ পড়ে গেছে। গাছের আম ঝড়ে গেছে। বিদ্যুতের ট্রান্সফরমারসহ বিদ্যুৎ লাইন লন্ডভন্ড হয়ে পড়ায় প্রায় ২০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। কামারখন্দ উপজেলার কয়েলগাতী গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে একটি মুরগি খামার গড়েছিলাম। কালবৈশাখী ঝড়ে খামার লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। প্রায় ২ হাজার বাচ্চা মারা গেছে। একই উপজেলার কাজিপুরা গ্রামের আবুল কালাম আজাদ জানান, ঝড়ে তার অটো রাইস মিল তছনছ হয়ে প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সদর উপজেলার হোসেনপুর মহল্লার সিমেন্ট ব্যবসায়ী জানান, ঝড়ে গোডাউন চাল উড়ে গেছে। আর বৃষ্টিতে প্রায় ৪ হাজার বস্তা সিমেন্ট পানিতে মিশে একাকার হয়ে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিচালক আবু হানিফ জানান, ঝড়ে ১ হাজার ২৬ হেক্টর জমির ফসল হেলে পড়েছে। এতে কৃষকের চরম ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর