শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

লকডাউনেও অস্বাস্থ্যকর ঢাকার বাতাস

গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও সহনীয় মাত্রার চেয়ে ৭ গুণ ক্ষতিকর বস্তুকণা ঢাকার বাতাসে। দূষিত শহরের তালিকায় এখনো সামনের সারিতে

শামীম আহমেদ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান লকডাউনে বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন, সরকারি-বেসরকারি অফিস ও শপিং মল। তার পরও বিষাক্ত ঢাকার বাতাস। গতকাল বিকাল ৩টায় ঢাকার প্রতি ঘনমিটার বাতাসে প্রাণঘাতী অতিসূক্ষ্ম বস্তুকণা (পিএম ২.৫) ছিল ৭১ মাইক্রোগ্রাম, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া সীমার চেয়ে সাতগুণ বেশি। ঢাকার বায়ুমান সূচক (একিউআই) ছিল ১৫৯, যা অস্বাস্থ্যকর হিসেবে ধরা হয়। এ সময় বিশ্বের শীর্ষ দূষিত শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা ছিল দ্বিতীয়।

বৈশ্বিকভাবে বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের প্রতিবেদনে এমন চিত্র দেখা গেছে। গতকাল বিকাল ৩টায় সংস্থাটির রিয়েলটাইম প্রতিবেদনে ১৬৬ একিউআই স্কোর নিয়ে দূষিত শহরের শীর্ষে ছিল কুয়েত সিটি। ১৫৯ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় ছিল ঢাকা। বিকাল ৪টায় আবার ১৬৪ স্কোর নিয়ে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে উঠে আসে চীনের সেনিয়াং। ১৬২ স্কোর নিয়ে কুয়েত সিটি দ্বিতীয়, ১৫৫ স্কোর নিয়ে ঢাকা তৃতীয়, ১৩৮ স্কোর নিয়ে ভারতের কলকাতা চতুর্থ দূষিত শহরের তালিকায় নাম লেখায়। তবে দূষণে চলতি বছর একাধিকবার শীর্ষ নগরী হিসেবে সংবাদের শিরোনামে আসা দিল্লির অবস্থান ছিল এ সময় ১৪তম। একিউআই স্কোর ছিল ৯৯, যা সহনীয় দূষণ হিসেবে ধরা হয়। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মান অনুযায়ী, প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ১০ মাইক্রোগ্রাম পিএম ২.৫ থাকলে তাকে সহনীয় বলা যেতে পারে। সেখানে দেশে গতকাল সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রতি ঘনমিটারে পিএম ২.৫ ছিল ৬১ থেকে ৭১ মাইক্রোগ্রাম। একিউআই স্কোর ছিল ১৫১ থেকে ১৬৭। একিউআই স্কোর ৫০-এর নিচে থাকলে তাকে স্বাস্থ্যকর, ৫১ থেকে ১০০ পর্যন্ত সহনীয়, ১০১ থেকে ১৫০ পর্যন্ত স্পর্শকাতর কয়েক শ্রেণির মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর, ২০১ থেকে ৩০০ পর্যন্ত খুবই অস্বাস্থ্যকর ও ৩০১ থেকে ৫০০ পর্যন্ত বিপজ্জনক হিসেবে ধরা হয়। সেই হিসেবে সকাল ১০টা থেকে টানা সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকার বাতাস ছিল অস্বাস্থ্যকর। এতে ফুসফুসে ক্যান্সার, কিডনি বিকলসহ নানা প্রাণঘাতী রোগ বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এয়ার ভিজ্যুয়ালের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২১ এপ্রিল দিবাগত রাত ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত ঢাকার বাতাসের দূষণমাত্রা সহনীয় (একিউআই স্কোর ১০০ এর নিচে) পর্যায়ে থাকলেও রাত ৩টায় স্কোর হয় ১৫৭, যা অস্বাস্থ্যকর। রাত ৪টায় দূষণ কিছুটা কমে, ৫টায় আবার বেড়ে। ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত দূষণমাত্রা কম থাকলেও ১০টায় আবার তা অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে চলে যায়। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, যানবাহনের ধোঁয়াই এখন রাজধানীর বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। বায়ুদূষণের অর্ধেক (৫০%) দায় তরল জ্বালানি পোড়ানোর মাধ্যমে তৈরি ধোঁয়ার। এ ছাড়া ৪০ ভাগ দূষণের উৎস খড়, কাঠ, তুষের মতো জৈব বস্তুর ধোঁয়া ও সূক্ষ্ম বস্তুকণা। বাকি ১০ শতাংশ দূষিত বস্তুকণা আসছে ইটভাটায় কয়লা পোড়ানোর ধোঁয়া থেকে। তবে বর্তমানে গণপরিবহন বন্ধ থাকার পরও অস্বাস্থ্যকর ঢাকার বাতাস। এ ব্যাপারে ওই গবেষণার নেতৃত্বদানকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও দূষণের অন্য উৎসগুলো চালু থাকায় ঢাকার বাতাস এখনো অস্বাস্থ্যকর। তবে দূষণ এখন অনেক কম। বলা যায় অর্ধেকের নিচে নেমেছে। মূলত, গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও ঢাকার বাইরে থেকে পণ্যবাহী ভারী যানবাহন রাতে ঢাকায় ঢুকছে। রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি কমলেও বন্ধ হয়নি। এ ছাড়া শিল্পকারখানা চলছে। মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ চলছে। সেখানে ধূলি নিয়ন্ত্রণ ঠিকভাবে হচ্ছে না। রাজধানীর অনেক স্থানে দূষণের জন্য ৬০-৭০ ভাগ দায়ী ধূলি। লকডাউনে ঘরে ঘরে রান্না বেড়েছে। এসব কারণে ঢাকার বাতাস এখনো বিষাক্ত। তবে বায়ুকে বিশুদ্ধ করতে শিল্পকারখানা বা বিভিন্ন প্রকল্প তো বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। এগুলো চলবে, শুধু দূষণ বন্ধের ব্যবস্থা করতে ুহবে। অনেক শিল্পোন্নত দেশে আমাদের চেয়ে দূষণ কম।

সর্বশেষ খবর