সোমবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে দিকনির্দেশনা চাই

মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন

অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে দিকনির্দেশনা চাই

করোনাভাইরাস সংকট উত্তরণে আসন্ন বাজেটে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের দিকনির্দেশনা চান বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলপারস অ্যাসোসিয়েশন-বিএলডিএ মহাসচিব মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন। তিনি বলেছেন, সংকট উত্তরণে কর্মসংস্থান অবারিত করতে কর ও ভ্যাটে ছাড় দিতে হবে। দেশের কর ও ভ্যাট ব্যবস্থা সহজ করতে হবে। চলমান বিপর্যয় থেকে উত্তরণ ঘটাতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এবারের বাজেটে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা চাই। পাশাপাশি আবাসন শিল্পে বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা অব্যাহত রাখার দাবি করছি। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন বিএলডিএ মহাসচিব মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন। তিনি বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের আবাসন শিল্প খাত নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন। করোনা মহামারী সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দা, আকাশচুম্বী জমির মূল্য ও জমির অপ্রতুলতা, বিভিন্ন ব্যাংক ও অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের ঋণপ্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে এ খাতে প্রচন্ড পরিমাণ তারল্য সংকট এবং সর্বোপরি রেজিস্ট্রেশন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ফি ও করের উচ্চহারের কারণে অমিত সম্ভাবনাময় আবাসন খাতটি মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এ অবস্থায় সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এই সংকটের উত্তরণ করা অসম্ভব। বিএলডিএ মহাসচিব বলেন, চলতি অর্থবছরের বাজেটে আয়কর অধ্যাদেশ-১৯৮৪ এর ১৯বি ধারা পুনঃপ্রবর্তনের মাধ্যমে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনা প্রশ্নে আবাসন খাত ও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে। আবাসন খাতের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৫ থেকে ১০ বছরের জন্য প্লট ও ফ্ল্যাটে বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা বহাল রাখা প্রয়োজন। কিন্তু আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ধারা ১৯বি ধারায় প্রদত্ত ইনডেমেনিটি বা দায়মুক্তির সুযোগ বাতিল করা হলে পুনরায় বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচারের আশঙ্কা দেখা দেবে। বিভিন্ন দেশে সেকেন্ড হোম গ্রহণের সুযোগ থাকায় অপ্রদর্শিত অর্থ বিদেশে চলে যাবে। কারণ, ওইসব দেশে প্লট ও ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে অর্থের উৎস জানতে চাওয়া হয় না। চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ আবাসন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ থাকার কারণে বিশাল অঙ্কের অপ্রদর্শিত অর্থ দেশে বিনিয়োগ হয়েছে। সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন বলেন, আমরা রেজিস্ট্রেশন ফি ও করহার কমিয়ে ৭ শতাংশ নির্ধারণের সুপারিশ করছি। এর মধ্যে গেইন ট্যাক্স ২ শতাংশ, স্ট্যাম্প ফি ১ দশমিক ৫২ শতাংশ, রেজিস্ট্রেশন ফি ১২ শতাংশ,  স্থানীয় সরকার কর ১২ শতাংশ, মূল্য সংযোজন কর ১ দশমিক ৫ শতাংশ হারে হবে। কারণ, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত ব্যয় ১০ থেকে সাড়ে ১২ শতাংশ হওয়ায় ক্রেতারা প্রকৃত ক্রয়মূল্যে রেজিস্ট্রেশন করার ক্ষেত্রে প্রায়ই অনীহা পোষণ করছেন। ফলে সরকার এই খাত থেকে যথাযথ রাজস্ব পাচ্ছে না। সুতরাং অবিলম্বে রেজিস্ট্রেশন ব্যয় কমানো প্রয়োজন। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে রেজিস্ট্রেশন বাবদ ব্যয় ৪ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশের বেশি নয়।

তিনি বলেন, দ্বিতীয়বার প্লট, ফ্ল্যাট ক্রয় ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ফি ও কর বাবদ প্রথমবার প্লট, ফ্ল্যাট ক্রয়, বিক্রয়ের জন্য প্রস্তাবিত ৭ শতাংশের অর্ধেক অর্থাৎ সাড়ে ৩ শতাংশ নির্ধারণ করা প্রয়োজন। যেসব জমি বা প্লট প্রথম বিক্রয়ের পর পাঁচ বছরের মধ্যে পুনরায় বিক্রয় হবে সেসব প্লট ও ফ্ল্যাট বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সেকেন্ডারি বাজার ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন। এতে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।

বিএলডিএ মহাসচিব বলেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএর আওতাভুক্ত ও বহিভর্‚ত এলাকায় সব জমির ক্ষেত্রে আরোপিত কর প্রত্যাহার করা হোক। রাজউক ও সিডিএর আওতাধীন ও আওতাবহিভর্‚ত এলাকায় জমির ক্ষেত্রে ৪ শতাংশ ও ৩ শতাংশ হারে কর নির্ধারণের ফলে এই খাতে বিনিয়োগে ক্রেতারা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। এই কর প্রত্যাহার না করা হলে আবাসন শিল্পে বিরাজমান সংকট কাটিয়ে ওঠা দুরূহ হয়ে পড়বে। এ ছাড়া এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরও ৪৫৮টি শিল্প উপ-খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন বলেন, ঢাকা শহরের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ হ্রাসকল্পে ঢাকার বাইরে আবাসন শিল্পকে উৎসাহিত করার জন্য  মেট্রোপলিটন এলাকায় পাঁচ বছর এবং অন্যান্য পৌর এলাকায় ১০ বছর ‘ট্যাক্স হলিডে’ ব্যবস্থা প্রচলন করা হোক। অন্যান্য শিল্পের মতো আবাসন শিল্পে ‘ট্যাক্স হলিডে’ ব্যবস্থা প্রচলন করলে তা এই শিল্পের উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনা হিসেবে কাজ করবে। পাশাপাশি ঢাকা শহরের বিশাল জনসংখ্যার ওপর চাপ কমবে। মেট্রোপলিটন এলাকায় উন্নয়ন ধারা যেমন অব্যাহত থাকবে তেমনি অন্যান্য পৌর এলাকাতেও নগরায়ণের মাধ্যমে আবাসন নিশ্চিত করা যাবে। এর ফলে দেশের পৌর এলাকায় অন্যান্য শিল্পের বিকাশ ঘটবে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম প্রসার লাভ করবে।

সর্বশেষ খবর