সোমবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

উৎসে কর বাতিল করা হোক

প্রকৌশলী সফিকুল হক তালুকদার

উৎসে কর বাতিল করা হোক

আসছে বাজেটে নির্মাণ শিল্পের ওপর উৎসে কর বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন, কনস্ট্রাকশন খাতের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি- বিএসিআই সভাপতি প্রকৌশলী সফিকুল হক তালুকদার। তিনি বলেছেন, জাতীয় অর্থনীতিতে কনস্ট্রাকশন শিল্প চতুর্থ বৃহত্তম রাজস্ব প্রদানকারী খাত হিসেবে অবদান রাখছে। কিন্তু এই শিল্পের বিকাশে উদ্যোক্তারা বর্তমানে তেমন কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। এমন প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাজারে রড ও পাথরের দাম বেড়ে যাওয়ায় নির্মাণ শিল্পে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন বিএসিআই সভাপতি প্রকৌশলী সফিকুল হক তালুকদার। তিনি বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরে বলেন, সাব-কন্ট্রাক্টর ও সরবরাহকারীদের কাছ থেকে উৎসে কর কর্তন সম্পূর্ণরূপে বাতিল করা হোক। কারণ, ঠিকাদারদের পক্ষে সরবরাহকারীদের উৎসে কর কর্তন ও জমাদানের বিষয়টি নিশ্চিত করা বেশ কঠিন। তাই উৎসে কর নির্মাণশিল্প থেকে বাতিল করা হোক। ভ্যাট সংক্রান্ত প্রস্তাবে তিনি বলেন, কোন অর্থবছরে সম্পাদিত কাজের জন্য সেই বছরের কর ও ভ্যাট কাজ শেষ করা পর্যন্ত কার্যকর রাখা হোক। কারণ, আমরা লক্ষ্য করছি যে, প্রতিটি অর্থবছরেই কর ও ভ্যাট পুনর্নির্ধারিত হয়। কিন্তু অর্থবছর শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই নতুন হারে কর ও ভ্যাট কার্যকর হয়। কিন্তু বর্তমানে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় কনস্ট্রাকশন কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই ঠিকাদারি চুক্তি করার সময় প্রচলিত কর ও ভ্যাট কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত চালু রাখার দাবি করছি।  বিএসিআই সভাপতি অবকাঠামো নির্মাণ খাতের বিদ্যমান সমস্যা তুলে ধরে বলেন, মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বে আমদানি- রপ্তানি বাণিজ্যে চরম স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বিশ্ববাজারে রডের কাঁচামালের দাম গত দুই মাসে প্রতিটনে বেড়েছে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা। সিমেন্ট উৎপাদনের পাঁচটি কাঁচামালেই গত বছর থেকে আমদানি খরচ বেড়েছে। প্রকৌশলী সফিকুল হক তালুকদার বলেন, সরকার এখনই পদক্ষেপ না নিলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে অবকাঠামো নির্মাণ খাত। দেশের অধিকাংশ অবকাঠামো প্রকল্পই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। ঠিকাদারেরা সঠিক সময়ে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে অনেকেই দেউলিয়া হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে প্রকল্পগুলোর কাজ সমাপ্ত না হলে, খরচ বাড়বে মারাত্মকভাবে। এতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও হুমকির মুখে পড়তে পারে। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নের মূল উপাদান এমএস রড ও সিমেন্টের দাম বাড়ছে। আরও বৃদ্ধির প্রবণতা রয়েছে। ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরে রডের মূল্য প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্ক্র্যাপ পাওয়া যাচ্ছে না। বিলেট উৎপাদন কম। ফলে বিশ্ব বাজারে দাম বাড়ছে। বর্তমানে রড টনপ্রতি ৭০ হাজার টাকা থেকে ৭২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা নভেম্বরে ছিল ৫৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ, ৪০ শতাংশই দাম বেশি। একই সঙ্গে সিমেন্টের মূল্য প্রতিটনে ১০০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা বেড়েছে। যা প্রায় নভেম্বরের বাজার মূল্যের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি। এই অবস্থায় আমদানির মাধ্যমে সমস্যার সাময়িক সমাধান সম্ভব। কিন্তু এমএস রড আমদানিতে ট্যারিফ ভেল্যু ৩৪ হাজার টাকা এবং তার ওপর ৮৯ শতাংশ শুল্ক নির্ধারিত থাকায় ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে। বিএসিআই সভাপতি বলেন, বর্তমান সরকার দেশের উন্নয়ন বান্ধব সরকার। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করা ও দেশকে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করাতে সরকার দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের নির্মাণ খাত প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রায় ৫০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান করে থাকে। করোনার কারণে প্রায় বিপন্ন এ শিল্পকে বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়ে সরকার সহায়তা করছে। কিন্তু আমরা সরকারের কাছে নীতি সহায়তা চাই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর