সোমবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

রাঙামাটির কোমর তাঁত

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

রাঙামাটির কোমর তাঁত

তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীদের প্রধান পোশাক ‘পিনন হাদি’। স্থানীয় হাট-বাজার-মার্কেট ছাড়াও সারা দেশে ব্যাপক জনপ্রিয় এই পোশাক। কিন্তু করোনাভাইরাস এখন রীতিমতো চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে এর বাণিজ্যিক কারবারে। লকডাউনসহ অন্যান্য কারণেও বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে গভীর সংকটে পড়েছেন পাহাড়ের কোমর তাঁতিরা। রেশমি সুতায় তৈরি পিনন হাদি দেখতে খুবই আকর্ষণীয়। তাই শুধু পাহাড়ি নারী নয়, বাঙালি নারীরাও শখের বসে পরিধান করে থাকেন এ বিশেষ বস্ত্র। এ কারণেই বাণিজিকভাবে প্রসারিত হতে বেশি সময় লাগেনি কোমর তাঁতে তৈরি পিনন হাদির। এরপর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীরা কোমর তাঁতে গড়ে তুলেছেন বড় ধরনের কর্মসংস্থান। ঘরে বসেই প্রসারিত করেছেন নিজেদের বস্ত্রশিল্পের ব্যবসা। হাট-বাজার আর মার্কেটগুলোতেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল এ বস্ত্র। এটাই সবার কাছে ‘পিনন হাদি’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। এ বস্ত্র পাহাড়ের গন্ডি পেরিয়ে রপ্তানি হয় দেশের বিভিন্ন জেলায়। এ বস্ত্রের প্রতি বেশি আকর্ষণ পর্যটকদের। তাদের কাছে এর চাহিদা অনেক। যে কারণে প্রস্তুতকারীদের লাভও হচ্ছিল অনেক বেশি। কিন্তু এখন খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের কারণে কোমর তাঁতিদের ব্যবসা আর জমজমাট নেই। কাপড় বিক্রি না হওয়ায় তাঁতিরা এখন বড় রকমের সংকটে। এ অবস্থায় রাঙামাটির রাঙাপানি এলাকার বাসিন্দা পলাশ কুসুম চাকমা জানান, রাঙামাটির রাঙাপনির এলাকার ঘরে ঘরে গড়ে উঠেছে কোমর তাঁতের বস্ত্রশিল্প। এ ছাড়া রাঙামাটির প্রায় পাহাড়ি পল্লীতেই নারীরা এ কাজে নিয়োজিত। অবসর সময়ে কোমর তাঁতে তারা তৈরি করেন নানা ধরনের বস্ত্র। বাণিজিকভাবেও তারা এ কাজ করে দারুণ সুফল পেয়ে আসছিলেন। কিন্তু এখন করোনার কারণে এসব বস্ত্র আর বাজারজাত করা যাচ্ছে না। তাই তৈরি বস্ত্র নিয়ে বিপাকে তাঁতিরা।

রাঙাপানি এলাকার কোমর তাঁতশিল্পী বেলপুদি চাকমা বলেন, এক জোরা পিনন হাদি তৈরি করতে ১৫ দিন সময় লাগে। এ কাজ পুরোপুরি হাতের ওপর নির্ভর করে। কোনো মেশিনের মাধ্যমে এ কাজ করা হয় না। তাই সময় একটু বেশি লাগে। এ বস্ত্র তৈরি করতে প্রথমে রদং করতে হয়। অর্থাৎ বাঁশের গায়ে ছিদ্র করতে হয়। ছিদ্রের সঙ্গে ছোট ছোট বাঁশের কঞ্চি বসিয়ে মিলিয়ে নিতে হয়। চরকিতে প্রস্তুত রাখা সুতা গাঁথা হয় সেখানে। পরে বেইন অর্থাৎ কোমর তাঁত টানা হয়। নকশা অনুযায়ী বাজার থেকে কিনে আনতে হয় হরেক রঙের রেশমি সুতা। সে সুতা দিয়ে তৈরি করা হয় পিনন হাদি।

কোমর তাঁতি শ্যামলি চাকমা বলেন, চাকমা ভাষায় এটাকে পিনন হাদি বলে। বাজারে এ পিনন হাদির অনেক চাহিদা। এক জোড়া রেশমি সুতার তৈরি পিনন হাদি ৮ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। তবে টানা লক ডাউন আর করোনার কারণে সব থমকে গেছে। এখন আমরা অনেকটা বেকার। দুঃসময়ের দিন পার করছি আমরা। স্থানীয় বনরূপা বাজারের পিনন হাদি হরিপদ চাকমা জানান, এখন আগের মতো পিনন হাদির ব্যবসা নেই। ক্রেতা নেই। তাই লাভ তো দূরের কথা, কাপড়ই বিক্রি হচ্ছে না। অভাবের কারণে অনেকে সুতাই কিনতে পারছেন না।

ফলে কাপড় উৎপাদনও হুমকির মুখে পড়েছে। তার মতে, এ শিল্পকে রক্ষা করতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ প্রয়োজন। সরকারকে এজন্য নজর দিতে হবে। সহায়তার হাত বাড়ালে পাহাড়ের বাসিন্দারা অর্থনৈতিকভাবে বিশাল অবস্থান তৈরি করতে পারবেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর