সোমবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা
মামুনুলকান্ডকে ঘিরে কলহ তীব্র

সোনারগাঁয়ে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ মুখোমুখি

মুহাম্মদ আল আমিন, সোনারগাঁ

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে হেফাজত নেতা মামুনুল হক-কান্ডকে কেন্দ্র করে ১৪-দলীয় জোটভুক্ত আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে মনোমালিন্য তীব্রতর হয়ে উঠছে। দল দুটি এরই মধ্যে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। দুই দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চলছে বাকবিতন্ডা। চলছে নেতা-কর্মীদের ধরপাকড়। জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের শীর্ষ নেতারা।

জাপা নেতাদের অভিযোগ : প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে এবং বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ জাতীয় পার্টির ওপর পুরো দায় চাপাতে চাইছে। ওই ঘটনায় দলটির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করা হয়েছে। আরও মামলা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যে গায়েবি মামলাও আছে। রয়্যাল রিসোর্টে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক-কান্ডে রয়্যাল রিসোর্ট, আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর ভাঙচুর করায় সোনারগাঁ থানায় ৭টি মামলা করা হয়। সে মামলায় উপজেলা জাপার সভাপতি ও শম্ভুপুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রউফকে আটক করা হয়েছে। এদিকে সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলেছেন, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলাম আন্দোলনের নামে তান্ডব চালিয়ে ছিল। তখন অনেক মামলা হলেও সোনারগাঁয়ের তদানীন্তন সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত মাওলানাদের সঙ্গে সুসম্পর্কবশত হেফাজত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে একটা মামলাও হতে দেননি। আবদল্লাহ আল কায়সার বলেন, আমরা আলেমদের ভালোবাসি-ভালোবাসব কিন্তু আন্দোলনের নামে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুরের নামে কোনো সহিংসতা সহ্য করা হবে না। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বলেন, হেফাজতে ইসলাম যে তান্ডব চালিয়েছে, আমরা মনে করি এটা পরিকল্পিত। হেফাজতে ইসলামকে সামনে রেখে জামায়াত-বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসে হামলা করেছে। তারা হেফাজতের কাঁধে বন্দুক রেখে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। একজন ইমানদার আরেকজন ইমানদারের ওপর হামলা করতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করতে পারি না। যখন আমরা প্রতিবাদ সভা করার সিদ্ধান্ত নিই তখন অনেক লোক বলেছে হেফাজত আমাদের হামলা করতে পারে। গত ৩ এপ্রিল মাওলানা মামুনুল হককে স্ত্রীসহ অবরুদ্ধ করা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। ঘটনার পর একটি গোষ্ঠী রিসোর্ট, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু, নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সোহাগ রনির বাড়িঘর এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুরসহ মহাসড়কে অগ্নিসংযোগ করে ব্যাপক তান্ডব চালানো হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি এবং ক্ষতিগ্রস্তরা বাদী হয়ে আরও পাঁচটি মামলা করেন। এই আট মামলায় ৫৪৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১ হাজার ৮০০ জনকে আসামি করা হয়। এসব মামলায় এ পর্যন্ত ৬৩ আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জাতীয় পার্টির নেতাদের অভিযোগ, দলের সোনারগাঁ উপজেলার সাধারণ সম্পাদক নাইম ইকবাল, পৌরসভা সভাপতি এম এ জামান, সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম সফি, জাতীয় ছাত্রসমাজের উপজেলা সভাপতি ফজলুল হক মাস্টার, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাহমুদ হোসেনসহ দলটির ৮৭ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে করা মামলায় জাতীয় পার্টির স্থানীয় তিন নেতা আসামি। বাকি পাঁচটি মামলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশের কয়েকজন নেতার পক্ষ থেকে দায়ের করা। যেসব মামলার বেশির ভাগ আসামি জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা। সোনারগাঁ উপজেলার সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্্বায়ক আবদুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত বলেন, হেফাজতের নেতা মাওলানা মামুনুল হক ইস্যুতে সৃষ্ট তান্ডব ও ভাঙচুরে স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরাই হামলা চালিয়েছে। আমি মনে করি এটা পরিকল্পিত। হেফাজতে ইসলামকে সামনে রেখে জামায়ত, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসে হামলা করেছে। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সোনারগাঁয়ের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, রিসোর্ট কান্ডের সময় দলের নেতা-কর্মীরা ঘটনার আশপাশেও ছিল না। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে আওয়ামী লীগের একটি অংশ জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের দমন-পীড়নের চেষ্টা করছে। এটা সত্যিই দুঃখজনক। তিনি বলেন, বিদেশে ছিলেন দলের এমন কর্মীকেও আসামি করা হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাসায় আইসোলেশনে ছিলেন এমন মানুষও এই মামলার আসামি। এর মানে আসল অপরাধীদের আড়াল করতে এবং ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের জড়ানো হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর