মঙ্গলবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

জিডিপি টার্গেট কমাল সরকার

আগামী অর্থবছরে বাজেটে ভ্যাকসিনের জন্য বরাদ্দ ১০ হাজার কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৭.২ শতাংশ

মানিক মুনতাসির

জিডিপি টার্গেট কমাল সরকার

মহামারী করোনাভাইরাসের আঘাতে ধসে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ২০২০ সালের শুরুতে প্রথম ধাক্কায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকার কয়েকটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল, যা এখনো চলমান। এসব কর্মসূচি আগামী বছরের বাজেটেও চলমান থাকবে। এদিকে করোনার ধাক্কায় দেশের সব ধরনের উৎপাদন কমেছে। আয় কমেছে সরকারের এবং বেশির ভাগ মানুষের। অথচ বেড়েছে ব্যয়। যার ফলে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) টার্গেট কমিয়ে আনছে সরকার। চলতি বছরের বাজেটে জিডিপির টার্গেট ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। আসছে বাজেটে সেটিকে কমিয়ে ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। আর অর্থমন্ত্রী বলছেন, এবারের বাজেট হবে জীবন-জীবিকা সুরক্ষার বাজেট। এ জন্য বাজেটে সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে কৃষি, খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা খাত। গতকাল ভার্চুয়ালি জুম প্ল্যাটফরমে অনুষ্ঠিত জাতীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা এবং আর্থিক ও আর্থিক মুদ্রা বিনিময় হার-সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভায় এসব বিষয়ে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থ বিভাগের একটি বিশ্বস্ত সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বৈঠকে অর্থ সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানায়, করোনা মহামারী বিবেচনায় জনস্বাস্থ্যকে অধিক গুরুত্ব দিতে গিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেটেও করোনার ভ্যাকসিন কেনাসহ করোনা মোকাবিলা খাতে বরাদ্দ থাকবে ১০ হাজার কোটি টাকা। আসছে বছরে মূল্যস্ফীতির চাপ ৫ দশমিক ৩ শতাংশে ধরে রাখার পরিকল্পনা করছে সরকার। আর সরকারের আয় কমে যাওয়া বাজেট ঘাটতিতে সৃষ্টি হবে নতুন রেকর্ড। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বছর বাজেট ঘাটতি দাঁড়াবে মোট জিডিপির ৬ শতাংশ। মহামারী করোনায় দেশের মানুষকে সুরক্ষা দিতে কৃষি, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রণয়ন করা হচ্ছে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট। আসছে এ বাজেটে করোনায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য থাকবে বিশেষ কর্মসূচি। স্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও থাকবে বিশেষ উদ্যোগ। এ ছাড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকারের নেওয়া কর্মসূচিগুলোও সচল থাকবে আগামী বাজেটে। এর আগে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার আগেই একবার বলেছিলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের বেশি হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোও (বিবিএস) সাময়িক হিসাব দিয়ে জানিয়েছিল, এই হার ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। সে অনুযায়ী চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৪ বা ৪ শতাংশের খানিক বেশির কথা বলা হতে পারে, মূল বাজেটে যা ধরা হয়েছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ।

এদিকে করোনার কারণে চলছে এনবিআরের রাজস্ব আয়ে ধীরগতি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিও (এডিপি) হোঁচট খেয়েছে। বেড়েছে সরকারের ব্যয়। ফলে আগামী বছরের জন্য টার্গেট ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের। আর আসছে বাজেটের মূল আকার হতে পারে ৬ লাখ কোটি টাকার মতো। সে হিসাবে বছর শেষে বাজেট ঘাটতি দাঁড়াতে পারে ২ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি, যা হবে মোট জিডিপির ৬ শতাংশ। অবশ্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) গাইডলাইন অনুযায়ী বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখার কথা।

বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৩ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সরকার নতুন বাজেটের আকার ৬ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা ধরে বাজেট প্রণয়নের কাজ করছে। তবে এটি এখনো চূড়ান্ত ফিগার নয়। শেষ মুহূর্তে এসে তা বাড়তে-কমতে পারে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।

সর্বশেষ খবর