মঙ্গলবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

রঙিন পাখি লাল মাথা কুচকুচি

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

রঙিন পাখি লাল মাথা কুচকুচি

লাল মাথা কুচকুচি খুব সুন্দর একটি রঙিন পাখি। এক দেখাতেই যে কেউ এই পাখির প্রেমে পড়ে যান। এরা লাজুক পাখি। বনে মানুষের উপস্থিতি টের পেলে নিজেদের গাছের পাতায় আড়াল করে নেয়। নতুবা বনের ঝোপ-জঙ্গলে লুকিয়ে যায়। এ জন্য এদের ছবি তোলাও কষ্টসাধ্য। অনেক ফটোগ্রাফার প্রথম দেখায় এই পাখির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ক্যামেরার ক্লিক করতে ভুলে যান। আর যখন মনের ভ্রম ভাঙে ততক্ষণে পাখি লুকিয়ে যায়। তখন দ্বিতীয় বার দেখার প্রতিক্ষায় থাকতে হয়। এটি আমাদের দেশের আবাসিক পাখি। তবে দুর্লভ। তাই এদের দেখা পাওয়াও দুষ্কর। ইংরেজি নাম  Red-headed Trogon. আর বৈজ্ঞানিক নাম Harpactes erythrocephalus. এরা ট্রোগনিডি পরিবারের একমাত্র সদস্য। অঞ্চল ভেদে এদের কুচকুচ বা কুচকুচিয়া নামেও ডাকা হয়। চলতি বছরের মার্চ মাসে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট এলাকার কালেঙ্গা বন থেকে এই পাখির ছবি তুলেছেন বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী শাহ মো. হামীম। হামীম জানান, প্রথম দিন তারা এই পাখিটির ছবি তুলতে পারেননি। চোখের নিমেষেই লুকিয়ে যায়। একদিন অপেক্ষা করে পরের দিন তুলতে হয়েছে।

পাখি বিশারদরা জানান, এই পাখির দৈর্ঘ্য ৩৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। পুরুষ থেকে স্ত্রী পাখির চেহারা কিছুটা ভিন্ন। পুরুষ কুচকুচির মাথা, ঘাড়, গলা ও বুক সিঁদুরে লাল। পেটের অংশ উজ্জ্বল গোলাপি। বুকের লাল ও গোলাপির মাঝখানে একটি সাদা অর্ধবলয় রয়েছে। থরে থরে সাজানো লেজ ক্রমান্বয়ে ছোট থেকে বড় পালকে গড়া। পিঠ থেকে  লেজ হালকা দারুচিনি বা মরচে-বাদামি রঙের। ডানার ঢাকনি-পালক খুবই মিহি সাদা ও ধূসর রেখা খচিত। ডানা মূলত কালো, তবে পালকের মাঝ বরাবর কিছুটা অংশ সাদাটে। লম্বা লেজের শেষ প্রান্ত কালো। চোখের চারপাশ নীলাভ-বেগুনি। চোখের ঠোঁটের রংও  বেগুনি-নীল। আর স্ত্রী কুচকুচির সারা শরীর দারুচিনি রঙের হয়। এ ছাড়া শরীরের অন্যান্য অংশের গঠন ও রং একই রকম। শুধু অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির বুক, বগল ও তলপেট পীতাভ-সাদা হয়ে থাকে। এরা মিশ্র চিরসবুজ বনে বিচরণ করে। কখনো একা কখনোবা জোড়ায় জোড়ায় থাকে। উড়ন্ত প্রজাপতি, মথ ও শুঁয়োপোকা শিকার করে খায়। আর খাবারের অভাব হলে মাটিতে নেমে বুনো রসালো ফল ও বাঁশের কচি পাতা খায়। যার জন্য এদের দ্বিপদ নাম ‘ফলচোর’। এদের প্রজননকাল এপ্রিল থেকে জুলাই মাস। এরা ঘন বনে গাছের  কোটরে কিংবা কাঠঠোকরার শূন্য গর্তে বাসা করে। ডিম দেয় ৩ থেকে ৪টি। ডিমগুলো পীতাভ রঙের।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান জানান, এটি রঙিন পাখি। দেখতে খুব সুন্দর। শুধু বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বনাঞ্চলে এদের দেখা যায়। এর বাইরে এদের দেখা যায় না। আগের তুলনায় এদের সংখ্যা এখন কমছে। বনাঞ্চলে তাদের আবাস স্থল ধ্বংস হওয়ার কারণেই দিনে দিনে এই পাখি দুর্লভ হয়ে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর