বুধবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

খাদ্য ঘাটতি মেটাতে কৃষককে নগদ প্রণোদনা দিন

আবদুল আউয়াল মিন্টু

খাদ্য ঘাটতি মেটাতে কৃষককে নগদ প্রণোদনা দিন

মহামারী করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশে আগামী বছর সম্ভাব্য খাদ্য ঘাটতি মেটাতে ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে সরাসরি কৃষকের হাতে সরকারের নগদ অর্থ প্রণোদনা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু। দেশে কৃষি খাতের অন্যতম এ শিল্পোদ্যোক্তা সরকারকে সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছেন, বিশ্বব্যাপী ধারণা করা হচ্ছে আগামী বছর পুরো বিশ্বে খাদ্য ঘাটতি হবে। এমন সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় কৃষককে নগদ প্রণোদনা দিতে হবে। তা না দিলে কৃষক উৎপাদন বাড়াতে পারবে না। এর সঙ্গে করোনা পরিস্থিতিতে দরকার বিনা বাধায় কৃষকের কাছে সব ধরনের উপকরণ সঠিকভাবে পৌঁছানো। পাশাপাশি কৃষি উপকরণ, সার ও সেচ সহজলভ্য করতে হবে।

গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন আবদুল আউয়াল মিন্টু। তিনি বলেন, করোনা মহামারীতে আসছে বাজেটে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি কাটাতে দেশি উৎপাদনশীল কিছু খাতে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট স্থগিত রাখা উচিত। কারণ বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাওয়ায় রপ্তানি খাতের ব্যবসায়ীরা বড় সমস্যায় আছেন। তাই দেশি পণ্যের চাহিদা বাড়াতে সরকারের সহায়তা প্রয়োজন। যদিও ৫০ শতাংশ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক এই সভাপতি বলেন, ওষুধের ব্যবসা খুব ভালো। কৃষিতেও ভালো করছে বাংলাদেশ। মূল সমস্যা হলো, যারা দেশে পণ্য উৎপাদন করে তাদের বেশির ভাগই দেশে বিক্রি করেন। দেশে উৎপাদনশীল পণ্যের চাহিদা বাড়াতে হবে। এই শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা মনে করেন রপ্তানিনির্ভর ব্যবসায়ীরা বড় সমস্যায় আছেন। কারণ তাদের রপ্তানি নির্ভর করছে আমদানিকারক দেশগুলোর করোনা ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর। এ মুহুর্তে বৈশ্বিক পরিস্থিতি শিগগিরই স্বাভাবিক হওয়ার লক্ষণ দেখছি না। তাই অভ্যন্তরীণ বাজার উন্নয়নে সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য আসছে বাজেটে উৎপাদনশীল খাতে সহায়তা দিতে হবে। তার মতে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে সরকারের উচিত হবে বাজেটে অধিক বেশি প্রণোদনা প্রদান। পাশাপাশি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে কর রেয়াত দিয়ে পণ্যমূল্য কমাতে হবে। দেশি পণ্যের চাহিদা বাড়াতে এ সহায়তা প্রয়োজন। দেশের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ মানুষ কৃষিনির্ভর। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে দেশি পণ্যের উৎপাদনে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া হোক। তিনি বলেন, সরকার-ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ৪ শতাংশ সুদে যে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে তার মেয়াদ কমপক্ষে তিন বছর হওয়া উচিত। উৎপাদনশীল খাতের ব্যবসায়ীদের তাদের মোট মূলধনি বিনিয়োগের ৩০ শতাংশ ঋণ প্রণোদনা হওয়া উচিত। এখনো এ ঋণ সবাই পায়নি। সব ব্যবসায়ী যাতে এ ঋণ পান সেজন্য ব্যাংকগুলোকে বাধ্য করতে হবে। ব্যাংকগুলো যেন ব্যবসায়ীদের ঋণ প্রদান করে সে ধরনের বাধ্যতামূলক উদ্যোগ নিতে হবে। আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা বা এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে বেশ কিছু বাণিজ্য সুবিধা পায় যা আমাদের রপ্তানির ক্ষেত্রে আশীর্বাদ হিসেবে কাজ করে। কিন্তু আগামীতে এ সুবিধা পাওয়া যাবে না। বিষয়টি এ বাজেট তৈরির সময় নীতিনির্ধারকদের বিবেচনায় রাখতে হবে। কারণ বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক পণ্যের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। আরেক গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি খাত ওষুধশিল্পের কাঁচামালেও আমদানিনির্ভর বাংলাদেশ। আগামীতে এ আমদানিনির্ভরতা কমাতে হবে। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে দেশেই কাঁচামাল উৎপাদনের প্রস্তুতি নিতে হবে। তার মতে, এত দিন আমরা বিদেশি ঋণনির্ভর যে বাজেট করতাম সেখান থেকে নিজেদের উত্তরণ ঘটাতে হবে। একই কথা, ঋণ করে ঘি খাওয়ার দিন শেষ হচ্ছে। তাই এখনই বাড়তি সতর্কতামূলক প্রস্তুতি নিতে হবে। অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গণতান্ত্রিক সুশাসন অগ্রাধিকার দিতে হবে নতুন বাজেটে।

সর্বশেষ খবর