বুধবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

বাড়িতে মৃত্যু বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি

হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হচ্ছে অনেকের, ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ৩ হাজার ৩১, মৃত্যু ৭৮

শামীম আহমেদ

বাড়িতে মৃত্যু বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে চিকিৎসাধীন রোগীর মৃত্যুহার গত মার্চের তুলনায় এপ্রিলে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। আবার হাসপাতালে আনার পথেই মৃত্যু হচ্ছে অনেকের। চলতি এপ্রিলের ২৭ দিনে বাড়িতে ৬৫ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে আনার পথে মারা গেছেন ৯ জন। অথচ, গত মার্চে নয়জন, ফেব্রুয়ারিতে সাতজন ও জানুয়ারিতে ১২ জন করোনা রোগী বাড়িতে মারা যান। ওই তিন মাসে হাসপাতালে আনার পথে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণে এমনটা জানা গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৩১ জনের দেহে। এই সময়ে ৭৬ জন হাসপাতালে ও দুজন বাড়িতে মারা গেছেন। এ নিয়ে চলতি এপ্রিলেই মারা গেলেন ২ হাজার ১৮২ জন, যা মাসের হিসাবে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ মৃত্যু। এপ্রিলের আগে সর্বোচ্চ মৃত্যুর মাস ছিল গত বছরের জুলাই। ওই মাসে ১ হাজার ২৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এদিকে মোট মৃত্যু বিবেচনায় চলতি এপ্রিলে বাড়িতে ও পথে মৃত্যুর হার ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ, যা মার্চে ছিল ১ দশমিক ৪১ শতাংশ। এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। পরীক্ষা না করায় জানা যাচ্ছে না তারা করোনা পজিটিভ ছিলেন কিনা। গত এক সপ্তাহে খিলক্ষেতের ডুমনি এলাকায় পাতলা পায়খানা ও দুর্বলতার উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা জানান, পাতলা পায়খানা শুরু হওয়ার এক দিনের মধ্যেই তাদের মৃত্যু হয়। একজন ছিলেন ষাটোর্ধ্ব ও অপরজনের বয়স ৩৫ বছরের মতো। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, দেশে গতকাল পর্যন্ত মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৭ লাখ ৫১ হাজার ৬৫৯ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১১ হাজার ২২৮ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৬ লাখ ৬৬ হাজার ৯২৭ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ৭৩ হাজার ৫০৪ জন করোনা রোগী। এর মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৫ হাজার ১৭৯ জন। বাকি ৬৮ হাজার ৩২৫ জনই বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন, যা চিকিৎসাধীন রোগীর প্রায় ৯৩ ভাগ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাড়িতে চিকিৎসাধীন এই বিপুল সংখ্যক রোগীর অনেকেরই হঠাৎ অবস্থার অবনতি হলে কাছাকাছি আইসিইউ সুবিধা না মেলায় মৃত্যু হচ্ছে। কেউ মারা যাচ্ছেন অক্সিজেন সংকটে। দূরবর্তী হাসপাতালে বা অন্য জেলায় আইসিইউ থাকার খবর মিললেও পথেই হচ্ছে রোগীর মৃত্যু। আবার কোথায় আইসিইউ ফাঁকা আছে তা তাৎক্ষণিক জানার ব্যবস্থা না থাকায় হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরেও মারা যাচ্ছেন অনেকে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২৪ হাজার ২৩৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ১২ দশমিক ৫১ শতাংশ। গত এক দিনে মারা যাওয়া ৭৮ জনের মধ্যে ৪৫ জন ছিলেন পুরুষ ও ৩৩ জন নারী। বয়স বিবেচনায় মৃতদের মধ্যে ৫৩ জন ছিলেন ষাটোর্ধ্ব, ১৫ জন পঞ্চাশোর্ধ্ব, সাতজন চল্লিশোর্ধ্ব ও তিনজনের বয়স ছিল ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। এর মধ্যে ৫০ জন ঢাকা, ১০ জন চট্টগ্রাম, ছয়জন রাজশাহী, ছয়জন খুলনা, তিনজন সিলেট, দুজন ময়মনসিংহ ও একজন বরিশাল বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। কভিড-১৯ রোগীদের জন্য সারা দেশের ১ হাজার ৬৯টি আইসিইউর মধ্যে গতকাল ফাঁকা ছিল ৩৯৯টি। রাজধানীর ১৩টি সরকারি হাসপাতালের ২৪৭টি আইসিইউর মধ্যে ফাঁকা ছিল ৩৯টি ও বেসরকারি হাসপাতালের ৫১২টি আইসিইউর মধ্যে ফাঁকা ছিল ২৭২টি।

সর্বশেষ খবর