শনিবার, ১ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

নারী চক্রের ভয়ংকর ফাঁদ

রাজশাহীতে অর্থ খুইয়েছেন রাজনৈতিক নেতা ব্যাংক কর্মকর্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহী অঞ্চলে প্রতারকের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি বদলেছে প্রতারণার ধরন। ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া ও মোবাইল ফোনে ওতপেতে থাকা প্রতারকরা নানা কৌশলে মানুষের অর্থকড়ি হাতিয়ে নিচ্ছে।

একশ্রেণির অর্থলিপ্সু নারী ও তথাকথিত অনলাইন সাংবাদিকদের সহযোগিতায় এসব প্রতারণা চলেছে। পুলিশের কিছু সদস্যও জড়িত এ চক্রের সঙ্গে। নারীর ফাঁদে ফেলে সর্বস্বান্ত করছে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে। ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিও এসব প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অহরহ। সর্বশেষ নারীর ফাঁদ পেতে বাড়িতে নিয়ে আটকে রেখে চাঁদাবাজির অভিযোগে নগরীর রাজপাড়া থানা পুলিশ নগরের কয়েরদারা থেকে শীর্ষ চাঁদাবাজ রবিউল ইসলাম ও আরিফ হোসেনকে গ্রেফতার করেছে। এক ব্যবসায়ীকে বাড়িতে আটকে রেখে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি, মারধর এবং প্রাণনাশের হুমকির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বুধবার রাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানায়, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার খুদনান্দ গ্রামের মিলন ব্যাপারীর ছেলে আবদুল কাদের বুধবার দুপুরে নগরীর লক্ষীপুর পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসার জন্য আসেন। সেখানে এক নারীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ওই নারীর অনুরোধে আবদুল  কাদের  তার বাড়িতে গেলে তাকে আটকে রেখে এক নারীর সঙ্গে নগ্ন ছবি তোলেন। এরপর তা প্রকাশ করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। আবদুল কাদের চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাকে বেদড়ক মারধর করা হয়। একপর্যায়ে তার কাছে থাকা সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা, বিকাশের সিম ও মানিব্যাগ রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি কাউকে জানালে তাকে জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়। ঘটনার পর আবদুল কাদের রাজপাড়া থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ কয়েরদারা থেকে চাঁদাবাজ রবিউল ইসলাম ও আরিফ হোসেনকে গ্রেফতার করে। ঘটনার অন্যতম আসামি রবিউলের স্ত্রীসহ বাকিদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। গ্রেফতার রবিউল দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের কর্মকান্ডে জড়িত বলে পুলিশ জানিয়েছে। গ্রেফতারদের বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

শুধু তাই নয়, এমন সব প্রতারণার ঘটনা অনেকে সামাজিক অবস্থানের কথা চিন্তা করে চেপে যাচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, অবস্থাটা এমন- যেন প্রতি এক গজ দূরত্বে দাঁড়িয়ে রয়েছেন একেকজন প্রতারক। তারা বলছেন, এদের খপ্পর থেকে দূরে থাকার একমাত্র মাধ্যম সচেতনতা। তথাকথিত সাংবাদিকরাও এ কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। নারীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে তাদের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে ম্যাসেঞ্জারের কথোপকথন কিংবা অডিও রেকর্ড করে তা ভুক্তভোগীদের কাছে পাঠিয়ে সংবাদ প্রকাশের ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা। রাজশাহীতে এমন ঘটনা এখন অহরহ। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নানা কায়দায় প্রতারণার ফাঁদ পাতে এ চক্রের সদস্যরা। সাধারণত সহজ-সরল ও টাকাওয়ালা মানুষই তাদের লক্ষ্য। সুযোগ বুঝেই নানা ছলচাতুরী ও মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে তারা প্রতারণা করছেন। এসব প্রতারণার মধ্যে কম খরচে বিদেশ পাঠানোর প্রলোভন, ঘরে ডেকে এনে জোর করে অশ্লীল ছবি তুলে তা ভাইরাল করার মতো বিচিত্র ও অভিনব কৌশলে প্রতারণা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, যেসব মানুষ ভার্চুয়াল প্রতারণার শিকার হন, তাদের মধ্যে ৭০ ভাগই মামলা করতে চান না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, নানা ধরনের প্রতারণার ফাঁদ পেতে চারদিকে ওতপেতে আছে নানা প্রতারক চক্র। ভয়ংকর সব প্রতারণার অভিযোগ থাকলেও নেই প্রতিকার। মামলার পর গ্রেফতার হলেও দ্রুত জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠছে এ চক্রের সদস্যরা। শুধু রাজশাহীতে শতাধিক প্রতারক এখন সক্রিয়। এসব প্রতারণার শিকার রাজনৈতিক নেতারাও। সামাজিকভাবে মান ক্ষুণœ হওয়ার ভয়ে তারা মামলা করতে চান না। কেউ মামলা করলেও তার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের অপপ্রচার চালাতে থাকেন। ‘ব্ল্যাকমেইল’ করে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে টাকা। এমন চক্রের ফাঁদে পড়েন একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের রাজশাহীর একটি শাখার ব্যবস্থাপক। তাকে নারী চক্রের ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। রাজশাহীতে স্থানীয় এক নেতার সঙ্গে প্রথমে সখ্যতা, তারপর ভালোবাসার অভিনয় করে বিয়ে হয়। সবকিছুর পর আইনিভাবে তালাক দেওয়ার পরও টাকার লোভে এখনো পিছু ছাড়ছে না এক নারী। প্রতিনিয়ত ওই নারী নানাভাবে হয়রানি করছেন ওই নেতাকে। এ নিয়ে প্রতারণার মামলা হলেও ওই নারী থেমে নেই। নগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেইলের সঙ্গে জড়িতদের কয়েকজনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের একটি দল ঘটনাগুলো মনিটরিং করছে। প্রতারক চক্রের হাত থেকে বাঁচতে তিনি মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে কেউ প্রতারিত হলে পুলিশের সহযোগিতা  নেওয়ার কথা বলেছেন।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর