সোমবার, ৩ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

ডিবি হেফাজতে মৃত্যু পরিবারের দাবি নির্যাতনে হত্যা

ফরিদপুর প্রতিনিধি

ফরিদপুরের সালথা উপজেলা পরিষদে ভাঙচুরের মামলায় ডিবি পুলিশের হেফাজতে আসামি আবুল হোসেন আলীর (৫০) মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হয়। পক্ষান্তরে আসামির স্বজনেরা নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন। আবুল হোসেন    সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের গোপালীয়া গ্রামের মৃত ইমানউদ্দিন মোল্লার ছেলে। এদিকে, আবুল হোসেনকে বিএনপি কর্মী দাবি করে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ রিংকু নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। জানা গেছে, গত ১৬ এপ্রিল সোনাপুর ইউনিয়নের গোপালীয়া গ্রাম থেকে পুলিশ আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করে। ২৮ এপ্রিল তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় ডিবি পুলিশ। সেখানে রিমান্ড চলাকালীন তার মৃত্যু হয়।

ফরিদপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা জানান, ডিবির রিমান্ডে থাকা আসামি আবুল হোসেন শনিবার ভোর রাতে সাহরি খেয়ে অন্যদের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করেন। ভোর সোয়া ৫টার দিকে টয়লেটে গিয়ে ফিরে না আসায় প্রহরীরা সেখানে গিয়ে আবুল হোসেনকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। দ্রুত তাকে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। শনিবার সকাল ৬টায় হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, পুলিশ যখন আবুল হোসেনকে নিয়ে আসেন তখনই পরীক্ষা করে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। আবুল হোসেনের মৃত্যুর খবর পরিবারের সদস্যরা জানতে পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। আবুল হোসেনের মেয়ে তানিয়া আক্তার (১৮) কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার বাবা নিরীহ মানুষ। গরুর খামার নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তিনি  কোনো অপরাধ করেননি। আমার বাবাকে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে  মেরে ফেলেছে। এর বিচার কার কাছে চাইব। আল্লাহর কাছে বিচার চাওয়া ছাড়া আমাদের আর কে আছে? সোনাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. খায়রুজ্জামান বাবু বলেন, আবুল হোসেন মানুষ ছিলেন। তিনি গরুর খামার নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। আবুল হোসেনের মৃত্যুর ঘটনাটি দুঃখজনক অভিহিত করে বিএনপির নির্বাহী কমিটির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ রিংকু বলেন, ‘ভাঙচুরের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। পুলিশ তাকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালিয়েছে। ফলে তিনি মারা গেছেন। এ ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।’ ফরিদপুর পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, এ বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, লকডাউনকে কেন্দ্র করে গত ৫ এপ্রিল ফরিদপুরের সালথা উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন সরকারি অফিসে উত্তেজিত জনতা তান্ডব চালায়। এ সময় দুটি সরকারি গাড়িসহ বেশ কয়েকটি অফিসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশের গুলিতে দুই যুবক নিহত হন। এ ঘটনায় কয়েক হাজার মানুষের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা করা হয়।

সর্বশেষ খবর