মঙ্গলবার, ১১ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

ফেলে দেওয়া বোতলে তৈরি হচ্ছে কাপড় কম্বল তুলা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ফেলে দেওয়া বোতলে তৈরি হচ্ছে কাপড় কম্বল তুলা

পানি বা কোমল পানীয় পানের পর প্লাস্টিকের যে খালি বোতলটির জায়গা হয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডাস্টবিন বা নর্দমায়, এখন এই প্লাস্টিক বর্জ্যটির চাহিদা বেড়ে গেছে হঠাৎ। কারণ, প্লাস্টিকের এই বর্জ্য ব্যবহার করে দেশের শিল্প-কারখানায় তৈরি হচ্ছে সুতা, কাপড়, তুলা, কম্বলসহ গৃহস্থালি পণ্য। ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টন পেট বোতলের (স্ক্র্যাপ) চাহিদা তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আমদানি নিষিদ্ধ এই প্লাস্টিক বর্জ্যটি শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে আমদানির সুপারিশ করেছে ট্যারিফ কমিশন। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে ট্যারিফ কমিশন বলেছে, পলিয়েস্টার স্ট্যাপল ফাইবার     (পিএসএফ) উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, যারা ইতিমধ্যে পিএসএফ উৎপাদনে মেশিনারিজ স্থাপন করেছে, সেসব উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতার সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পেট বোতল স্ক্র্যাপ বা পেট ফ্ল্যাক্স আমদানির অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, পরিবেশের দূষণ কমাতে বিশ্বের অনেক দেশ বর্জ্য ব্যবহার করে রিসাইক্লিং শিল্পে নতুন নতুন পণ্য তৈরি করছে। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশেও এ ধরনের বেশ কিছু শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে। চীনের সহায়তায় সাভারের ধামরাইয়ে একটি কারখানা গড়ে উঠেছে যারা পেট বোতল ফ্ল্যাক্স থেকে তুলা উৎপাদন করে রপ্তানি করছে। আরও কিছু কারখানায় প্লাস্টিকের স্ক্র্যাপ ব্যবহার করে পলিয়েস্টার সুতা, সিনেথেটিক কাপড়, কম্বল তৈরি হচ্ছে। নতুন গড়ে ওঠা এসব শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে পেট বোতল স্ক্র্যাপ। চাহিদা বেড়েছে সে কারণেই। জানা গেছে, তরল পণ্য ব্যবহারের পর বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া পেট বোতলগুলো টুকরো টুকরো করে কেটে অথবা গুঁড়া করে ফ্ল্যাক্স বা স্ক্র্যাপ তৈরি করা হয়। পেট ফ্ল্যাক্স থেকে তৈরি হয় সিনথেটিক কাপড়, তুলা, কম্বল, পাপোশ, গৃহনির্মাণসামগ্রী ও স্ট্রাপ। দেশে কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যারা প্লাস্টিক বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া এই পেট বোতলের স্ক্র্যাপ ব্যবহার করে সিনথেটিক কাপড়, সুতা ও তুলা উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করে থাকে। প্লাস্টিকের বর্জ্য ব্যবহারের ফলে পরিবেশের দূষণ কমছে। আর পরিবেশ দূষণ কমাতে পেট বোতল ফ্ল্যাক্স ও এ থেকে তৈরি পিএসএফ রপ্তানিতে ১০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তাও দিচ্ছে সরকার। সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের ৭০ থেকে ৮০টি প্রতিষ্ঠান ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করে সেগুলো কেটে ফ্ল্যাক্স তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করে থাকে। প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন ফ্ল্যাক্স রপ্তানি হয়ে থাকে বিভিন্ন দেশে। এক সময় বাংলাদেশ থেকে প্লাস্টিকের ফ্ল্যাক্স রপ্তানির বড় বাজার ছিল চীন ও ভারত। তবে বর্তমানে দেশ দুটি প্লাস্টিকের ফ্ল্যাক্স আমদানি বন্ধ করে দেওয়ায় ভিয়েতনামে রপ্তানি হচ্ছে প্লাস্টিকের এই বর্জ্য। আমদানিকারক দেশগুলো প্লাস্টিকের এই বর্জ্য শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে আমদানি করে মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে তৈরি করছে পলিয়েস্টার ফেব্রিক, ওভেন ফেব্রিক, জিও টেক্সটাইল ও পলিয়েস্টার ইয়ার্নসহ নানা ধরনের পণ্য। সেগুলো আবার রপ্তানি করছে অন্য কোনো দেশে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর এই শিল্প প্রক্রিয়া দেখে বাংলাদেশেও কিছু ব্যবসায়ী প্লাস্টিকের বর্জ্য ব্যবহার করে পিএসএফ, ইয়ার্নসহ এ ধরনের পণ্য তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করছে। ফলে পাঁচ বছর আগেও যেখানে দেশ থেকে প্লাস্টিকের পেট বোতল কেটে ফ্ল্যাক্স বা স্ক্র্যাপ হিসেবে গুঁড়া করে বিদেশে রপ্তানি হতো শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে, এখন উল্টো সেটিই আমদানি করছেন দেশের উদ্যোক্তারা। ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে প্রতি বছর পেট বোতল উৎপাদনের জন্য প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন পেট রেজিন আমদানি হয়। এ থেকে উৎপাদিত পেট বোতলের ২০ শতাংশ পুনঃব্যবহৃত হয়। বাকি ৮০ শতাংশই বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া হয়, যা থেকে প্রতি বছর প্রায় ৭৫ হাজার মেট্রিক টন পেট প্লাস্টিক স্ক্র্যাপ সরবরাহ হয়ে থাকে। আবার সংগৃহীত এই বর্জ্যরে ৮০ ভাগ অর্থাৎ ৬০ হাজার মেট্রিক টন দেশের জিও টেক্সটাইল ও পিএসএফ উৎপাদনকারী শিল্পগুলো ব্যবহার করে থাকে। বাকিটা ফ্ল্যাক্স হিসেবে রপ্তানি হয়। ট্যারিফ কমিশন বলছে, শিল্পের কাঁচামাল পেট ফ্ল্যাক্স সরাসরি দেশ থেকে রপ্তানি হওয়ায় অধিকতর মূল্য সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান যারা এটি ব্যবহার করে পলিয়েস্টার স্ট্যাপল ফাইবার (পিএএসএফ) ও কাপড় তৈরি করে তারা কাঁচামাল স্বল্পতার কারণে উৎপাদন ক্ষমতার যথাযথ ব্যবহার করতে পারছে না। দেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকার শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ড সুবিধার আওতায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে পেট ফ্ল্যাক্স আমদানি করতে পারে। এর বাইরে কিছু প্রতিষ্ঠান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে এই প্লাস্টিক বর্জ্যটি আমদানি করতে পারে। এখন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মেটাতে শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে এটি আমদানির অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।

সর্বশেষ খবর