সোমবার, ১৭ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

মনোরম রূপে মাধবকুণ্ড

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

মনোরম রূপে মাধবকুণ্ড

মাধবকুন্ড ইকোপার্কের চলাচলের পথে শেওলা জমেছে। স্থানে স্থানে বুনো ঘাস গজিয়েছে। নানা রকম গাছ-লতাপাতা চলে এসেছে পথের ওপর। রাস্তার মধ্যে, পাশে, ঝরনার পাথরে ছোটবড় শামুক ছড়ানো-ছিটানো। পাহাড়ি কাঁকড়া ছোটাছুটি করছে। কারও একটু সাড়া পেলেই ফাঁক-ফোকরে গা ঢাকা দিচ্ছে। জলপ্রপাতের ছড়ার বিভিন্ন স্থানে জাল পেতে  মাছ ধরছেন আদিবাসী যুবকরা। জলপতনের শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। লকডাউনের কারণে এমনই এক নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে ইকোপার্কে। বহুকাল পর এভাবেই নিজের স্বর্গীয় রূপ ফিরে পেয়েছে মৌলভীবাজারের বড়লেখার পাথারিয়া পাহাড়ের মাধবকুন্ডু জলপ্রপাত। জলপ্রপাত ঘিরে সবখানেই এখন প্রাকৃতিক নির্জনতা। প্রকৃতি সেজেছে অপরূপ সৌন্দর্যে। করোনা সংক্রমণের কারণে দ্বিতীয় ধাপে গত এপ্রিল মাস থেকে দেশের অন্য সব পর্যটন কেন্দ্রের মতো মাধবকুন্ডু ইকোপার্কও বন্ধ। পর্যটক আসছেন না। স্থানীয়রা জানান, লকডাউনে এখন মাধবকুন্ডু ইকোপার্ক বন্ধ। এই সুযোগে খুব সুন্দর হয়ে উঠেছে পরিবেশ। দেখতে দারুণ লাগে। অনেকটা ছোটবেলায় মাধবকুন্ডকে যে রকম দেখেছি, সে রকমই লাগছে এখন। দল বেঁধে বনমোরগ ঘুরছে। সন্ধ্যার আগে আগে বনমোরগ বেশি দেখা যায়। বানরের সংখ্যাও বেশি। সারা দিন গাছে থাকে। খুব সুন্দর। মানুষের পদচারণ না থাকায় ঘাস জন্মেছে। পানিও অনেক স্বচ্ছ। শত শত শামুক, কাঁকড়া ঘুরছে-ফিরছে। খুব দারুণ দেখতে। ইকোপার্কের ভিতরটা দেখতে খুব সুন্দর হয়েছে। মানুষের চলাচল না থাকায় শেওলা জমে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে আছে। প্রচুর শামুক, পাহাড়ি কাঁকড়া ছোটাছুটি করছে। বানর ও বনমোরগ স্বাভাবিকভাবে ঘোরাফেরা করছে। পর্যটক আসলে এভাবে দেখা যায় না।

 মাধবকুন্ডু ইকোপার্কের গেটম্যান সাইদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ইকোপার্কের ভিতরটা দেখতে খুব সুন্দর হয়েছে এখন। মানুষের চলাচল না থাকায় শেওলা জমে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে আছে। প্রচুর শামুক, পাহাড়ি কাঁকড়া ছোটাছুটি করছে। বানর ও বনমোরগ স্বাভাবিকভাবে ঘোরাফেরা করছে। পর্যটক আসলে এভাবে দেখা যায় না। জানা গেছে, ঈদের সময়টাতে পর্যটকদের ঢল নামে মাধবকুন্ডু ইকোপার্কে। কিন্তু লকডাউনের কারণে পর্যটকেরা আসেননি। ইকোপার্ক এলাকাটি এখন শান্ত, কোলাহলমুক্ত। মানুষের হইচই নেই। যানবাহন আসা-যাওয়ার যান্ত্রিক শব্দ নেই। তবে করোনাকালে সংকটে মাধবকুন্ডু ইকোপার্ক দুই দফা বন্ধ থাকায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরা। প্রায় ১৫ জন আলোকচিত্রী আছেন, যারা পর্যটকদের ছবি তুলে জীবিকা নির্বাহ করেন। আছেন বিভিন্ন ধরনের ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী। শতাধিক ব্যবসায়ী এখন বেকার সময় পার করছেন। মাধবকুন্ডু জেলা পরিষদ ডাকবাংলো-সংলগ্ন ব্যবসায়ী কবির আহমদ বলেন, ‘আমরা এক বছর ধরে লসের মধ্যে আছি। প্রতি ঈদে ১০-১২ দিন আমাদের ব্যবসা ভালো হয়। এই রুজি দিয়াই মূলত বছরের বেশির ভাগ সময় চলি। কিন্তু করোনার কারণে ঈদে ব্যবসা করতাম পারছি না। খুব কষ্টে আছি। মাঝেমধ্যে দোকান খুলি, ঘরে আলোবাতাস ঢোকাই। ঈদের সময় অনেক মানুষ আইরা (আসতেছেন)। কেউ ভিতরে ঢুকতে পারে না। মন বুঝ দেওয়ার লাগি (জন্য) দোকান খুলি। যদি বিক্রি করতে পারি।’ বন বিভাগের বড়লেখা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন দাস বলেন, ‘মাধবকুন্ডু বন্ধ থাকায় ভিতরটা অনেক সুন্দর হয়ে গেছে। প্রতিদিনই আমরা যাই। প্রকৃতিতে প্রাণ ফিরে এসেছে। বন্ধ থাকায় এত দিন লোকজনও আসেনি। ঈদ উপলক্ষে আশপাশের কিছু তরুণ-কিশোররা আসছে। ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। রাস্তার পাশে শোভাবর্ধনকারী গাছ লাগানো হয়েছিল। সেগুলোয় ফুল ফুটেছে। সেখানে ছবি তুলে ফিরে যাচ্ছে। আমাদের লোকজন সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। কোনো লোক ভিতরে ঢুকতে পারছে না।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর