মঙ্গলবার, ১৮ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

নতুন কর চাপাতে চায় না সরকার

করপোরেট কর কমানোর প্রস্তাব

মানিক মুনতাসির

সরকারের মধ্যে অর্থের সংকট থাকলেও আসছে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে জনগণের কাঁধে নতুন করে কোনো করের বোঝা চাপাতে চায় না সরকার। এজন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), অর্থ বিভাগসহ বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে জড়িতদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা মহামারীর কারণে এক বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবসা-বাণিজ্যে চলছে সংকট। এরই মধ্যে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধও হয়ে গেছে। ফলে করপোরেট কর কমানো যায় কি না চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। যদিও এর আগের বছর অর্থাৎ চলতি বাজেট প্রণয়নের সময় করপোরেট কর কমানোর একাধিক ঘোষণা দিলেও বাস্তবে তা হয়নি। এজন্য আসছে বাজেটে ব্যবসা-বাণিজ্যে কিছুটা ছাড় দিতে চায় সরকার। ঈদের আগে এ ব্যাপারে একাধিক বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন আসছে বাজেটে নতুন করে কর না বসিয়ে আয় বাড়াতে। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের আরও কষ্ট হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। তবে তিনি বলেছেন যারা কর দিতে সক্ষম অথচ কর দেন না তাদের করের আওতায় আনতে হবে। এজন্য করজাল বিস্তৃত করতে এনবিআরকে বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিতে বলা হয়েছে। যা আগামী বছরের বাজেটের সঙ্গে যুক্ত হতে যাচ্ছে। অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানান, জীবন ও জীবিকাকে প্রাধান্য দিয়ে সামনের বছরের বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। এজন্য স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হবে। জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন কর্মসূচি আরও জোরদার করা হবে। ভ্যাকসিন কিনতে যেন অর্থের সংকট না হয় সেজন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রাখা হবে আসছে বাজেটে। একই সঙ্গে শিল্প খাতকে চাঙা রাখতে প্রণোদনা কর্মসূচিগুলো চালু রাখা হবে।

এদিকে মহামারী করোনাভাইরাসের আঘাতে ধসে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ২০২০ সালের শুরুতে প্রথম ধাক্কায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকার কয়েকটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল; যা এখনো চলমান। এসব কর্মসূচি আগামী বছরের বাজেটেও চলমান থাকবে। এদিকে করোনার ধাক্কায় দেশের সব ধরনের উৎপাদন কমেছে। আয় কমেছে সরকারের ও বেশির ভাগ মানুষের। অথচ বেড়েছে  ব্যয়। ফলে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) টার্গেট কমিয়ে আনছে সরকার। চলতি বছরের বাজেটে জিডিপির টার্গেট ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। আসছে বাজেটে সেটিকে কমিয়ে ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী বলছেন এবারের বাজেট হবে জীবন-জীবিকা সুরক্ষার বাজেট। বাজেটে সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে কৃষি, খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা খাত।

সূত্র জানান, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে টেনে তুলতে গত বছর যে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির কৌশল নেওয়া হয়েছিল তা আগামী অর্থবছরের বাজেটেও অব্যাহত থাকবে। টানা লকডাউন (বিধিনিষেধ) কর্মসূচির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এ কর্মসূচিগুলো আগামী বাজেটেও চলমান রাখা হবে। কর না বাড়িয়ে মানুষের হাতে টাকার সরবরাহ বাড়াতে সরকারি ব্যয় বাড়ানো হবে। অর্থাৎ এডিপিতে বরাদ্দ বাড়ানো হবে। একইভাবে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলো আরও বিস্তৃত করা হবে।

চলমান লকডাউনের কারণে আয়কর এবং মূল্য সংযোজন করসহ বিভিন্ন উৎস থেকে রাজস্ব আহরণে নিম্নমুখিতা রয়েছে। ফলে সরকারের আয় এক ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে। আবার কর বাড়িয়ে আয় বাড়ালে জনসাধারণের ভোগান্তি বাড়বে। বিশেষ করে যে কোনো খাতে করহার বাড়ালে তার চূড়ান্ত প্রভাব পড়ে জনসাধারণের কাঁধে। এ কাজটা এবার করোনা মহামারী বিবেচনায় করতে চায় না সরকার। ফলে সরকারকে করজাল বিস্তৃত করতে হবে। এ সম্পর্কে এনবিআরকে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ফলে অবশ্য বাজেট ঘাটতি বেড়ে যেতে পারে। যদিও দীর্ঘদিন ধরে বাজেট ঘাটতির ডিজিটির ৫ শতাংশের মধ্যে আটকে রাখা হচ্ছে। আসছে বছর তা ৬ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। তবে এটিকে খুব বড় ঝুঁকি বলে মনে করছে না সরকার। অর্থনীতিবিদরাও বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারের ব্যয় বাড়াতে হবে। এজন্য ব্যয়ের সক্ষমতাও বৃদ্ধি করতে হবে। এতে যদি বাজেট ঘাটতি বেড়েও যায় তার পরও জনসাধারণের জীবনে এক ধরনের ইতিবাচক প্রভাব রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর