বুধবার, ১৯ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

কারাগারে পাঠানো হলো সাংবাদিক রোজিনাকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার রোজিনা ইসলামকে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়েছে। সরকারি নথির ছবি তোলার অভিযোগে করা মামলায় গ্রেফতারের পর তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। গতকাল বিকাল পৌনে ৩টার দিকে প্রিজনভ্যানে করে তাকে কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছানো হয়। এর আগে বেলা ১১টার পর রোজিনা ইসলামকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে নেওয়া হয়। সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম রিমান্ড নেওয়ার আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ২০ মে তার জামিন শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

তিন মন্ত্রীর সঙ্গে প্রেস ক্লাব নেতাদের বৈঠক : স্বরাষ্ট্র এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে গ্রেফতার সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিষয়ে ‘আশ্বাস পাওয়ার’ কথা জানিয়েছেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। গতকাল সচিবালয়ে পৃথকভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে দেখা করেন প্রেস ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর সচিবালয়ে ফরিদা ইয়াসমিন সাংবাদিকদের বলেন, রোজিনার চিকিৎসা এবং কারাগারে যাতে নতুন করে ‘হেনস্তা’ হতে না হয় সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ‘সাধ্যমতো’ দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।

এদিকে রোজিনা ইসলাম ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল সাংবাদিকদের প্রতিনিধি দল রাজধানীর গুলশানে আইনমন্ত্রীর অফিসে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ আশ্বাস দেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও সচিবালয় বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) সভাপতি তপন বিশ্বাসের নেতৃত্বে সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দল গত রাত ৯টার দিকে আইনমন্ত্রীর অফিসে যান।

গোপন নথি বাইরে গেলে দেশের ক্ষতি হতো, বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী : সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে ‘নির্যাতন করা হয়নি’ জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, প্রতিবেদক রোজিনা টিকা আমদানিসংক্রান্ত এমন কিছু নথি ‘সরিয়েছিলেন’ যেগুলো প্রকাশ হলে ‘দেশের ক্ষতি’ হতে পারত। সরকারি নথি ‘চুরির চেষ্টা’র অভিযোগে রোজিনা ইসলামকে গ্রেফতার এবং তার বিরুদ্ধে ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস’ আইনে মামলার ঘটনায় বিভিন্ন মহলে সমালোচনার মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এমন বক্তব্য দিলেন। রোজিনাকে গ্রেফতারের ঘটনা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গতকাল বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছিল। কিন্তু সচিবালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) তা বর্জন করে।

রোজিনার মুক্তি দাবি সম্পাদক পরিষদের : রোজিনা ইসলামের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছে সম্পাদক পরিষদ। সচিবালয়ে কর্তব্য পালন করতে গিয়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা হেনস্তার পর রোজিনা ইসলামকে থানায় সোপর্দ, মামলা দায়ের, সারা রাত থানায় রাখা, আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন, জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ, ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সম্পাদক পরিষদ।

এদিকে লেখক-সাহিত্যিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীসহ নেতৃস্থানীয় ১৩ জন নাগরিক সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা এবং তার বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। রোজিনাকে সচিবালয়ে হেনস্তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক সভাপতি এম. হাফিজউদ্দিন খান ও সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।

এ ছাড়া নিন্দা জানিয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ছানোয়ার হোসেন তালুকদার এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননসহ বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দ। এ ছাড়া ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন ডিইউজের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি-ডিআরইউর সভাপতি মুরসালিন নোমানী ও সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান। নিন্দা জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম- ইআরএফ, ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ-ডিজেএফবি, বাংলাদেশ ক্রীড়া জার্নালিস্ট কমিউনিটি, রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্র্যাসি-আরএফইডি, ল রিপোর্টার্স ফোরাম-এলআরএফ, ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম-সিএমজেএফ, ইন্স্যুরেন্স রিপোর্টার্স ফোরাম-আইআরএফ, বৃহত্তর ময়মনসিংহ রিপোর্টার্স ফোরাম-জিএমআরএফ। এ ছাড়া সারা দেশের বিভিন্ন প্রেস ক্লাবে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করা হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশের ১০ সাংস্কৃতিক সংগঠন। সংগঠনগুলো হলো- সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ, বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা, বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, আইটিআই বাংলাদেশ কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ। এ ছাড়া নিন্দা জানিয়েছে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম, বাংলাদেশ যুব মৈত্রী।

সর্বশেষ খবর