শুক্রবার, ২১ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

ভয়ংকর ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে তটস্থ ভারত

মহামারী ঘোষণা

প্রতিদিন ডেস্ক

ভারতে ছড়িয়ে পড়া ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে (মিউকোরমাইকোসিস) ‘মহামারী’ হিসেবে ঘোষণা করতে প্রতিটি রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া একটি চিঠিতে এ কথা বলা হয়েছে। এরই মধ্যে রাজস্তান ও তেলেঙ্গানা রাজ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে মহামারী ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এদিকে মহারাষ্ট্রে মাত্র কয়েকদিনেই এ ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়ে ৯০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সূত্র : এনডিটিভি

খবরে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয সরকারের ঘোষণার অর্থ হচ্ছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সব নিশ্চিত এবং সন্দেহজনক রোগী সম্পর্কে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জানাতে হবে। চিঠিতে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব লাভ আগারওয়াল চিঠিতে বলেছেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগীর স্ক্রিনিং, নির্ণয়, ব্যবস্থাপনা নিয়ে সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল-মেডিকেল কলেজকে নির্দেশিকা ফলো করতে হবে। এই রোগটি নাকের উপরে কালো হয়ে যাওয়া বা বর্ণহীনতার সৃষ্টি করতে পারে, দৃষ্টি ঘোলা বা ডাবল ভিশনের করাতে পারে, বুক ব্যথা, শ্বাস গ্রহণে সমস্যা তৈরি করতে পারে। মহারাষ্ট্রে এ পর্যন্ত এ রোগের ১ হাজার ৫০০ রোগী পাওয়া গেছে। সেখানে মারা গেছেন ৯০ জন। তামিলনাড়ুতে একজন রোগীর সন্ধান মিলেছে। অন্যান্য রাজ্যেও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় গোটা দেশে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। খবরে আরও বলা হয়, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে ভারতে নতুন আতঙ্ক ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের হার বেড়ে চলেছে গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, দিল্লি, রাজস্থান ও ঝাড়খন্ডে। মহারাষ্ট্র রাজ্যে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। গত বুধবার রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেশ তোপে বলেছেন, ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে’ সংক্রমিত হয়ে এ রাজ্যে এখন পর্যন্ত ৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পাশাপাশি মহারাষ্ট্র রাজ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ ব্ল্যাক ফাঙ্গাস।’ রাজেশ তোপে আরও বলেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসাসংক্রান্ত খরচের দায়িত্ব নেবে রাজ্য সরকার। এই রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাই অনেকেই এর ব্যয়ভার বহন করতে পারছেন না। আগে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত রাজ্য সরকার খরচ করতে প্রস্তুত ছিল। এখন এ ক্ষেত্রে কিছু বদল আনা হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য ২ লাখ রুপি পর্যন্ত ব্যয় করবে মহারাষ্ট্র সরকার। শুধু রেশন কার্ড থাকলেই এই সুবিধা পাওয়া যাবে। জানা গেছে, মিউকরমাইকোসিস একটি বিরল সংক্রমণ। মিউকর নামে একটি ছত্রাকের সংস্পর্শে এলে এই সংক্রমণ হয়। সাধারণত মাটি, গাছপালা, পচনশীল ফল ও শাকসবজিতে এই ছত্রাক দেখা যায়। অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (এআইআইএমএস) জানিয়েছে, মিউকরমাইকোসিস মুখে আক্রমণ করতে পারে। নাক, চোখ ও মস্তিষ্কে এর সংক্রমণ ঘটতে পারে। এ সংক্রমণে সাইনাসের ব্যথা, এক নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, মাথার এক পাশে ব্যথা, ফুলে যাওয়া, দাঁতে ব্যথাসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়। সংক্রমণে রোগী দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন। এটা ফুসফুসেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষত ডায়াবেটিস রয়েছে- এমন কভিড পজিটিভ রোগীদের এ ছত্রাকে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কেননা, স্টেরয়েডের অপব্যবহার কভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে মিউকরমাইকোসিসের সংক্রমণ বাড়িয়ে দিতে পারে।

ধরা পড়ল আরেক বিপজ্জনক ফাঙ্গাস : ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের পর ভারতে আরেক বিপজ্জনক ফাঙ্গাস ধরা পড়েছে। এটির নাম হোয়াইট ফাঙ্গাস। চিকিৎসকরা বলছেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চেয়েও বিপজ্জনক  হোয়াইট ফাঙ্গাস। গত বৃহস্পতিবার বিহার রাজ্যে হোয়াইট ফাঙ্গাস সংক্রমিত চারজন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। চিকিৎসকরা বলেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ শুধু মুখের আশপাশের অঙ্গগুলোতে হয়। কিন্তু হোয়াইট ফাঙ্গাস খুব দ্রুত অন্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। ফুসফুস, যকৃৎ, বৃক্ক, যৌনাঙ্গসহ সব অঙ্গেই অত্যন্ত দ্রুত সংক্রমিত হতে পারে এই ভাইরাসে। নখের মাধ্যমে শরীরের নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে এটি। তার পর অঙ্গগুলোকে বিকলও করে দিতে পারে এই ছত্রাক। চিকিৎসকদের ধারণা, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণে মৃত্যুর হার অত্যন্ত বেশি। তবে হোয়াইট ফাঙ্গাসে সংক্রমণে মৃত্যুর হার সম্পর্কে এখনো স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই। কিন্তু নানা অঙ্গে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা দেখে  ধারণা, এটি আরও বেশি বিপজ্জনক হতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর