শুক্রবার, ২১ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

রোজিনার জামিন নিয়ে আদেশ রবিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করা শাহবাগ থানার মামলায় প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার রোজিনা ইসলামের জামিন নিয়ে আগামী রবিবার আদেশ দেওয়া হবে। গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকী বিল্লাহর ভার্চুয়াল আদালতে তার জামিনের শুনানি হয়। পরে রবিবার আদেশ দেওয়ার কথা জানায় আদালত।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আবু বলছেন, রবিবার আরও শুনানি হবে, তারপর আদেশ। ব্যক্তিগত কারণে আবদুল্লাহ আবু এদিন নিজে শুনানিতে ছিলেন না। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হিরণ। তিনি বলেন, আসামির কাছ থেকে আলামত উদ্ধার করা হয়েছে, তাকে জামিন দেওয়া ঠিক হবে না।

অন্যদিকে রোজিনার আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, এজাহারে সে রকম কোনো আলামতের বর্ণনা নেই। যে আলামতের কথা বলা হচ্ছে তা পরে ম্যানিপুলেট করা। তিনি বলেন, ব্রিটিশ আমলের যে ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস’ আইনে এ মামলা হয়েছে, বাংলাদেশে তার ব্যবহার অত্যন্ত কম, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেও এ আইন প্রয়োগের তেমন নজির নেই। তবে ভার্চুয়াল শুনানি হওয়ায় রোজিনাকে আদালতে আনা হয়নি। তাকে রাখা হয়েছে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে। গত মঙ্গলবার রোজিনা ইসলামের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। রাষ্ট্রীয় গোপন নথি ‘চুরির চেষ্টা’র অভিযোগে রোজিনা ইসলামকে সোমবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের এক কর্মকর্তার কক্ষে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। রাতে তাকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করে ব্রিটিশ আমলের অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও দন্ডবিধির কয়েকটি ধারায় মামলা করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।

তদন্তে কোনো চাপ নেই : ডিবি : রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলার তদন্তে কোনো ধরনের চাপ নেই বলে জানিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল সকালে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ডিবি রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার এইচ এম আজিমুল হক। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলা তদন্ত করতে কোনো জায়গা থেকে কোনো চাপ নেই। মামলার তদন্তের স্বার্থে যা যা করা দরকার তার সবই করা হবে। মামলাটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সুন্দরভাবে তদন্ত হবে। বুধবার দুপুরে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টে করা শাহবাগ থানার মামলাটির তদন্তভার ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়।

রোজিনার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি : অবিলম্বে রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। একই সঙ্গে তাকে হেনস্তাকারীদের দ্রুত শাস্তি, মামলা প্রত্যাহার ও সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন তারা। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এসব দাবি জানায় সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) এ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, রোজিনা ইসলাম বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা ও মুক্ত গণমাধ্যমের প্রতীক। যে তথ্য তিনি চুরি করতে গিয়েছেন, সেটি তো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নয়, সেটি জনগণের তথ্য। তাই চৌর্যবৃত্তির যে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে সেটি বা অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট অবাধ তথ্যের আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, রোজিনা ইসলামের সঙ্গে যে ধরনের নির্যাতন হয়েছে তা সভ্য দেশে হতে পারে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কোনো সাংবাদিককে আটকে রাখতে পারে না। একটা নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি করতে হবে যেখানে সাংবাদিকদের প্রতিনিধিরা থাকবেন। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কেউ থাকতে পারবেন না। বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, রোজিনা ইসলাম সৎ, সাহসী ও পরিশ্রমী সাংবাদিক। তার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির মামলা হয়েছে। গুপ্তচরবৃত্তি আর সাংবাদিকতা এক নয়। একটি মৃত আইনে মামলাটি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মোল্লা জালাল বলেন, দেশের সাংবাদিকতায় একটা ক্রান্তিকাল চলছে। দ্রুত রোজিনা ইসলামকে মুক্তি দিতে হবে। এদিকে রোজিনা ইসলামের মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)। সংগঠনের কার্যালয়ে গতকাল এক প্রতিবাদ সমাবেশে এ দাবি জানান সংগঠনের নেতারা। এ ছাড়া মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি। অন্যদিকে রোজিনা ইসলামকে ‘হেনস্তা ও গ্রেফতারের’ প্রতিবাদে সারা দেশেই রাস্তায় নেমেছেন ক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা। গাজীপুরের কাশিমপুর কারাফটকের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন সাংবাদিকরা। বরিশালে স্বেচ্ছায় কারাবরণ কর্মসূচি পালন করেছেন সাংবাদিকরা। বরিশালে মানববন্ধন করেছে ‘সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ কমিটি’ এবং গণনাট্য সংস্থা। ফরিদপুরের ভাঙ্গায় প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন হয়েছে। মানববন্ধন করেছেন দিনাজপুরের সাংবাদিকসহ বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন নাটোরে গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম ও লালপুর উপজেলার সাংবাদিকরা। নরসিংদীতে মানববন্ধন করেছেন সাংবাদিকরা। মানববন্ধন করেছে মাগুরা প্রেস ক্লাব, ঝিনাইদহ প্রেস ক্লাব, হবিগঞ্জ প্রেস ক্লাব, শরীয়তপুর প্রেস ক্লাব ও দিনাজপুরের পার্বতীপুর প্রেস ক্লাব। এ ছাড়া ঝালকাঠির রাজাপুর প্রেস ক্লাব আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নেয় রাজাপুর রিপোর্টার্স ইউনিটি, রাজাপুর সাংবাদিক ক্লাব, বিএমএসএফসহ রাজাপুরের বিভিন্ন সংগঠন। নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় সাংবাদিকসমাজের উদ্যোগে মানববন্ধন হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ প্রেস ক্লাবে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন হয়েছে। পটুয়াখালীর কুয়াকাটার গণমাধ্যমকর্মীরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর