সোমবার, ২৪ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

সংকটে চা-বাগান দুর্দিনে শ্রমিক বন্ধ মজুরি

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

দুই সপ্তাহ ধরে অনেক শ্রমিকের ঘরে নিয়মিত জ্বলছে না চুলা। বাকির খাতা বন্ধ করে দিয়েছে পাড়ার দোকানদার। বাগান কর্তৃপক্ষও দিচ্ছে না মজুরি-রেশন। এই অবস্থায় কর্মবিরতি দিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন সিলেটের তারাপুর চা বাগানের শ্রমিকরা। চার দিন  ধরে তারা যাচ্ছেন না চা পাতা চয়নে। বকেয়া বেতন না পাওয়া পর্যন্ত তারা কাজে যোগ না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আর বাগান পরিচালনা কমিটি বলছে, ব্যাংক থেকে ঋণ না পাওয়ায় তারা শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছেন না। সিলেট নগরীর পাঠানটুলা এলাকায় প্রায় ৪২৩ একর দেবোত্তর সম্পত্তির ওপর তারাপুর চা বাগান। ১৯৯০ সালে জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে এই সম্পত্তি হাতিয়ে নেন সিলেটের আলোচিত ব্যবসায়ী রাগীব আলী। ২০১৬ সালে এ সংক্রান্ত মামলায় বাগানের দখলদারিত্ব হারান রাগীব আলী। বাগানের দায়িত্ব পান দেবোত্তর সম্পত্তির সেবায়েত পঙ্কজ গুপ্ত। তবে পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের এক রিভিউয়ের রায়ে কর্তৃত্ব হারান পঙ্কজ। বাগান ও দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য উচ্চ আদালত থেকে প্রশাসন ও বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধির সমন্বয়ে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। চলতি বছরের শুরুতে দায়িত্ব নেয় ওই কমিটি।

বাগানের শ্রমিকরা জানান, বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর শুরুতে ভালো চললেও গেল দুই সপ্তাহ ধরে মজুরি ও রেশন দেওয়া হচ্ছে না। ঘর সংস্কারের জন্যও বাগান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা মিলছে না। ফলে বর্ষায় অনেকের ঘর বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শ্রমিকরা জানান, এত দিন তারা পাড়ার দোকান থেকে বাকিতে বাজার নিয়েছেন। কিন্তু দুই সপ্তাহ ধরে টাকা দিতে না পারায় দোকানদাররাও আর বাকিতে জিনিসপত্র দিচ্ছেন না। ফলে অনেক শ্রমিক পরিবারকে উপাস করতে হচ্ছে। অসুস্থ শ্রমিকদের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে। এর পরও কর্তৃপক্ষ বকেয়া মজুরি-ভাতা ও রেশন দেওয়া থেকে বিরত রয়েছে। এই অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার বাগানের শ্রমিকরা আন্দোলনে রাস্তায় নামেন। তারা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার থেকে তারা শুরু করেছেন কর্মবিরতি। বকেয়া মজুরি না পেলে তারা বাগানের কাজে ফিরে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এই অবস্থায় চা পাতা চয়ন বন্ধ থাকায় বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে দাবি করছেন কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা জানান, শ্রমিকরা কাজ করে মজুরি পাচ্ছে না। তাদের কয়েক বছরের ভাতাও বন্ধ। মজুরি চাইতে গেলে বর্তমান পরিচালনা কমিটি ব্যাংক ঋণ না পাওয়ার অজুহাত দেখাচ্ছে। আর ভাতা নিয়ে বর্তমান ও আগের কর্তৃপক্ষের মধ্যে চলছে রশি টানাটানি। এই অবস্থায় অসহায় হয়ে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন শ্রমিকরা।

এ প্রসঙ্গে তারাপুর চা বাগান ব্যবস্থাপনা কমিটির সেক্রেটারি সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর সান্তনু দত্ত সন্তু জানান, প্রতি বছর কৃষি ব্যাংক চা বাগানটিকে ঋণ দিয়ে থাকে। সারা বছর চা পাতা বিক্রি করে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করা হয়। কিন্তু এ বছর রহস্যজনক কারণে অযৌক্তিক অজুহাত দেখিয়ে ঋণ দেওয়া হচ্ছে না। সন্তু বলেন, ব্যাংক বলছে দেবোত্তর সম্পত্তিতে বাগান ও ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধিত না হওয়ায় তারা ঋণ দিতে পারছেন না। অথচ গত বছর পর্যন্তও তারা ঋণ দিয়েছেন। সন্তু আরও বলেন, বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর বাগান পরিচালনা করতে প্রায় ২৮ লাখ টাকা ধারদেনা করেছেন। এখন ব্যাংক ঋণ না পেলে বাগান পরিচালনা করা সম্ভব হবে না।

সর্বশেষ খবর