সোমবার, ২৪ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

কারামুক্ত সাংবাদিক রোজিনা

গণমাধ্যমকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে : আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক ও গাজীপুর প্রতিনিধি

ছয় দিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্ত হলেন প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার রোজিনা ইসলাম। শত বছরের পুরনো অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে দায়ের হওয়া মামলায় গতকাল সকালে তাকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন ঢাকা মহানগর হাকিম বাকী বিল্লাহ। পরে আদালতের আদেশ ও জামিননামা পৌঁছার পর বিকাল ৪টা ১৮ মিনিটে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কারাগার থেকে মুক্তি পান রোজিনা। রোজিনার জামিন আদেশের সময় বিচারক বলেন, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। তাই তাদের কাজের ক্ষেত্রে আরও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। বিচারক বলেন, গণমাধ্যমের কারণে সব প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্বশীল ও সহনশীল আচরণ করতে হয়। কারণ গণমাধ্যম গণতন্ত্রের অন্যতম অনুষঙ্গ। আদালত ও গণমাধ্যম একে অপরের বাধা হিসেবে নয়, বরং পরিপূরক হয়ে কাজ করে থাকে।

বিকালে কারামুক্তির পর জেলগেটে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রোজিনা ইসলাম বলেন, দেশবাসী ও সাংবাদিক সমাজের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। সবাইকে ধন্যবাদ।  সাংবাদিকতা চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন তিনি। এদিকে কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর রোজিনা ইসলামকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ বিষয়ে তার স্বামী মনিরুল ইসলাম মিঠু সাংবাদিকদের জানান, তার (রোজিনা) কিছু শারীরিক সমস্যা রয়েছে। আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে কয়েক দিন ধরেই দেশে-বিদেশে সাংবাদিকরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও গুরুত্বের সঙ্গে এ খবর প্রকাশিত হয়। গতকালও সরকারের আইনমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথক বৈঠক এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন সাংবাদিকদের সংগঠন, জাতীয় প্রেস ক্লাব, বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতৃবৃন্দ। জামিনের খবরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন তারা। একই সঙ্গে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহারও দাবি করেছেন সাংবাদিক নেতারা।

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি চুরির অভিযোগে অফিশিয়াল সিক্রেটস আইনে গত ১৭ মে শাহবাগ থানায় মামলা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সেদিন তাকে সচিবালয়ের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে হেনস্তার পর শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়। ওই মামলার আসামি হিসেবে গ্রেফতার রোজিনাকে পরদিন ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ রিমান্ডের আবেদন করে। রোজিনার আইনজীবীরা তার জামিন চান। আদালত রিমান্ডের আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। পরে বৃহস্পতিবার তার জামিন আবেদনের শুনানির পর আদেশের জন্য রবিবার দিন ঠিক করে আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম বাকী বিল্লাহ ভার্চুয়ালি আংশিক শুনানি শেষে রোজিনাকে দুই শর্তে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। তাকে ৫ হাজার টাকার মুচলেকা এবং তার পাসপোর্ট আদালতে জমা দিতে বলা হয়।

রোজিনার জামিন মঞ্জুরের আদেশে বিচারক বলেছেন, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। তাই তাদের কাজের ক্ষেত্রে আরও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। তিনি বলেন, আমরা যে যেখানেই আছি, রাষ্ট্র, সমাজ, আইন আদালতের প্রতি আমাদের কিছু দায়-দায়িত্ব রয়েছে। ভবিষ্যতে গণমাধ্যমও যেমন দায়িত্বশীল আচরণ করবে, আমরাও যে যেখানে আছি তেমনি দায়িত্বশীল আচরণ করব। কোনো কাজে যেন রাষ্ট্রের ও সমাজের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ না হয়। বিচারক বলেন, গণমাধ্যমের কারণে সব প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্বশীল ও সহনশীল আচরণ করতে হয়। কারণ গণমাধ্যম গণতন্ত্রের অন্যতম অনুষঙ্গ। আদালত ও গণমাধ্যম একে অপরের বাধা হিসেবে নয়, বরং পরিপূরক হয়ে কাজ করে থাকে। এ সময় আইনজীবীদের উদ্দেশ করে বিচারক বলেন, আমাদের সবাইকে আরও দায়িত্বশীল ও সতর্ক হয়ে কাজ করতে হবে। এর আগে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় আদালতের কার্যক্রম (ভার্চুয়াল) শুরু হলে রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর আদালতের পিপি আবদুল্লাহ আবু শুনানিতে বলেন, সাংবাদিক রোজিনাকে জামিন দেওয়া হলে তাদের আপত্তি নেই। তবে তার পাসপোর্ট যেন জমা রাখা হয়। রোজিনার পক্ষের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী ওই শর্ত নিয়ে কোনো আপত্তি না থাকার কথা জানালে বিচারক অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন। পরে আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার রোজিনার পাসপোর্ট ও জামিননামা আদালতে দাখিল করেন।

সব আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষে আদালত থেকে রোজিনার জামিনের কাগজপত্র বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়। আদালতে জামিনের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে রোজিনা ইসলামকে কারামুক্তি দেওয়া হয়।

মোবাইল ফরেনসিক পাঠানোর অনুমতি : সরকারি নথি চুরির অভিযোগে করা মামলায় রোজিনা ইসলামের কাছ থেকে জব্দ করা দুটি মোবাইল ফোন পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবি পুলিশ রোজিনা ইসলামের ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য আবেদন করে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর