মঙ্গলবার, ২৫ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

সাড়ে ৯ লাখ মেট্রিক টন চাল দিচ্ছেন মিল মালিকরা

১৬ হাজার রাইস মিলের সঙ্গে চুক্তি সরকারের

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

গত আমন মৌসুমে চাল বিক্রি করতে সম্মত না হলেও এবার বোরো মৌসুমে প্রায় সাড়ে ৯ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল বিক্রির জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ১৬ হাজারের বেশি মিল মালিক।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২৩ মে পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ রাইস মিলের সংখ্যা ১৬ হাজার ১৭১টি। এর মধ্যে ৯ লাখ ৪৫ হাজার ৯১৯ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল দিতে চুক্তি করেছে ১৫ হাজার ৯৬১টি রাইস মিল। এ ছাড়া ১৭ হাজার ১৮০ মেট্রিক টন আতপ চাল দিতে চুক্তি করেছে আরও ২১০টি রাইস মিল। সংশ্লিষ্টরা জানান, সিদ্ধ চাল কেনার জন্য মিলগুলোর সঙ্গে চুক্তির সময়সীমা শেষ হলেও আতপ চাল সংগ্রহের সময়সীমা এখনো আছে। সে লক্ষ্যে স্থানীয় প্রশাসন আরও বেশি রাইস মিলের সঙ্গে চুক্তির প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। এবার বোরো মৌসুমে মিল মালিকদের কাছ থেকে ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল ও দেড় লাখ টন আতপ চাল কেনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

খাদ্যসচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রস্তাব পাঠানোর পর তিনি কৃষকদের স্বার্থে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের জন্য ধান ও চালের দাম গতবারের তুলনায় কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ কারণে এবার কৃষক ও মিলার উভয়ের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, চলতি বোরো মৌসুমে ৭ মে থেকে শুরু হয়েছে খাদ্য সংগ্রহ কার্যক্রম। এর মধ্যে ১৯ মে পর্যন্ত ২৫ হাজার ২৭৩ মে. টন বোরো ধান ও ৭৮ হাজার ৩১৬ মে. টন সিদ্ধ বোরো চাল সংগ্রহ হয়েছে।

চলতি বোরো মৌসুমে ২৭ টাকা কেজি দরে ধান ও ৪০ টাকা কেজি দরে চাল কেনা হচ্ছে। গত বছর বোরো মৌসুমে ২৬ টাকা কেজি দরে ধান, ৩৭ টাকা কেজি দরে সিদ্ধ চাল ও ৩৬ টাকা কেজি দরে আতপ চাল কেনা হয়েছিল। সেই হিসাবে এবার ১ টাকা বেশি দরে ধান ও ৩ টাকা কেজি দরে চাল কেনা হচ্ছে। গত আমন মৌসুম থেকে প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টন ধান এবং সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্য নেওয়া হলেও এর বিপরীতে ধান ও চাল মিলিয়ে সংগ্রহ ছিল ১০ হাজার মেট্রিক টনের মতো। সরকার চাল কেনার জন্য রাইস মিলগুলোকে চুক্তির আহ্‌বান জানালেও মিল মালিকরা তাতে সাড়া দেননি। ফলে সরকারের অভ্যন্তরীণ খাদ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়া ভেস্তে যায়। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গত বছর অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে চালের উৎপাদন কম হয়েছে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারেও মোটা চালের দাম কিছুটা বেশি ছিল। এর ফলে আমন মৌসুমে মিল মালিকরা সরকারের নির্ধারিত দামে চাল বিক্রির জন্য চুক্তি করতে আপত্তি জানায়। এবার বোরো মৌসুমের শুরু থেকেই খাদ্য সংগ্রহের বিষয়ে সতর্ক রয়েছে সরকার। গত মাসের শুরুতেই চলতি বোরো মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহে মাঠ প্রশাসনকে ১৩ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা পরিপত্রে বলা হয়েছে, দ্রুততার সঙ্গে ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে গিয়ে যদি কৃষকের তালিকা না পাওয়া যায়, অ্যাপে আবেদন জমা না পড়ে- তবে আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করতে হবে; কৃষকের অ্যাপের বাইরে উপজেলাগুলোতে লটারি করে ধান সংগ্রহ দ্রুত শুরু ও শেষ করতে হবে। চাল সংগ্রহ ৩০ জুনের মধ্যে ৭৫ শতাংশ, জুলাইয়ে ১৫ শতাংশ এবং আগস্টে বাকি ১০ শতাংশ সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে। সংগ্রহ কার্যক্রম সফল করতে মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, স্থানীয় ক্যাবল টিভি স্ক্রলে সম্প্রচারসহ ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনকে।

সর্বশেষ খবর