মঙ্গলবার, ২৫ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

বাড়ছে না করমুক্ত আয়সীমা

মানিক মুনতাসির

আসছে বাজেটে সরকারের রাজস্ব আদায় পরিকল্পনায় যোগ হবে নতুন কিছু অনুসঙ্গ, যা হবে করদাতাদের জন্য সহনশীল। ভোগান্তি ও হয়রানির মাত্রা কমিয়ে আনার কার্যকর উদ্যোগও থাকবে করকাঠামোয়। তবে সরকারের করকাঠামোয় তেমন বড় কোনো পরিবর্তন আসছে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছে এনবিআর। নানা দিক থেকে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর দাবি থাকলেও তা বাড়ছে না। বাড়ানো হবে করের আওতা। নতুন কোনো করের বোঝা চাপবে না জনগণের কাঁধে। তবে কর দিতে সক্ষম অথচ কর দেন না এমন লোকদের করের আওতায় আনতে নতুন করে পরিকল্পনা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত এনবিআর ও অর্থ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। ঈদুল ফিতরের আগের দুই দিন ধারাবাহিক বৈঠকের মাধ্যমে এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারের বাজেটের প্রধান শিরোনাম থাকছে ‘জীবন ও জীবিকার প্রধান্য, আগামীর বাংলাদেশ’। এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখেই ৩ জুন জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

সূত্র জানায়, বৈশি^ক মহামারীর মধ্যেও বাড়ছে বাজেটের আকার। বাড়ছে দেশের অর্থনীতির আকারও। বাজারে টাকার প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে প্রতি বছরই মূল্যস্ফীতি ঘটছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জীবনযাত্রার ব্যয়। কিন্তু আগামী অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা না বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছে এনবিআর। বলা হচ্ছে, করোনার কারণে মানুষে আয়ে ধস নেমেছে। ফলে আসছে বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই বলে মনে করে এনবিআর। যদিও ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীরা করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠন এবং পেশাজীবীদের সংগঠনের পক্ষ থেকে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল।

সূত্র জানায়, করমুক্ত আয়সীমার তেমন কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। চলতি অর্থবছরের মতো আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকাই থাকছে। একইভাবে নারী ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে থাকছে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। তবে ভ্যাটের ক্ষেত্রে বেশ কিছুটা স্বস্তির খবর থাকবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে রাজস্ব বোর্ডের একটি সূত্র। নতুন ভ্যাট আইনের কিছু অসংগতি রয়েছে। সেগুলো দূর করা হতে পারে আসছে বাজেটে।

এদিকে ভ্যাট আইন সংশোধনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের এক ধরনের স্বস্তি দিতে চায় সরকার। এক বছরের বেশি সময় ধরে করোনা সংক্রমণের কারণে অনেকে ঠিকমতো তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যেতে পারেননি। বিষয়টি সর্বোচ্চ মহল অবগত আছেন। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে এক বৈঠকে সবার জন্য সহনশীল বাজেট তৈরির পরামর্শ দেন। আর এরই ভিত্তিতে বাজেটের রাজস্ব কাঠামোয় কিছুটা পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে করপোরেট ট্যাক্স কমানোর জন্য ব্যবসায়ী মহল থেকে দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানানো হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগামী বাজেটে করপোরেট ট্যাক্স কিছুটা কমতে পারে। এ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীও এনবিআরকে নির্দেশনা দিয়েছেন। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের দ্বার উন্মোচন ও উৎসাহিত করতে বেশ কিছু ছাড় দেওয়া হতে পারে। করপোরেট করের হার তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও তালিকার বাইরের কোম্পানির জন্য ভিন্ন হতে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভবিষ্যতে রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে করের হার না বাড়িয়ে করজাল আরও বিস্তৃত করার পরিকল্পনা করছে। একইভাবে করের আওতার বাইরে যারা রয়ে গেছেন তাদের করজালের মধ্যে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এনবিআর মনে করে, করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হলে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী আয়করের আওতার বাইরে চলে যাবে। তাই সীমা বাড়ানোকে যৌক্তিক মনে করে না সংস্থাটি। অবশ্য এ ধরনের করদাতার কাছ থেকে খুব সামান্যই রাজস্ব আদায় হয়ে থাকে। জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে করমুক্ত সীমা ২ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়। এরপর জীবনযাত্রার খরচ বাড়তে থাকলেও গত চার অর্থবছর করমুক্ত সীমা একই ছিল। অথচ মূল্যস্ফীতির হার ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৬.৪১ শতাংশ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫.৯২ শতাংশ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫.৪৪ শতাংশ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫.৭৮ শতাংশ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ৬ শতাংশ বাড়ে। আর সর্বশেষ চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের কাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা ৫০ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করা হয়। সে সময় বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল করমুক্ত সীমা বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা নির্ধারণের কথা জানিয়ে বলেন, ‘এ বছর বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে করদাতারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব বিষয় বিবেচনায় করমুক্ত আয়সীমা কিছুটা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে করদাতারা নিয়মিতভাবে কর পরিশোধে উৎসাহিত হবেন বলে আশা করছি।’ বাজেটের হিসাব অনুযায়ী, করদাতাদের আয় ৩ লাখ পর্যন্ত করমুক্ত। এই সীমার বাইরে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত কর দিতে হবে ৫ শতাংশ হারে, ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ, ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত ১৫ শতাংশ ও ৫ লাখ পর্যন্ত ২০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। অবশিষ্ট মোট আয়ের ওপর কর দিতে হবে ২৫ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনেক বলেন, করোনার মহামারীর কারণে মানুষের আয় কমেছে। ফলে সরকারের রাজস্ব আদায়ও কমেছে। কর প্রদানে সক্ষম মানুষদের করের আওতায় আনতে সরকার অনেক দিন ধরে উদ্যোগের কথা বলে এলেও এ বিষয়ে কার্যকর তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। তবে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা কিছুটা হলেও বাড়ানো উচিত বলে তিনি মনে করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর