বুধবার, ২৬ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

স্থগিতাদেশ নিয়ে ক্লাসে আবরার হত্যাকাণ্ডে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী

সহপাঠীদের ক্লাস বর্জনের ঘোষণা

নাসিমুল হুদা, ঢাবি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি সে সময় ২৬ জনকে স্থায়ী বহিষ্কারসহ আরও ছয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি প্রদান করেছিল। তবে এর মধ্যে স্থায়ী বহিষ্কৃত কেমিকৌশল বিভাগের মো. আশিকুল ইসলাম সম্প্রতি আদালতের ‘স্ট্রে-অর্ডার’ বা ‘স্থগিতাদেশ’ নিয়ে অনলাইন ক্লাসে  যোগদান করেছেন বলে জানা গেছে। এমন ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে তার কোর্স রেজিস্ট্রেশন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। দাবি কার্যকর না হলে আগামী ৩০ মে থেকে ক্লাস বর্জনের ঘোষণাও দিয়েছেন তারা। বুয়েটের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ২২ মে কেমিকৌশল-’১৭ এর একটি কোর্সে অনলাইনে ক্লাস করতে দেখা যায় আশিকুলকে। পরে তারা জানতে পারেন, আশিকুল বহিষ্কারের বিরুদ্ধে আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে লেভেল-৩, টার্ম ওয়ানের অন্তত চারটি কোর্সে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে বৈঠকের পর শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তার কোর্স রেজিস্ট্রেশন বাতিল এবং ‘এরকম অপরাধী’রা যাতে আর স্ট্রে-অর্ডার নিয়ে ফিরে আসতে না পারেন, সেই ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। এ বিষয়ে আশিকুল ইসলাম জানান, ‘আবরারের ঘটনার পর করা এফআইআরে থাকা ১৯ জন, পরে  বের হওয়া চার্জশিটের ২৫ জন আসামির কোথাও আমার নাম ছিল না। কিন্তু চার্জশিট বের হওয়ার পর বুয়েটের গঠিত তদন্ত কমিটি চার্জশিটের ২৫ জন ও আমাকেসহ মোট ২৬ জনকে বহিষ্কার করে। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, আমি তদন্ত কাজে অসহযোগিতা করেছি। অভিযোগটির বিষয়ে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি সে সময় সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য ডাকলেও আমি নানা কারণে ঢাকায় এসে সাক্ষাৎকার দিতে পারিনি। আশিকুল বলেন, চার্জশিটে নাম না থাকায় তিনি আদালতের স্ট্রে-অর্ডার পেয়েছেন। পরে যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে একটি ক্লাসেও যুক্ত হয়েছিলেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি আর ক্লাসে যোগ দিতে চান না বলেও জানান। এদিকে, আশিকুল ইসলামের সঙ্গে ক্লাস না করার ঘোষণা দিয়েছেন কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বিভাগের একজন শিক্ষার্থী জানান, আবরার হত্যার পর  সে সময় দ্রুত বহিষ্কারের দাবি জানালে প্রশাসন বলেছিল, তারা ভালো করে তদন্ত করে তারপর সিদ্ধান্ত নেবে, যাতে কেউ স্ট্রে-অর্ডার নিয়ে আসতে না পারেন। কিন্তু আশিকুল ঠিকই স্ট্রে-অর্ডার নিয়ে এসেনেছ। তারা আশিকুল ইসলামের সঙ্গে ক্লাস করতে চান না। তার কোর্স রেজিস্ট্রেশন বাতিল না হলে আগামী ৩০ মে থেকে একাডেমিক কার্যক্রম বয়কটের কথাও জানান ওই শিক্ষার্থী। এ বিষয়ে কেমিকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মোমিনুর রহমান বলেন, আদালতের স্ট্রে-অর্ডার দেখেই তাকে কোর্স রেজিস্ট্রেশনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বিভাগ থেকে তো আমরা কিছু করতে পারব না। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে রেজিস্ট্রার ও ছাত্র কল্যাণ পরিচালকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি। তবে, মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করেও ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমানের সাড়া পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে রেজিস্ট্রার ড. মো. ফোরকান উদ্দিন এই প্রতিবেদকের সঙ্গে ‘আনঅফিশিয়ালি’ কথা বলতে অস্বীকার করে ‘অফিশিয়ালি’ কথা বলতে বলেন। এরপর তিনি ফোন কেটে দেন। সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্যপ্রসাদ মজুমদারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ ও খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি উত্তর দেননি।

সর্বশেষ খবর