বৃহস্পতিবার, ২৭ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে বাড়তি সতর্কতা

করোনায় ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ১৪৯৭, মৃত্যু ১৭

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে বাড়তি সতর্কতা

বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের সংকটে নতুন সমস্যা হিসেবে মাথাচাড়া দিয়েছে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’। ভারতের পরে এবার দেশেও এর সংক্রমণ শুরু হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। প্রাথমিক রিপোর্টে দুজন রোগীর শরীরে মিলেছে এ জীবাণু। এ ছাড়া আরও এক রোগীর মৃত্যুর কারণ হিসেবে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে সন্দেহ করা হচ্ছে।

অণুজীববিজ্ঞানী ও জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, মিউকোরমাইকোসিস নতুন কোনো ছত্রাক নয়। এই ছত্রাক পরিবেশেই আছে। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন ব্যক্তিদের এই ছত্রাকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁঁকি বেশি। যাদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকে, তাদের ঝুঁঁকি বেশি। আবার স্টেরয়েড গ্রহণ করা কোনো কোনো ব্যক্তিও এতে আক্রান্ত হতে পারেন। মিউকোরমাইকোসিস ছোঁয়াচে নয়। শরীরের যে কোনো স্থানে এর সংক্রমণ হতে পারে। নাকের আশপাশে ও চোখে সংক্রমণ বেশি হয়। চোখে সংক্রমণ হলে তা দ্রুত মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আক্রান্ত এলাকায় রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, ওই এলাকা কালো হয়ে যায়। তাই একে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ বলা হয়। ভারতে মিউকোরমাইকোসিস বা ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। দেশটিতে এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৮০০ জন এই ফাঙ্গাসে সংক্রমিত হয়েছে। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা কালো ছত্রাকে সংক্রমিত প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ মারা যাচ্ছে। আর যারা বেঁচে যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে একটি অংশের চোখ অপসারণ করতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, যারা করোনায় সংক্রমিত হন, তাদের সুস্থ করতে স্টেরয়েড চিকিৎসার সঙ্গে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণের যোগসূত্র রয়েছে। যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাদের এই ফাঙ্গাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। কভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠার ১২ থেকে ১৮ দিনের মধ্যে এর সংক্রমণ দেখা দেয়। রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত দুই রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে। হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানান, ৮ মে ৪৫ বছর বয়সী এক রোগীর শরীরে মিউকোরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর ২৩ মে ৬০ বছর বয়সী আরেকজনের শরীরেও ছাত্রাকজনিত রোগটি শনাক্ত হয়। তারা দুজনই করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছিলেন। সুস্থ হওয়ার পরে তারা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত হন। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ নিশ্চিত করতে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) একটি টিম ওই হাসপাতাল থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। এ ছাড়া চার দিন আগে ওই হাসপাতালে একজন রোগীর মৃত্যু হয়। ওই রোগী অন্যান্য রোগের পাশাপাশি মিউকোরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত ছিলেন বলে সন্দেহ করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গতকাল ভার্চুয়ালি স্বাস্থ্য বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র ও পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, মিউকোরমাইকোসিস নিয়ে দেশজুড়ে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। এটা পরিবেশে আগে থেকেই আছে। বিশেষ পরিস্থিতিতে এটা বেশি দেখা যেতে পারে। করোনা চিকিৎসার জন্য যাদের স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়েছে তাদের জন্য কিছুটা দুশ্চিন্তা থাকছে। তবে কোনোভাবেই এটা ছড়াতে দেওয়া হবে না। আমরা সতর্ক আছি, চেষ্টা করছি। হাসপাতালে দুজন রোগী মিউকোরমাইকোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ফলাফল এলে সবাইকে জানানো হবে।

২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ১৪৯৭, মৃত্যু ১৭ : করোনাভাইরাস সংক্রমণে এখন পর্যন্ত দেশে ১০ হাজার ১১০ জন পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৭ হাজার ৯৫ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। বাড়ির প্রবীণ ব্যক্তিটির মৃত্যুতে অনেক পরিবার হয়েছে অভিভাবকশূন্য। মৃতদের অনেকেই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এতে আর্থিকভাবে চরম বিপাকে পড়েছে ওই পরিবারগুলো; দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট, বন্ধ হয়ে গেছে শিশুর লেখাপড়া। আবার অনেক শিশু বাবা-মা হারিয়ে হয়েছে এতিম।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ জনই পঞ্চাশোর্ধ্ব। ১১ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। ১ জন ছিলেন চল্লিশোর্ধ্ব ও ১ জনের বয়স ছিল ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। গত এক দিনে ১৬ হাজার ৪৩৪টি নমুনা পরীক্ষায় আরও ১ হাজার ৪৯৭ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৯ দশমিক ১১ শতাংশ। এই সময়ে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৫৬ জন। গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৭ লাখ ৯৩ হাজার ৬৯৩ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১২ হাজার ৪৫৮ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৮৬৬ জন।

এদিকে গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমলেও মার্চ-এপ্রিলে আবারও বেড়ে যায়। দৈনিক মৃত্যু ১০০ ছাড়িয়ে যায় এপ্রিলের দ্বিতীয়ার্ধে। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমতে শুরু করলেও ঈদের পর এক দিন কমলে পরদিন আবার বেড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে সীমান্তের জেলাগুলোতে ভারতফেরত অনেকের দেহে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ায় আতঙ্ক বাড়ছে। অধিক সংক্রমণশীল এই ভ্যারিয়েন্টের তান্ডবে এখন বিপর্যস্ত ভারত। প্রতিদিন ৪ হাজারের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে দেশটিতে। নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে ২ লক্ষাধিক।

গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট ৯ হাজার ৫ জন পুরুষ ও ৩ হাজার ৪৫৩ জন নারী মারা গেছেন করোনা সংক্রমণে। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৭ জনের মধ্যে ১০ জন ছিলেন পুরুষ ও ৭ জন নারী। এর মধ্যে ৫ জন ঢাকায়, ৮ জন চট্টগ্রামে এবং ১ জন করে খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে মারা গেছেন। সবার মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে। সুস্থ ও মৃত বাদে দেশে বর্তমানে চিকিৎসাধীন কভিড রোগী আছে ৪৭ হাজার ৩৬৯ জন। এর মধ্যে ৪৪ হাজার ৯১৫ জন বাড়িতে ও ২ হাজার ৪৫৪ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কভিড রোগীদের জন্য বরাদ্দ ৯ হাজার ৮৭৩টি সাধারণ শয্যা ও ৮১৯টি আইসিইউ ফাঁকা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর