শুক্রবার, ২৮ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

খুনি ছিল প্রিয় বন্ধু

মির্জা মেহেদী তমাল

খুনি ছিল প্রিয় বন্ধু

ভাইকে বাঁচাতে চাইলে ৫০ লাখ টাকা পাঠাও। নইলে ভাইয়ের লাশ পাবা। ফোনে এমন একটা এসএমএস পেয়ে রবিউলের ভাই ঘাবড়ে যায়। দুই দিন ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ছোট ভাই রবিউলকে। তাকে না পেয়ে পুরো পরিবার যখন একদম দিশাহারা, ঠিক তখনই এমন একটি এসএমএসে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দেয়। কিন্তু অতগুলো টাকা তারা পাবে কোথায়? রবিউলের ভাই আর বাবা এমন সংবাদ শুনে হতবিহ্বল। তারা কী করবেন, কোথায় যাবেন বুঝতে পারছেন না। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। হঠাৎ তাদের মনে পড়ে রবিউলের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু মামুনের কথা। ওর ওখানে যায়নি তো? মাথায় এমন প্রশ্ন জেগে উঠতেই তারা ছুটে যান মামুনের বাসায়। রবিউলের কথা শুনেই তিনি আকাশ থেকে যেন পড়লেন। তিনিও বাসা থেকে বেরিয়ে যান। খুঁজতে থাকেন প্রিয় বন্ধু রবিউলকে। কিন্তু দিন যায়, সপ্তাহ যায় খোঁজ মেলে না রবিউলের। ঘটনাটি পাবনা জেলার। ঘটেছে সুজানগর উপজেলার উলট নামের গ্রামে। রবিউলের খোঁজ না পাওয়ায় পাবনার সুজানগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন রবিউলের ভাই। জিডি নম্বর-৯৩৬/২০১৭। তদন্তের দায়িত্ব পড়ে এসআই বেলালের ওপর। বিভিন্ন সূত্র ধরে তিনি এগোতে থাকেন। একপর্যায়ে রবিউলের জন্য পাগলের মতো আচরণ করতে থাকেন তার বাবা। হৃদয় নামের একজনকে আসামি করে অপহরণ মামলা করেন তিনি। মামলা নম্বর-১১। পুলিশ হৃদয়কে গ্রেফতার করে। তার স্বীকারোক্তিতে গ্রেফতার হন আরও পাঁচজন। তারা টাকা চাওয়ার কথা স্বীকার করলেও রবিউলের কোনো হদিসই দিতে পারে না। সব যেন গোলমেলে লাগছিল গোয়েন্দাদের কাছে। তদন্তের ভার পান ডিবির এসআই অসিত। অদম্য কৌতূহলী অসিত সব শুনে মনোযোগ দিলেন রবিউলের জীবনযাপনের ওপর। ঘটনা ঘাঁটাঘাঁটির একপর্যায়ে জানতে পারলেন, রবিউলের সঙ্গে সর্বশেষ যোগাযোগ হয়েছিল মামুনের। মামুন কোথায়? পুলিশ খোঁজে তাকে। ঘটনার ১০-১৫ দিন পরই ঢাকায় চলে গেছেন চাকরির খোঁজে। নানা প্রলোভনে ডেকে আনা হলো মামুনকে। কী নিষ্পাপ চেহারা! শ্মশ্রুমন্ডিত মুখ। ২০-২২ বছরের টকবগে এক যুবক মামুন। কোরআন হাদিসের জ্ঞান অগাধ। শুধু একটা বিষয় তার অজানা। আর তা হলো পুলিশি জেরা। রবিউল যেদিন নিখোঁজ হয়, সেদিন তার মোবাইলের শেষ কলে মামুনকে কী বলেছিল? আর তাকে পাঠানো এসএমএসটা কী ছিল? এই দুই প্রশ্নের জালেই ফেঁসে যান মামুন। তাকে বলতেই হয় সেই ভয়ংকর রাতের কথা। একটি মেয়েকে ভালোবাসত রবিউল। কিন্তু মামুনও তাকে ছাড়া বাঁচবে না। কিন্তু একজন মেয়ের জন্য তো একজন পুরুষ। দ্বিতীয়টি কেন থাকবে। বুঝিয়ে ওই পথ থেকে সরাতে পারেনি রবিউলকে। যে কারণে তাকে দুনিয়া থেকেই সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা আঁটেন। সেই রাতে রবিউলকে মামুন তার বাসায় ডেকে আনেন। এরপর পূর্বপরিকল্পিতভাবে কৌশলে রবিউলকে কড়া ঘুমের ওষুধ মেশানো পানি খাওয়ান তিনি। পরিকল্পনা মতো শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন রবিউলকে। এর পরের গল্প পৈশাচিক। লাশ নিজের ঘরেই মাটি খুঁড়ে দাফন করেন। বন্ধুর মাটিচাপা দেওয়া লাশের ওপর চৌকি বিছিয়ে সেখানেই থাকতে শুরু করেন মামুন। পরের দিন খুব স্বাভাবিকভাবে রবিউলের বাপ-ভাইদের সঙ্গে দেখা করেন। রবিউলকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। আবার ফাঁকে ফাঁকে পরিচয় গোপন করে মোবাইল ফোনে রবিউলের ভাইয়ের কাছে মুক্তিপণের টাকাও দাবি করেন হত্যাকারী মামুন। কিছুদিন পর মামুন চলে যান ঢাকায়। কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পায় না, কী হয়ে গেছে। কে জানত কোনো এক এসআই অসিত বা বেলালের মতো পুলিশ তার মেধা কাজে লাগিয়ে বের করে আনবেন ঘটনার ভিতরের ঘটনা। দীর্ঘ ৫৬ দিন পর লাশ উদ্ধার করা হয় মাটি খুঁড়ে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর