শুক্রবার, ২৮ মে, ২০২১ ০০:০০ টা
বর্বরতা

আমেনাকে খুন্তির ছ্যাঁকা, টেনে ছিঁড়ে ফেলা হতো চুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

ঢাকায় গৃহকর্মীর কাজ করতে যাওয়া ১১ বছরের শিশু আমেনা খাতুনের সারা শরীরে গৃহকর্ত্রী শ্যামলীর গরম খুন্তির ছ্যাঁকার কালশিটে দাগ পড়ে আছে। মুখ, মাথা, পিঠ সর্বত্র নির্যাতনের চিহ্ন। প্লাস দিয়ে টেনে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে চুল। তাকে ভর্তি করা হয়েছে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। যশোর সদর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের নূর ইসলাম ও আকলিমা খাতুনের মেয়ে আমেনা। দুই বছর বয়সেই বাবাকে হারায় সে। সাত বছর বয়সে মা আকলিমা খাতুন আবার বিয়ে করেন। এরপর নানি ভিক্ষা করে আমেনাকে লালন-পালন করতে থাকেন। আমেনার মা আকলিমা জানান, করোনার আগে তার ছোটবেলার বান্ধবী শ্যামলী বৈরাগী আমেনাকে তার সঙ্গে দেওয়ার জন্য বলেন। শ্যামলীর দুই শিশু সন্তান আছে। আমেনার থাকা-খাওয়া, মানুষ করার দায়িত্বও নেন তিনি। বান্ধবীর কথায় মেয়েকে তার হাতে তুলে দেন আকলিমা। হাসপাতালে ভর্তি আমেনা জানায়, শ্যামলী বৈরাগী তাকে ঢাকার মহাখালীতে সাততলা সরকারি কোয়ার্টারে নিয়ে যান। সেখানে দুই মাস পর থেকেই শুরু হয় নির্যাতন। বাড়ির কাজে সামান্য ত্রুটি হলেই বেধড়ক মারপিট করতেন শ্যামলী ও তার স্বামী বাদল। বাসাবাড়ির সব কাজই তাকে দিয়ে করানো হতো। সামান্য এদিক-ওদিক হলেই সারা গায়ে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিত। একবার হাত ভেঙে দিতে গিয়েছিল, কিন্তু মচকে যায়। প্লায়ার্স দিয়ে মাথার চুল টেনে টেনে তুলত শ্যামলী ও তার স্বামী। গলায় ও মাথায় আঘাতের চিহ্নও রয়েছে। রুটি বানানোর বেলুন দিয়ে একবার তার পায়ে এমনভাবে পেটানো হয়েছিল যে বেলুন ভেঙে যায়। আকলিমা খাতুন বলেন, ফোন করলেই শ্যামলী বলতেন আমেনা ভালো আছে। তারা নির্যাতনের বিষয়ে কিছুই জানতে পারেননি। আমেনার নানি জোহরা খাতুন বলেন, তিনি এক মাস আগে আমেনাকে দেখতে ঢাকায় যান। কিন্তু বাদল তাকে বাড়িতে নেননি।

তাকে বলা হয়, শ্যামলী আমেনাকে নিয়ে বরিশালে বেড়াতে গেছেন। যশোরে ফিরে তিনি শ্যামলীকে ফোন করে আমেনার জন্য কান্নাকাটি করেন। এক সপ্তাহ আগে শ্যামলী আমেনার মা আকলিমাকে ফোন করে আমেনাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। ২৩ মে তিনি ঢাকায় গিয়ে আমেনাকে নিয়ে আসেন। এরপর ২৫ মে তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ব্যাপারে জানতে বাদল শিকদার ও শ্যামলী বৈরাগীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. অজয় কুমার সরকার জানান, আমেনার শরীরে অসংখ্য পোড়া দাগ ও নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। অনেক ক্ষত শুকিয়ে গেছে। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি আমার থানা এলাকার মধ্যে নয়। ভিকটিমের পরিবারের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তাদের থানায় আসতে বলেছি। আমরা সংশ্লিষ্ট থানাকে বিষয়টি জানাব।

সর্বশেষ খবর