শনিবার, ২৯ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

সেবা ও পেশাদারিতে শীর্ষে বাংলার শান্তিরক্ষীরা

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস আজ

শিমুল মাহমুদ

সেবা ও পেশাদারিতে শীর্ষে বাংলার শান্তিরক্ষীরা

আজ ২৯ মে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস। বিশ্বশান্তি রক্ষায় ৭৩ বছর ধরে সেবা ও ত্যাগের অনন্য নিদর্শন হিসেবে জাতিসংঘের হয়ে কাজ করছে বিভিন্ন দেশের শান্তিরক্ষীরা। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ১৯৮৮ সাল থেকে ৩৩ বছর ধরে বিশ্বশান্তি রক্ষায় নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় নিজেদের অবদান রেখে চলেছে। বর্তমানে ৬ হাজার ৬০৮ জন শান্তিরক্ষীর অংশগ্রহণে বাংলাদেশ শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশের মর্যাদায় অবস্থান করছে। পেশাদারির সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে বিশ্বের দেশে দেশে জাতিগত সংঘাত, সন্ত্রাস, হানাহানি রোধে দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করছে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা। তাদের নিষ্ঠা ও একাগ্রতায় অনেক অশান্ত জনপদে শান্তি ফিরে এসেছে। এসব প্রেক্ষাপটে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় এ বছর দিবসটি উদ্যাপিত হবে। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সীমিত আয়োজনে বাংলাদেশসহ বিশ্বের শান্তিরক্ষীদের অসামান্য অবদানকে স্মরণ করা হবে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে। দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। এবার শান্তিরক্ষী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘স্থায়ী শান্তির পথে : শান্তি ও নিরাপত্তায় যুবকদের শক্তি বাড়ানো’। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ১৯৪৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৮৮ সালে ইরাকে সামরিক পর্যবেক্ষক পাঠিয়ে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যাত্রা করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেই শুরু শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে লাল-সবুজের বাংলাদেশের অংশগ্রহণ। আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় এরপর নিয়মিতই নতুন নতুন সাফল্যের পালক যুক্ত হয়েছে, যা বিশ্বে বাংলাদেশকে নতুন এক মর্যাদায় নিয়ে গেছে। নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দেয় ১৯৯৩ সালে। বাংলাদেশ পুলিশ নামিবিয়া মিশনের মধ্য দিয়ে ১৯৮৯ সালে শান্তিরক্ষা মিশনে যাত্রা করে। সংঘাতময় পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৮৯ জন শান্তিরক্ষী নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী জীবন দিয়েছেন ১৫৮ জন। ১৯৯৮ সালে শুরু হওয়া লেবানন শান্তিরক্ষা মিশনে সর্বোচ্চ ৩২১ জন শান্তিরক্ষী প্রাণ হারিয়েছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রাণহানি হয়েছে দারফুরে ২৯৪ জন। আইভরি কোস্টে শান্তি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে প্রাণ গেছে ২৫৯ শান্তিরক্ষীর। ৩৩ বছর ধরে বিশ্বের ৪০টি দেশের ৫৪টি মিশনে শান্তিরক্ষীরা দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে বিদ্যমান ১২টি শান্তিরক্ষা মিশনের মধ্যে আটটিতে ৬ হাজার ৬০৮ জন (৩১ মার্চ পর্যন্ত) বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী দায়িত্ব পালন করছেন। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন কার্যক্রমে অংশ নেওয়া ১১৯ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ এখন শীর্ষ অবস্থানে। এর আগেও বাংলাদেশ শান্তিরক্ষীর সংখ্যায় শীর্ষে অবস্থানে ছিল।

এদিকে বিশ্বশান্তি রক্ষায় জীবন উৎসর্গকারী আট বাংলাদেশিকে ‘দ্যাগ হ্যামারশোল্ড মেডেল’ দিয়েছে জাতিসংঘ; যা একক দেশ হিসেবে পাওয়া সর্বোচ্চ পুরস্কার। গতকাল জাতিসংঘের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ বছর বিশ্বের ৪৪টি দেশের ১২৯ জন শান্তিরক্ষীকে সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য এ পুরস্কার দিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ সদর দফতরে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ মেডেল দেওয়া হয়।

শান্তিরক্ষী দিবসের কর্মসূচি : আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) গতকাল এক বিজ্ঞপিতে জানায়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় আজ আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটি উদ্যাপনে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সকালে শান্তিরক্ষীদের স¥রণের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ‘শান্তিরক্ষী র‌্যালি-২০২১’ উদ্বোধন করবেন। পরে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শহীদ শান্তিরক্ষীদের নিকটাত্মীয় এবং আহত শান্তিরক্ষীদের জন্য সংবর্ধনা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ উপস্থাপনার আয়োজন করা হয়েছে। সেনাকুঞ্জে শহীদ শান্তিরক্ষীদের নিকটাত্মীয় এবং আহত শান্তিরক্ষীদের জন্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভিটিসির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালী উপস্থিত থাকবেন। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে। এ ছাড়া শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের কার্যক্রমের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি চ্যানেলে প্রচার হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর