শনিবার, ২৯ মে, ২০২১ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

চোখ ধাঁধানো প্যারা শুমচা

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

চোখ ধাঁধানো প্যারা শুমচা

প্যারা শুমচা লাল, নীল, সবুজ, খয়েরি নানান রঙে রঙিন একটি পাখি। যেন একই অঙ্গে অনেক রং। আর গায়ে হরেক রঙের সমারোহে এই পাখির আরেক নাম নওরং। আমাদের দেশে কেবল সুন্দরবনেই এদের দেখা মেলে।

তাই কারও কারও কাছে এই পাখি সুন্দরবনের শুমচা নামে পরিচিত। এর ইংরেজি নাম গধহমৎড়াব চরঃঃধ. আর বৈজ্ঞানিক নাম চরঃঃধ সবমধৎযুহপযধ. এরা পিটিডি পরিবারভুক্ত প্রজাতির পাখি। প্যারা শুমচা আমাদের দেশের আবাসিক বনচর পাখি। চিরসবুজ বনে এদের আবাস। দেখতে খুব সুন্দর। সুর সুমধুর। বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া পর্যন্ত এদের বৈশ্বিক বিস্তৃৃতি। গত ফেরুয়ারি মাসে সুন্দরবন থেকে চোখ ধাঁধানো এই পাখিটির ছবি তুলেছেন নেচার অ্যান্ড ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন কমিউনিটি ফটোগ্রাফার এহসান আলী বিশ্বাস। পাখি বিশারদরা জানান, পৃথিবীতে শুমচা পরিবারে ৩১ প্রজাতি রয়েছে। আমাদের দেশে রয়েছে পাঁচ প্রজাতি। তার মধ্য তিন প্রজাতি পরিযায়ী। তারা বর্ষায় এখানে এসে বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে। আবার শুকনো মৌসুমে বৃষ্টিপ্রবণ অঞ্চলে উড়ে যায়।  মাত্র দুই প্রজাতি এ দেশে স্থায়ী। এর একটি প্যারা শুমচা। আর অন্যটি নীল ঘাড় শুমচা। প্যারা শুমচা পাখি ১৮ থেকে ২১ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। স্ত্রী ও পুরুষ উভয়েরই চেহারা অভিন্ন। মাথা ধূসর বাদামি। পিঠ থেকে লেজের গোড়া পর্যন্ত জলপাই-সবুজ।

 ডানায় রয়েছে নীল ছোপ। দু-একটি পালকের ডগা আসমানি। দেহতল শিয়াল রঙের। চোখ কালো। শিং কালো মোটা ঠোঁট। গলার নিচ থেকে সাদা রেখা ঘাড়ের কালো রেখার নিচে পর্যন্ত গিয়ে মিশেছে। কালো রঙের খাটো লেজ।

 লেজের নিচে তলপেট টকটকে লাল। শরীরের তুলনায় লেজ ছোট। হঠাৎ দেখলে মনে হবে কেউ হয়তো লেজ কেটে দিয়েছে। এরা সাধারণত একাকী বিচরণ করে। কখনো জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। খুব চঞ্চল স্বভাবের। আকাশে উঠে বেড়ানোর চেয়ে লাফালাফি বেশি করে। খুব ভোরে এবং গোধূলিলগ্নে কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠে। রাতে খাবারের সন্ধানে বের হয়। অথচ তারা রাতে খুব বেশি চোখে দেখে না। তখন কাছাকাছি শত্রুর উপস্থিতি টের পেলে আন্দাজের বসে ডানা ঝাপটে স্থান ত্যাগ করে। এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস এদের প্রজনন সময়। এ সময় তারা  মাটিতে অথবা ফার্নে আবৃত গাছের কান্ডে চিকন লাঠি, শুকনো শেকড়, শুকনো ঘাস বা লতাপাতা দিয়ে গোলাকার বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে দুই থেকে তিনটি। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে সময় লাগে ১৪ থেকে ১৬ দিন। আর ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যেই বাচ্চারা উড়তে শেখে। এদের প্রধান খাবার কীটপতঙ্গ, কেঁচো। এরা লতা-গুল্মাদির ভিতর নরম মাটিতে ঠোঁট ঠুকরে খাবার খুঁজে নেয়। এ ছাড়া ঝরাপাতা উল্টিয়ে এরা পোকামাকড় খায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান বলেন, ‘প্যারা শুমচা আমাদের দেশের আবাসিক পাখি। সারা বছরই এরা সুন্দরবন ও তার আশপাশ এলাকায় থাকে। এ পাখির সবচেয়ে বড় অংশ এই সুন্দরবনেই রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, যত দিন আমাদের সুন্দরবন টিকে থাকবে তত দিন সুন্দরবনে প্যারা শুমচা পাখিরা টিকে থাকবে।’

সর্বশেষ খবর