মঙ্গলবার, ১ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনার প্রভাব আম বাজারে

পাইকার নেই হাটগুলোতে, গাছেই পাকছে আম

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

করোনার প্রভাব আম বাজারে

লকডাউনের মধ্যেই চলছে আম কেনাবেচা। করোনা ও লকডাউন প্রভাব ফেলেছে আম বাজারে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগে ব্যবসায়ীরা আসতেন আম কিনতে। এবারও ব্যবসায়ীরা না এসে নিজস্ব প্রতিনিধিদের দিয়ে আম কিনছেন। অনেকেই আম কেনাবেচায় অনলাইনের দ্বারস্থ হচ্ছেন। ফলে পাইকারের অভাব হাটে। অনেক বাগানে গাছেই পাকছে আম। করোনা ও লকডাউন আম বেচাকেনায় প্রভাব পড়ছে জানিয়ে রাজশাহীর বানেশ্বর হাটের কয়েকজন আম ব্যবসায়ী জানান, করোনা ও লকডাউন দুই মিলে ক্রেতার সংখ্যা অন্য বছরের তুলনায় অনেকটা কম। তবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলা ও বিভাগের ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি আছে। তারা আম কিনছেন, সেগুলো কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে। বানেশ্বর হাটের ইজারাদার ওসমান আলী জানান, করোনা ও লকডাউন প্রভাব ফেলেছে আমে। সেই কারণে বেপারী (ব্যবসায়ী) কম। তবে এখন প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ ট্রাক আম বানেশ্বর হাট থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগে যায়। এটি পর্যায়ক্রমে আরও বাড়বে। গতকাল দুপুরে পুঠিয়ার বানেশ্বর হাটে গোপালভোগ প্রকার ভেদে প্রতি মণ খুচরায় বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা দরে। একই আম পাইকারি প্রকার ভেদে বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা মণ দরে। এ ছাড়া ক্ষীরশাপাতি খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা দরে। পাইকারি ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা মণ দরে আম বিক্রি হয়েছে। রাজিবুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী জানান, তিনি ঢাকা থেকে আম কিনতে এসেছেন। তার ঢাকায় আমের আড়ত আছে। যদিও রাজশাহীতে তার ব্যবসায়িক প্রতিনিধি আছে। তিনি আম কিনে পাঠান। তবে সপ্তাহে একবার আসেন। তিনি জানান, আম বিক্রি খুব একটা ভালো না। এখন বেশির ভাগ মানুষ মোবাইল ফোন বা অনলাইনে অর্ডার করছেন। ফলে তাদের ব্যবসা কমেছে। তবে যে ক্রেতারা আম দেখে খেয়ে কিনবেন তারা দোকানেই আসেন। আর রাজশাহীর আম অনেক সুস্বাদু। তাই বিশ্বাস করে আমগুলো দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ কেনে। রাজশাহী চেম্বারের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি জানান, করোনা ও লকডাউনের ফলে প্রভাব পড়ছে আম কেনাবেচায়। রাজশাহী থেকে আম পাঠাতে না পারলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন চালু হয়েছে। তাতে অবশ্য ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে যাবে ব্যবসায়ীদের। কারণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাহিদা পেলে স্থানীয় চাষিরা ওই ট্রেনে পাঠিয়ে দিতে পারবেন। পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ ভূঁইয়া জানান, ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনের পাঁচটি ওয়াগনে (পণ্যবাহী বগি) পণ্য পরিবহন করা হবে। তিনি বলেন, প্রতিটি ওয়াগনে ৪০ টন করে মোট ২০০ টন আম পরিবহন করা যাবে। পরিবহনে প্রতি কেজিতে খরচ পড়বে মাত্র ১ টাকা ১৭ পয়সা। পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ বলেন, এ ট্রেনে মালামাল তোলার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ, আমনুরা, রহনপুর, কাঁকনহাট, রাজশাহী, হরিয়ান, সরদহ, আড়ানী, আবদুলপুর স্টেশনে থামবে। ফলে আম পরিবহন করতে সুবিধা পাবেন ব্যবসায়ী ও চাষিরা।

 

করোনা ছড়ায় না : আমের গত মৌসুমে করোনায় একরকম আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন বাইরের জেলার মানুষ। আমের ঝুড়ি বা কার্টনে করোনার সংক্রমণের আতঙ্ক ছিল। চিকিৎসকরা বলছেন, আম করোনা ছড়ায় না বা আমের ঝুড়ি, কার্টনে করোনা ছড়ানোর আশঙ্কা নেই। মানুষ বেশি চলাচল না করলেই এটি নিরাপদ। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমে করোনাভাইরাস ছড়ায় না। তবে হাটবাজারে আম কিনতে গেলে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই।’ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. চিন্ময় কান্তি দাস বলেন, ‘আমের মাধ্যমে করোনা ছড়িয়েছে, এমন বৈজ্ঞানিক তথ্য-প্রমাণ নেই। আম নিরাপদেই মানুষ গ্রহণ করতে পারে। যারা তার পরও আতঙ্কের মধ্যে আছেন, আম স্যানিটাইজ করে কিছুক্ষণ রেখে দিলে নিশ্চিতে সেটি খেতে পারেন। এ নিয়ে ভীত হওয়ার কারণ নেই।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর