মঙ্গলবার, ১ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা
মহাখালীর খণ্ডিত দেহের বাকি অংশ উদ্ধার

হত্যা করে লাশ টুকরা করান স্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর মহাখালী থেকে উদ্ধার হাত-পা কাটা মস্তকবিহীন লাশের পরিচয় মিলেছে। সেই সঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছে খন্ডিত হাত-পা ও মস্তক। আটক করা হয়েছে ঘাতক এক নারীকে। নিহত ব্যক্তির দুই স্ত্রী। তাদের মধ্যে প্রথম স্ত্রী শিল্পী স্বামী হত্যার পরিকল্পনাকারী ও খুনে জড়িত বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী নাসরিন বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছেন। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, নিহত ময়না মিয়া (৩৮) পেশায় সিএনজিচালক ছিলেন। স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পারায় স্ত্রী শিল্পীর পরিকল্পনায় এবং সহায়তায় নৃশংস এ হত্যাকান্ড ও লাশ গুমের ঘটনা ঘটে। খন্ডিত দেহ ফেলে যাওয়া স্থানের সিসি ক্যামেরা ফুটেজের সূত্র ধরে মিলেছে হত্যার ক্লু। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের চিহ্নিত করা গেলেও তাদের ধরতে অভিযান চলছে।

এর আগে রবিবার দিবাগত রাতে মহাখালীর আমতলী সড়ক থেকে ময়না মিয়ার মাথা, হাত, পা ছাড়া গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে বনানী থানা পুলিশ। পরে একই দিন রাতে মহাখালীর আমতলী এলাকা থেকে কাটা দুই হাত ও পা উদ্ধার করা হয়। সর্বশেষ গতকাল বিকালে মহাখালীর ওয়্যারলেস এলাকার টিঅ্যান্ডটি মাঠ সংলগ্ন ঝিল থেকে ময়না মিয়ার খন্ডিত মরদেহের মস্তক উদ্ধার করে পুলিশ। ছয়টি অংশে ভাগ ছিল ময়না মিয়ার পুরো শরীর। জানা গেছে, বৃষ্টির মধ্যে একটি অটোরিকশা থেকে একটি ড্রাম সেখানে ফেলে যায় দুই দুষ্কৃতকারী। ভিতরে খন্ডিত দেহটি বিছানার চাদর দিয়ে মোড়ানো ছিল। সূত্র জানায়, ময়না মিয়ার গ্রামের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ এলাকায়। দুটি বিয়ে করেছেন তিনি। প্রথম স্ত্রী ঘাতক শিল্পীকে নিয়ে বনানীর কড়াইল বস্তির একটি কক্ষে ভাড়া থাকতেন তিনি। আর দ্বিতীয় স্ত্রী নাসরিন কিশোরগঞ্জে বাবার বাড়িতে থাকেন। ময়না মিয়া মাঝেমধ্যেই তার প্রথম স্ত্রী শিল্পীকে অত্যাচার করতেন। বিষয়টি নিয়ে শিল্পীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কিছুতেই অত্যাচার না কমায় স্বামীকে হত্যার পর টুকরো টুকরো করে লাশ গুমের পরিকল্পনা করেন শিল্পী। সে মোতাবেক লাশ টুকরো টুকরো করে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে আসা হয়। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আযম মিয়া বলেন, রবিবার রাত ৯টার দিকে মহাখালী কাঁচাবাজারের কাছে মসজিদ গলিতে একটি ড্রাম পড়ে আছে এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে ড্রামটি থেকে দুই হাত, পা ও মাথাবিহীন্ন একটি লাশ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে ওই রাতেই মহাখালী বাসস্ট্যান্ডের এনা কাউন্টার সংলগ্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় নিহতের চার হাত-পা। কিন্তু ভোররাত পর্যন্ত সন্ধান করেও মাথার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। সন্দেহভাজন এক আসামিকে আটকের পর গতকাল বিকালে মস্তকেরও সন্ধান পাওয়া যায়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. আশিক হাসান বলেন, ‘লাশের আঙুলের ছাপ নিয়ে তার সঙ্গে জাতীয় পরিচপত্রের তথ্যভান্ডারের আঙুলের ছাপ মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে নিহতের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। আমরা ধারণা করছি, বিচ্ছিন্নভাবে উদ্ধার হওয়া হাত, পা ও মস্তক ওই দেহেরই অংশ। তবে ডিএনএ পরীক্ষা করলে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে। পারিবারিক বিরোধের জেরে এই হত্যাকান্ড ঘটেছে কি না তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে। তবে আঙুলের ছাপ মিলিয়ে যে ময়না মিয়ার তথ্য পাওয়া গেছে, তার দুই স্ত্রী বলে জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর