বুধবার, ২ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

সিলেটি লাল চোখ ব্যাঙ

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

সিলেটি লাল চোখ ব্যাঙ

‘সিলেটি লাল চোখ ব্যাঙ’ বিশ্বের ব্যাঙ পরিবারের এক নতুন সদস্য। আর এই নতুন ব্যাঙ পাওয়া গেছে বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে। বন্যপ্রাণী গবেষক মার্জান মারিয়া ও হাসান আল-রাজী ব্যাঙ নিয়ে গবেষণা করতে এসে লাউয়াছড়ায় এই নতুন প্রজাতির ব্যাঙের সন্ধান পান। তাদের এই গবেষণার কাজটি রাশিয়া থেকে সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান ও সার্বিক সহযোগিতা করেছেন প্রফেসর Nick Poyarkov। গবেষণা পত্রটি গত ২৮ মে Journal of Natural History-তে প্রকাশ হয়। এতে দেখা যায়, নতুন এই ব্যাঙের বাংলা নাম দেওয়া হয়েছে ‘সিলেটি লাল চোখ ব্যাঙ’। ইংরেজি নাম Sylheti Litter Frog. শরীরের রং ধূসর থেকে কালচে, শরীরে কালো ছোপ রয়েছে। এই রং তাদের ঝরা পাতার সঙ্গে মিশে থাকতে সাহায্য করে। এদের পিছনের পা তুলনামূলকভাবে ছোট তাই খুব বেশি জোরে লাফাতে পারে না। এদের চোখের ওপর অর্ধেক লাল রঙের যেখানে আলো পড়লে উজ্জ্বল প্রতিফলন তৈরি হয়। গবেষক দল জানায়, বাংলাদেশে মোট ৫৬ প্রজাতির ব্যাঙ রয়েছে। নতুন প্রজাতি যোগ হয়ে এখন এর সংখ্যা হলো ৫৭টি। একই সঙ্গে বিশ্বে ব্যাঙ তালিকায়ও নতুন আরেকটি ব্যাঙ যুক্ত হয়েছে। আগে নতুন এই ব্যাঙটিকে Leptobrachium smithi বলে মনে করা হতো। কিন্তু Leptobrachium smithi বিস্তৃতি বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে এবং এই বিস্তৃতির মধ্যে আরও দুটি এই গণের ব্যাঙ রয়েছে। তাই তাদের মনে হয়েছে আমাদের দেশে Leptobrachium  গণের যে প্রজাতিটি রয়েছে সেটা আসলেই Leptobrachium Smithi নয়। তাদের এই চিন্তার সঙ্গে রাসিয়ান প্রফেসর Nick Poyarkov যুক্ত হয়ে এই একই মতামত ব্যক্ত করেন। পরে তারা তিনজন মিলে গবেষণা পরিকল্পনা করে গত বছর জুনে কাজ শুরু করেন। মাঠপর্যায়ে ও ল্যাবরেটরিতে ১১ মাস কাজ করে তারা জানতে পরেন এটি একটি নতুন ব্যাঙ।

গবেষক দলের সদস্য হাসান আল-রাজী ও মার্জান মারিয়া জানান, এই ব্যাঙগুলো মূলত বনের ভিতরে পাওয়া যায়। বনের ঝরা পাতার মধ্যে ওরা থাকে। ঝরা পাতার মাঝে এরা এমন ভাবে মিশে থাকে যে দেখলে বোঝার উপায় নেই যে এখানে কোনো ব্যাঙ আছে। আর ঝরা পাতায় থাকে বলে এই ব্যাঙকে ইংরেজিতে  Litter Frog বলে। তাই আমরা আমাদের এই ব্যাঙের ইংরেজি নাম দিয়েছি Sylheti Litter Frog আর বাংলা নাম সিলেটি লাল চোখ ব্যাঙ। প্রজননের সময় এরা এই ঝরা পাতা ছেড়ে ছড়ায় নেমে আসে। ছড়ার প্রবাহমান স্বচ্ছ পানিতে এরা ডিম দেয়। ডিম ফুটে ব্যাঙ্গাচিগুলো ছড়ার পানিতে বড় হয়। তারা আরও বলেন, দেশে এই নতুন ব্যাঙের সন্ধান বের করতে পেরে আমরা আনন্দিত, কিন্তু একই সঙ্গে শঙ্কিত।

কারণ জীববৈচিত্র্যে ভরপুর লাউয়াছড়া বন তার রূপ হারাচ্ছে। ব্যাঙ যেখানে প্রজনন করে বনের সেই ছড়াগুলো শুকিয়ে গেছে। সিলেটি লাল চোখ ব্যাঙসহ বনের অন্য প্রাণীদের বাঁচিয়ে রাখতে হলে আগে ছড়াগুলোকে বাঁচাতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর