শনিবার, ৫ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

ফের লাগাম ছাড়াচ্ছে সংক্রমণ

ঈদের পর সর্বোচ্চ শনাক্ত, ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ১৮৮৭, মৃত্যু ৩৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফের লাগাম ছাড়াচ্ছে সংক্রমণ

নমুনা পরীক্ষায় করোনা রোগী শনাক্তের হার টানা পাঁচ দিন ধরে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮ হাজার ১৫১টি নমুনা পরীক্ষায় ১ হাজার ৮৮৭ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ, যা ঈদুল ফিতরের পর সর্বোচ্চ। গত ২৯ এপ্রিল থেকে গতকাল পর্যন্ত ৩৭ দিনে এর চেয়ে বেশি (১০ দশমিক ৮২ শতাংশ) শনাক্ত হারের তথ্য জানানো হয়েছিল শুধু ১৪ মে। এ ছাড়া সীমান্তবর্তী ও সংলগ্ন অনেক এলাকায় শনাক্তের হার সারা  দেশের গড় শনাক্ত হারের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত একদিনে করোনায় আরও ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে চারজন বেশি। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২ হাজার ৭৫৮ জন। গতকাল পর্যন্ত মোট রোগী শনাক্ত হয়েছে ৮ লাখ ৭ হাজার ৮৬৭ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৪৭ হাজার ৭৫৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৭২৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ৩৪ জনের মধ্যে ২০ জন ছিলেন পুরুষ ও ১৪ জন নারী। হাসপাতালে ৩১ জন ও বাড়িতে তিনজন মারা গেছেন। বয়স বিবেচনায় মৃতের মধ্যে ১৯ জন ছিলেন ষাটোর্ধ্ব, ছয়জন পঞ্চাশোর্ধ্ব, পাঁচজন চল্লিশোর্ধ্ব, দুইজন ত্রিশোর্ধ্ব, একজন বিশোর্ধ্ব ও একজনের বয়স ছিল শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে। এর মধ্যে নয়জন ঢাকা, ছয়জন চট্টগ্রাম, পাঁচজন করে রাজশাহী, খুলনা ও রংপুর, তিনজন সিলেট ও একজন বরিশাল বিভাগে মারা গেছেন। তবে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যমতে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু আবার বেড়ে গেছে। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় অনেক এলাকায় কঠোর বিধিনিষেধ বা বিশেষ লকডাউন জারি করা হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ১০ জন করোনায় ও ছয়জন করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, করোনার উপসর্গ নিয়ে এখন যারাই আসছেন, সবারই প্রায় অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছে। সারা দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের সংবাদকর্মীদের পাঠানো আরও তথ্য- খুলনা : খুলনা সদরে বর্তমানে করোনা সংক্রমণ হার শতকরা ৩৫, খালিশপুরে ২৫ এবং সোনাডাঙ্গায় ১৭ ভাগ। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে খুলনা নগরীর সদর, সোনাডাঙ্গা, খালিশপুর ও রূপসা উপজেলায় গতকাল ভোর থেকে এক সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় মুদি দোকান বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হলেও বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে ওইসব এলাকার সব দোকানপাট, মার্কেট ও শপিং মল। গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, ডাকবাংলা, মশিউর রহমান মার্কেট ও শপিং কমপ্লেক্সসহ অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। গল্লামারী ও নিউ মার্কেট কাঁচাবাজার খোলা থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মানা, সামাজিক দূরত্ব বা মাস্কের ব্যবহার চোখে পড়েনি। বিভিন্ন স্থানে চায়ের দোকানে সাধারণ মানুষকে জড়ো হয়ে আড্ডা দিতে দেখা গেছে। নোয়াখালী : গত এক সপ্তাহে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় নোয়াখালী পৌরসভাসহ সদর উপজেলার নোয়ান্নই, বিনোদপুর, কাদির হানিফ, নেয়াজপুর, অশ্বদিয়া ও নোয়াখালী ইউনিয়নে ৫ জুন ভোর ৬টা থেকে ১১ জুন বিকাল ৬টা পর্যন্ত বিশেষ লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক জানান, গত এক সপ্তাহে জেলায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫৮৯ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন চারজন। প্রতিদিন সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। রংপুর : বিভাগে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা সংক্রমণের হার। গতকাল বিভাগে গড় শনাক্তের হার ছিল ১৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন পাঁচজন। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও জেলায়। প্রতিদিনই সীমান্ত এলাকা থেকে লোকজন যাওয়া-আসা করায় সংক্রমণের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে সীমান্তবর্তী জেলাগুলো। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে করণীয় ঠিক করতে আজ শনিবার জরুরি বৈঠকে বসবে রংপুরের করোনা কমিটি। অপরদিকে বিভাগের ৬ জেলায় করোনা টিকা শেষ হয়ে গেছে। নওগাঁ : সংক্রমণ বাড়ায় নওগাঁ পৌরসভা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় চলছে বিশেষ লকডাউন। তবে মানুষ নানা অজুহাতে ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন। কাঁচাবাজারগুলোয় সকাল ৭টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে বেচাকেনার কথা থাকলেও মাস্ক পরা বা শারীরিক দূরত্ব মানছেন না অধিকাংশ মানুষ। ধামইরহাট উপজেলায় নতুন করে আরও এক ব্যক্তি করোনায় মারা গেছেন। নতুন করে আরও ২৪ ব্যক্তির শরীরে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। রাজশাহী : আগের সব রেকর্ড ভেঙে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে সর্বোচ্চ ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, মৃতের মধ্যে ১০ জন করোনা পজিটিভ ও ছয়জন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নয়জন, রাজশাহীর ছয়জন এবং নওগাঁর একজন। হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডগুলোতে ২২৫ জন রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। দিন দিন করোনা ইউনিটে রোগী বাড়ায় রামেক হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৩০ জন চিকিৎসকের চাহিদা দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরে চিঠি পাঠিয়েছে। এ ছাড়া বেড সংখ্যা ২৩০ থেকে বাড়িয়ে ২৬৪টি করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার শামীম ইয়াজদানী।

সর্বশেষ খবর