শনিবার, ৫ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

খুনি বলল তোমার দুঃখ শেষ

মির্জা মেহেদী তমাল

খুনি বলল তোমার দুঃখ শেষ

ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (আইইউবি) বিবিএর তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শিহাবুর রহমান। ঢাকার আদাবরে তাদের বাসা। বাবা-মা এবং ছোট ভাই তাকে বাসায় রেখে গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে যান। তিন দিন পর ঢাকা থেকে খবর যায় তাদের কাছে। ফ্ল্যাট থেকে পচা গন্ধ বেরোচ্ছে। এমন খবরের পর তারা বাসায় ফেরেন। ফ্ল্যাটের সামনে পুলিশ। মানুষের ভিড়। তারা ফ্ল্যাটের ভিতরে গিয়ে দেখেন শিহাবের লাশ পড়ে আছে। পচে যাওয়ায় দুর্গন্ধ বেরোচ্ছিল। শিহাবের বাবা অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে আদাবর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তদন্ত শুরু করে। কিন্তু পুলিশ খুনের কোনো ক্লু না পেলেও পরিবারের সদস্যদের কিছু  বিষয়ে পুলিশের সন্দেহ তৈরি হয়। এ সন্দেহ থেকেই পুলিশ উঠে যায় রহস্য উদঘাটনের পথে। তদন্তে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। খুনি বাইরের কেউ নয়। ঘটনাটি ২০১৭ সালের।

পুলিশ জানায়, ১৪ জানুয়ারি শিহাবের লাশ উদ্ধারের পর মা শাহীন সুলতানাকে মামলা দায়ের করতে বলা হলেও তিনি গড়িমসি করেন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতেও তার মধ্যে তৎপরতা দেখা যায়নি। এমনকি অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়ার টাকাও তিনি দিতে চাননি। পরে শিহাবের বন্ধু-বান্ধবরা চাঁদা তুলে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া দেন।

১০ জানুয়ারি রাতে নিজ বাসায় শিহাব হত্যাকান্ডের শিকার হলেও বিষয়টি কাউকে জানানো হয়নি। বরং পরদিন শিহাবের লাশ তার রুমে তালাবন্ধ অবস্থায় রেখে বিকাল ৩টার দিকে সিফাত ও তার মায়ের পরিকল্পনায় বাসা ছাড়েন পরিবারের সব সদস্য। পরিবারের সদস্যরা ১৩ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে বাসায় ফিরলেও লাশ উদ্ধার করা হয় ১৪ জানুয়ারি দুপুরে। লাশ উদ্ধারের পর সিফাত পুলিশকে জানিয়েছিল তারা বাসায় ফিরেছে ১৪ জানুয়ারি। এসব কারণে শিহাবের পরিবারের সদস্যদের নিয়েই পুলিশ সন্দেহ করে। লাশ উদ্ধারের পরদিন পক্ষাঘাতগ্রস্ত বাবাকে দিয়ে মামলা করানো হয়। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হলেও শিহাবের বান্ধবী, শিহাবের মা শাহীন সুলতানা, ভাই সিফাত এবং কয়েকজন বন্ধুকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সিফাত তার ভাইকে হত্যার কথা শিকার করে। সে জানায়, তার বড় ভাই শিহাব মাদকের টাকার জন্য মা-বাবাকে মারধর করত। তার জন্য পরিবারে সবসময় অশান্তি লেগেই থাকত। শিহাবকে ক্রসফায়ারে দিতে তার মা একবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। সিফাত আরও জানায়, শিহাবের কারণে তার বাবা পঙ্গু। শিহাব সংসারের অনেক টাকা-পয়সা নষ্ট করেছে। তাকে একটি মোটরসাইকেল কিনে দেওয়া হয়েছিল। সেটিও বিক্রি করেছে মাদক আর নারীর জন্য। ঘটনার কয়েক দিন আগেও তাকে মা প্রায় ১০ হাজার টাকা দেন। আরও টাকার জন্য সম্প্রতি তার মাকে মারধর করে শিহাব। প্রতিবন্ধী বোন টিউশনির মাধ্যমে যে টাকা রোজগার করত, সে টাকা জোর করে নিয়ে নিত শিহাব। আর ওই টাকাও উড়াত মাদক আর নারীর পেছনে। এসব কারণে সিফাত তার ভাইকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সে পুরান ঢাকা থেকে একটি ছুরি কিনে আনে। এরপর ঘুমন্ত অবস্থায় ছুরিকাঘাত করে ভাইকে হত্যা করে সে। হত্যার পর ওই ছুরিটি সিফাত তার কলেজ ব্যাগে রেখে দেয়। গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সময় ছুরিটি সে সঙ্গে নেয়। পথে পদ্মা নদীতে ছুরিটি ফেলে দেওয়া হয়। এরপর সিফাত তার মাকে জানায়, তোমার সব দুঃখ শেষ। এখন থেকে সংসারে আর কোনো অশান্তি থাকবে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর