সোমবার, ৭ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

ডিজে পার্টি প্রেম খুন

মির্জা মেহেদী তমাল

ডিজে পার্টি প্রেম খুন

একটি মোবাইল ফোন সেট মেরামত করতে গিয়ে কণিকার সঙ্গে সৈকতের পরিচয়। আলাপচারিতায় সৈকত জানতে পারেন কণিকা ডিজে পার্টিতে নাচ করেন। সৈকতের ডিজে পার্টি নিয়ে প্রচ- আগ্রহ। তার আগ্রহের কথা জানায় কণিকাকে। কণিকা তাকে ডিজে পার্টিতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান। এর এক সপ্তাহ পর সৈকত ডিজে পার্টিতে যান। কণিকার সঙ্গে দেখা হয়। ঘনিষ্ঠতা বাড়ে তাদের মধ্যে। এরপর নিয়মিত যোগাযোগ। এর পর গভীর প্রেম। বছরখানেক প্রেম করার পর কণিকা জানতে পারেন সৈকত তার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। সৈকত নিজেকে অবিবাহিত বললেও সৈকত বিবাহিত। একদিন দুপুরে কণিকা সৈকতের বাড়িতে হাজির। সৈকতের বাবা শাহ আলমের পা ছুঁয়ে সালাম করেন। শাহ আলম একটি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ছেলেকে ২০১১ সালে বিয়ে দেন।

সৈকতের স্ত্রীর নাম নিতু। তাদের ঘরে একটি ছেলেসন্তান রয়েছে। এসব তথ্য জানার পর কণিকার মন ভেঙে যায়। সৈকতকে চাপ দিতে থাকেন কণিকা, স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে তাকে বিয়ে করতে হবে। ছেলের এমন খবর শুনে বাবা শাহ আলম চিন্তিত হয়ে পড়েন। ছেলেকে রক্ষা করার জন্য সৌদি আরব পাঠানোর ব্যবস্থা করতে থাকেন। পরে ৪ লাখ টাকা খরচ করে সৈকতকে সৌদি আরব পাঠানোর সব ব্যবস্থা সম্পন্ন করেন।

২০১৮ সালের এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে সৌদি আরব যাওয়ার কথা সৈকতের। সৈকতও মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেন। কিন্তু খবরটি কণিকা জেনে ফেলেন। তার প্রেমের পথের কাঁটা হিসেবে সৈকতের বাবা শাহ আলমকে মনে করেন। তিনি এ পথের কাঁটা সরানোর পরিকল্পনা আঁটেন। সে অনুযায়ী তার আরও তিন বন্ধুর সহযোগিতায় শাহ আলমকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়।

এরপর শাহ আলমের লাশ লাগেজে ভরে একটি সিএনজি অটোরিকশায় করে নিয়ে যান নিরাপদ কোনো স্থানে ফেলে দেওয়ার জন্য। সবুজবাগ থানার বনশ্রীর পেছনে পূর্ব মাদারটেক প্রজেক্টের রাস্তায় সিএনজি থামিয়ে লাগেজ রেখে পালিয়ে যান কণিকা। এর পরই সবুজবাগ থানা পুলিশ ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করে এ হত্যার কূলকিনারা বের করে। খিলগাঁও ঈদগাহ জামে মসজিদের সামনের একটি বাড়িতে শাহ আলম সপরিবারে ভাড়া থাকতেন। সৈকত খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের একটি দোকানে মোবাইল ফোন মেকানিক হিসেবে কাজ করেন। সবুজবাগ থানার ওসি আবদুল কুদ্দুস ফকির বলেন, ২০১৮ সালের এপ্রিলে পূর্ব মাদারটেক এলাকায় একটি অটোরিকশায় থাকা লাগেজ থেকে শাহ আলমের লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে নিহতের পরিচয় না পেয়ে পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। পরদিন স্বজনরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, শাহ আলমকে হত্যার আগে গোড়ানের ৩১ নম্বর টিনশেডের বাসায় ডেকে নেওয়া হয়। ওই টিনশেড বাসায় কণিকা তার দাদি ও তিন ভাইবোনের সঙ্গে থাকেন। ঘটনার দিন রাতে কণিকা তার দূর সম্পর্কের দুলাভাই মনির ওরফে আলমগীরসহ দুজনকে ডেকে নেন ওই বাড়িতে। তারা তিনজন মিলে শাহ আলমকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ লাগেজে ভরেন। এরপর সেই লাশ গুম করার জন্য কণিকা নিজেই একটি অটোরিকশা ঠিক করে রওনা হন। পথিমধ্যে লাগেজ রেখে পালিয়ে যান কণিকা। ডিবি কর্মকর্তারা আরও জানান, কণিকা লাশ ফেলে আসার পর বাসায় না ফিরে খিলগাঁওয়ের তার বান্ধবী মিথির বাসায় যান। ওই রাত মিথিদের বাসায় থাকার পর ভোরে সেখান থেকে বের হন। কাউকে কিছু না বলেই চলে যান যশোরের বেনাপোলে। বেনাপোলে পৌঁছেই নতুন একটি মোবাইল ফোন নম্বর থেকে বান্ধবী মিথিকে ফোন করেন কণিকা। পরে পুলিশ সন্দেহবশত মিথিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার মোবাইল ফোনের কললিস্টের সূত্র ধরে বেনাপোল থেকে কণিকাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর পরই কণিকার বোন হীরা, ভাই অনীক ও তার ফুফু কুলসুমকে গোড়ানের বাসা থেকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় শাহ আলমের ছেলে সৈকতকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সবুজবাগ থানা পুলিশ জানায়, কণিকা খিলগাঁও মডেল কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী। ঘটনাচক্রে কণিকার সহপাঠী হলেন সৈকতের ছোট বোন নাসরিন জাহান মলি। বিভিন্ন ডিজে পার্টিতে নাচ করে বেড়াতেন কণিকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর