সোমবার, ৭ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

হেফাজতে ইসলামের কমিটিতে পাল্টাপাল্টি

ভারসাম্য ও সংস্কার থিওরি, বাবুনগরীর কমিটিতে শফীপুত্র শফীপন্থিদের সংস্কার কমিটিতে ৫০ বাবুনগরীর অনুসারী

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

‘ভারসাম্য’ ও ‘সংস্কার’ থিওরি প্রয়োগ করে নতুন কমিটি ঘোষণা করতে যাচ্ছে হেফাজতে ইসলামের দুই গ্রুপ। আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর ভারসাম্যের কমিটিতে রাখা হচ্ছে প্রয়াত আমির আল্লামা শফীপুত্র মাওলানা ইউসুফ মাদানীসহ কয়েকজন নেতাকে। আবার শফীপন্থিদের ‘সংস্কার’ কমিটিতে রাখা হচ্ছে বাবুনগরী অনুসারী হিসেবে পরিচিত কমপক্ষে ৫০ নেতাকে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই কমিটি ঘোষণার লক্ষ্যে মাঠে নেমেছে সংগঠনের দুই গ্রুপ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হেফাজতে ইসলামের একাধিক নেতা বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের বিদ্যামান দুই গ্রুপই চাইছে দ্রুত কমিটি ঘোষণার। এরই মধ্যে বাবুনগরী ৩৮ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি চূড়ান্ত করেছেন। আল্লামা শফী অনুসারীরাও ৩১৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি সংস্কার করেছেন। যে কোনো সময় কমিটি ঘোষণা করতে পারে দুই গ্রুপ।’ অনুসন্ধানে জানা যায়, সাধারণ নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ ও মাঠ দখলে ভারসাম্যপূর্ণ কমিটি করতে চায় হেফাজতে ইসলামের দুই গ্রুপ।  আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর কমিটিতে রাখা হচ্ছে শফীপুত্র ইউসুফ মাদানীসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাকে। পক্ষান্তরে শফিপন্থীদের কমিটিতে রাখা হচ্ছে বাবুনগরী অনুসারী কমপক্ষে ৫০ নেতাকে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই কমিটি ঘোষণার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে দুই গ্রুপ। প্রয়াত আমির আল্লামা আহমদ শফীর অনুসারীরা নতুন করে কমিটি ঘোষণা না করে পুরনো কমিটির কিছু রদবদল করছে। তাদের দাবি, মৃত্যুর আগে ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট আল্লামা আহমদ শফী হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি অনুমোদন দিয়ে যান। ওই কমিটি থেকে বিতর্কিত এবং আল্লামা আহমদ শফীর হত্যার অভিযুক্তদের বাদ দিয়ে কমিটি সংস্কার করা হবে। পুনর্বিন্যাস কমিটি থেকে বাদ পড়ছেন আল্লামা শফী হত্যা মামলার অভিযুক্ত আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, প্রভাবশালী নেতা মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, জাকারিয়া নোমান ফয়জীসহ বিতর্কিত কিছু নেতা। তবে ওই কমিটিতে রাখা হচ্ছে বাবুনগরী অনুসারী হিসেবে পরিচিত কমপক্ষে ৫০ জন। আল্লামা আহমদ শফীর হত্যায় অভিযুক্ত জুনায়েদ বাবুনগরীর মহাসচিব পদ খালি হচ্ছে। তাই আমির ও মহাসচিব পদে নতুন করে দুজনকে আনা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমির পদে আলোচনায় রয়েছেন বেফাক চেয়ারম্যান আল্লামা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা আবদুল কুদ্দুস এবং মাওলানা আবদুল হামিদ মধুপুরী। মহাসচিব হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন মুফতি মোহাম্মদ ফয়জুল্লামা, মাওলানা মোহাম্মদ সলিম এবং মাওলানা সাজেদুর রহমান। আগামী ১০ জুন ঢাকায় আল্লামা আহমদ শফীর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা করে সংস্কার কমিটি ঘোষণার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। নানা সংকটের মধ্যে থাকা আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ৩৮ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি চূড়ান্ত করেছেন। তাতে আমির হিসেবে জুনায়েদ বাবুনগরী এবং মহাসচিব হিসেবে রয়েছেন মাওলানা নুর ইসলাম জিহাদী। ওই কমিটির সহকারী মহাসচিব হিসেবে রাখা হচ্ছে আল্লামা আহমদ শফীপুত্র মাওলানা ইউসুফ মাদানীকে। নায়েবে আমির হিসেবে রাখা হচ্ছে শফীপন্থী হিসেবে পরিচিত আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, মাওলানা তাজুল ইসলামকে। যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে রাখা হয়েছে সাজেদুর রহমানসহ বেশ কয়েকজনকে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে তারাও কমিটি ঘোষণার চিন্তা করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হেফাজতে ইসলামের একাধিক নেতা বলেন, জুনায়েদ বাবুনগরী রাজনৈতিকমুক্ত হেফাজতে ইসলাম গড়ার ঘোষণা দিলেও ৩৮ সদস্যের কমিটিতে কমপক্ষে ১০ জন রাজনৈতিক দলের নেতা রয়েছেন। ওই কমিটিতে স্থান দেওয়া হচ্ছে হুজি ও আল্লামা আহমদ শফী হত্যার অভিযুক্তদেরও।

সর্বশেষ খবর