সোমবার, ৭ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

নিরপরাধ ব্যক্তির জেল দুর্ভাগ্যজনক : হাই কোর্ট

ভুয়া মামলায় জেল, সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

মূল আসামির পরিবর্তে অর্থের বিনিময়ে বা যে কোনো কৌশলে নিরপরাধ ব্যক্তিকে জেলে রাখার ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেছে হাই কোর্ট। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ গতকাল এ মন্তব্য করে। চট্টগ্রামের একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড পাওয়া আসামি কুলসুম আক্তারের পরিবর্তে নিরপরাধ মিনু আক্তারের জেল খাটার বিষয়ে শুনানির সময় আদালত       এমন মন্তব্য করে। আদালতে মিনুর পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ। শুনানিতে জেলে থাকা নিরপরাধ মিনুর পুরো ঘটনা তুলে ধরে শিশির মনির জানান, গত দুই বছরে দেশে এমন ২৬টি ঘটনা ঘটেছে। একজনের নামে আরেকজন জেলে থেকেছেন। তিনি বলেন, আসল আসামি শনাক্তে অনেক পদ্ধতি আছে। আইবলিং পদ্ধতি আছে; এতে শনাক্ত করলে কোনো ভুল হবে না। মিনুর ঘটনার পেছনে একটি চক্র কাজ করছে জানিয়ে বিষয়টি তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনা দাবি করেন তিনি। শুনানিতে আইনজীবী শিশিরের সঙ্গে একমত হন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ড. বশির উল্লাহও। তিনি বলেন, আমরাও চাই দোষীদের শাস্তি হোক, নিরপরাধ কেউ যাতে জেলে না থাকে। ওই সময় বিচারপতি বলেন, আমরা মনে করি, এভাবে যদি রিয়েল (আসল) কালপ্রিট (দোষী) অর্থের বিনিময়ে হোক অথবা বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে নিজেকে বাঁচিয়ে অন্য নিরপরাধ লোককে জেলে আটক রাখে, সেটা দুর্ভাগ্যজনক। পরে আদালত আজ সোমবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করে। হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন দন্ড পাওয়া আসামির বদলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে দুই বছর ৯ মাস ধরে জেল খাটছেন মিনু। কারাগারে বালাম বই খুঁজতে গিয়ে বিষয়টি উঠে আসে। এরপর গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে আদালতের নজরে আনেন চট্টগ্রামের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ। আদালতে হাজির করা হলে মিনু নতুন করে জবানবন্দি দেন। সেই সঙ্গে মামলার নথি হাই কোর্টে পাঠানোর নির্দেশ দেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঞা। এক দিন পরই ২৪ মার্চ নথি হাই কোর্টে আসে। পরে বিষয়টি হাই কোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী শিশির মনির।

ভুয়া মামলায় জেল, সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ : ঝালকাঠির এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভুয়া মামলা করে জেল খাটানোর বিষয়ে জড়িতদের খুঁজে বের করে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। এই মামলায় পরবর্তী আদেশের জন্য ৮ আগস্ট দিন নির্ধারণ করেছে আদালত। গতকাল ওই মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী এবং বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেয়। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। মনজিল মোরসেদ জানান, ঢাকা মহানগর হাকিমের আদালতে ঝালকাঠি থানার রাজাপুরের রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে জাকির হোসেন নামক একজন ভুয়া বাদী সাজিয়ে ধানমন্ডির ঠিকানা দিয়ে দন্ডবিধির ৪২০/৪০৬/৫০৬ ধারায় পিটিশন মামলা দায়ের করে। পরে এই মামলায় গ্রেফতার করে হাজতে পাঠানো হয়। ৮ দিন জেল খাটার পর জামিনে বের হয়ে তিনি খোঁজ নিয়ে ঠিকানা ও ব্যক্তির কোনো অস্তিত্ব পাননি। একই সঙ্গে জানতে পারেন ব্যবসায়িক শত্রুতা বশত কয়েকজন এই সাজানো মামলাটি করেছেন। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে প্রতিকার চেয়ে আদালতে দরখাস্ত দাখিল করে তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করা হলে শুধু বাদীর ঠিকানা যাচাইয়ের আদেশ দেওয়া হয় এবং রিপোর্টে ঠিকানার অস্তিত্ব নেই বলে পুলিশ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এ মামলার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে কোনো প্রতিকার না পেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করেন রফিকুল ইসলাম। সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত রুলসহ আদেশ দেন।

সর্বশেষ খবর